১৬ জুলাই ২০১৭, রবিবার, ৭:৪৭

গ্রামাঞ্চলে ভয়াবহ লোডশেডিং

ঢাকায় পল্লী বিদ্যুতের জিএম সম্মেলন

গ্রামে বিদ্যুতের লোডশেডিং ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গ্রাহকরাও অতিষ্ঠ। উৎপাদন অনেক বাড়লেও গ্রামে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়ানো যায়নি। ফলে ব্যাপকভাবে লোডশেডিং বেড়েছে। গতকাল শনিবার ঢাকায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) কার্যালয়ে জিএম সম্মেলনে লোডশেডিং নিয়ে এই বিব্রতকর পরিস্থিতি তুলে ধরেন গ্রাম ও মফস্বল শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপকরা (জিএম)। বর্তমানে সারাদেশে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি রয়েছে। প্রায় দুই কোটি গ্রাহককে এই সমিতির মাধ্যমে বিদ্যুৎসেবা দেওয়া হয়ে থাকে।

গ্রামে বিদ্যুৎ তেমন থাকে না- গ্রাহকদের এ অভিযোগ পুরনো। তবে সম্প্রতি বিষয়টি নিদারুণ রূপ নিয়েছে। গেল ঈদের সময়েও গ্রাম ও মফস্বল শহরগুলোতে ব্যাপক লোডশেডিং হয়েছে। সম্মেলনে তারা জানান, ঈদের দিনেও কয়েক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করতে হয়েছে। যেখানে গেল বছরগুলোতে ঈদের ছুটির কয়েকদিন বিদ্যুতের সেবা নিয়ে অভিযোগ থাকত না। কারণ ঈদের ছুটিতে শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকে। ফলে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে। এ জন্য বাসাবাড়িতে বিদ্যুতের সরবরাহে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু এবার ঈদের সময়েও ব্যাপক লোডশেডিং হয়েছে।

সমিতির প্রধান কর্মকর্তারা আরও জানান, উত্তর এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের

জেলাগুলোতে দিনে ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং করতে হয়। বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুর এবং চট্টগ্রামের বিতরণ অঞ্চলে বিদ্যুতের ঘাটতি বেশি। এ নিয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। বহু স্থানে অতিষ্ঠ গ্রাহকরা স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিস ভাংচুর করে। কর্মকর্তারা জানান, লোডশেডিংয়ের বাইরে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনাও ব্যাপক বেড়েছে। বিদ্যুৎ থাকলেও বহু স্থানে বিতরণ সিস্টেম ওভারলোডেড থাকার কারণে তা সরবরাহ করা যাচ্ছে না। সম্মেলনে এক উপস্থাপনায় জানানো হয়, বহু স্থানে ব্যাপকভাবে নতুন সংযোগ দেওয়ার কারণে ট্রান্সফরমার ওভারলোডেড হয়ে পড়েছে। ফলে বিতরণ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে ১৮টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে ফোর্সড লোডশেডিং করতে হয়। অর্থাৎ বিদ্যুৎ থাকলেও লাইনে তা সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

অনুষ্ঠানে নওগাঁ, ময়মনসিংহ, যশোর, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর ও রাউজান পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএমরা তাদের এলাকায় ব্যাপক লোডশেডিংয়ের চিত্র তুলে ধরেন।

নওগাঁর জিএম বলেন, ওই অঞ্চলে সন্ধ্যাকালীন সর্বোচ্চ চাহিদা ৩৭০ মেগাওয়াট। কিন্তু তিনি চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ পান না। গত ১৪ জুলাই তিনি লোড পেয়েছেন মাত্র ২৪০ মেগাওয়াট। ফলে এভাবে প্রায় প্রতিদিনই তাকে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তাকে প্রশ্ন করেন, আপনার সিস্টেমে লোড নেওয়ার সক্ষমতা আছে কি-না? জবাবে নওগাঁর জিএম বলেন, তার এলাকায় ৩৬৭ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোড নেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। তিনি বলেন, তারা বিদ্যুৎ চাইলে উৎপাদনের ঘাটতি রয়েছে বলে জানানো হয়।

ময়মনসিংহ অঞ্চলের একটি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক তার অঞ্চলের ওভারলোডেড সাবস্টেশনের কথা তুলে ধরে বলেন, ময়মনসিংহে পিজিসিবির সঞ্চালন লাইন ও ডজনখানেক সাবস্টেশন ওভারলোডেড। এগুলোর আপগ্রেডেশন করা না হলে লোডশেডিং ও বিভ্রাট সমস্যা দূর হবে না।

পিরোজপুর ও গোপালগঞ্জের জিএমরা লোডশেডিংয়ের কারণে তাদের অফিসে হামলার চিত্র তুলে ধরে বলেন, চাকরি করতে এসে জনগণের কাছে মার খেতে হচ্ছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভয়ে ভয়ে অফিস করছেন বলে তারা জানান।

জিএমদের ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তাদের ধারণার চেয়ে শহরে ২০ শতাংশ আর গ্রামে ১৫ শতাংশ অতিরিক্তি বিদ্যুতের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে উৎপাদন বাড়লেও কোথাও কোথাও ঘাটতি হচ্ছে। এ ছাড়া গ্যাসের ঘাটতির কারণে বর্তমান এক হজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। তাই লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

আরইবি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন স্বাগত বক্তব্যে বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করার ফলে তাদের ৮৮০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এই ঘাটতি মেটাতে গ্রাহকের জামানত, কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিল ভেঙে বেতন-ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। আরইবি চেয়ারম্যান তার উপস্থাপনায় বলেন, ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে এক কোটি ৯২ লাখ গ্রাহককে সেবা দেওয়া হচ্ছে। তাদের বিতরণ এলাকার ৭২ শতাংশ জনগণ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করছে। ৫০টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় এসেছে বলে তিনি জানান।

জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আরইবি গঠন করাই হয়েছে জনগণকে সেবা প্রদানের জন্য। মুনাফা করতে হবে এ কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেন। আপনারা প্রজেক্ট নিয়ে আসেন সরকার অর্থ সহায়তা করবে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার বিদ্যুৎ খাতে এখন ভর্তুকি দিচ্ছে। যখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবো, যখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আরও বাড়বে, তখন তারা প্রতি ইউনিট দশ টাকা দিয়েও বিদ্যুৎ কিনতে পারবে; কিন্তু এখনই তা সম্ভব নয়।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ঘুষ-দুর্নীতি আগের তুলনায় কমেছে এ কথা ঠিক, তবে সেবার মান পুরোপুরি উন্নত হয়নি। বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে লোক মারা যাচ্ছে- আমরা এর দায় এড়াতে পারি না। এখানে সেবায় অনেক ঘাটতি রয়েছে।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, কোথাও সমস্যা দেখা না দিলে বা গ্রাহকরা অভিযোগ না দেওয়া পর্যন্ত সমস্যার প্রতিকার হচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

 

http://bangla.samakal.net/2017/07/16/308561