২৫ জুলাই ২০১৭, মঙ্গলবার, ১১:১৯

বোর্ড পরীক্ষায় নৈরাজ্য

শিক্ষাব্যবস্থায় ঘন ঘন পরিবর্তন নয় * গিনিপিগ বানিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর গবেষণা নয় * গলদের কারণে তৈরি হচ্ছে না দক্ষ ও মেধাবী জনশক্তি * শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সিন্ডিকেট বাণিজ্য

বোর্ডের পরীক্ষা পদ্ধতিতে নৈরাজ্য চলছে। ঘন ঘন পরিবর্তন করা হচ্ছে শিক্ষা ও পরীক্ষা পদ্ধতি। দফায় দফায় পরিবর্তন করা হচ্ছে উত্তরপত্র মূল্যায়ন ব্যবস্থার। যখন যা ইচ্ছা কর্তৃপক্ষ তাই করছে। তারা নির্ধারিত নিয়মে যেতে পারছে না। শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ বানিয়ে তাদের ওপর গবেষণা চালানো হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে পরীক্ষার ফল এবং শিক্ষার মানের ওপর। শিক্ষাব্যবস্থায় এ গলদের কারণে দক্ষ ও মেধাবী জনশক্তি তৈরি হচ্ছে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা এগুলোকে শিক্ষা খাতের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এসব কারণে শিক্ষাদান, পরীক্ষা, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, শিক্ষা প্রশাসন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনাসহ শিক্ষা খাতে অরাজক অবস্থা বিরাজ করছে। তারা শিক্ষা ও পরীক্ষা পদ্ধতিতে ঘন ঘন পরিবর্তন না করার পরামর্শ দিয়েছেন।


শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলেন, শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার উন্নয়নের নামে নানা ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে মন্ত্রণালয়। প্রকল্পগুলোর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হিসেবে শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে প্রকল্পের দুর্বল বাস্তবায়ন এবং অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে শুধু টাকারই শ্রাদ্ধ হচ্ছে, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। শিক্ষাব্যবস্থায় গলদের কারণে দক্ষ ও মেধাবী জনশক্তি তৈরি হচ্ছে না। ফি বছর এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বল দিকগুলো দারুণভাবে ফুটে ওঠে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। রোববার প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের পর খোদ শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য কেন্দ্র করে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন সংক্রান্ত বিতর্ক সামনে এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষার মূল সংকট কোথায়- দক্ষ ও মেধাবী জাতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে, না পাস-ফেল নির্ণয় কিংবা খাতা অতিমূল্যায়ন-অবমূল্যায়ন ইস্যুতে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব বিষয়ে যুগান্তরকে বলেন, ‘পরীক্ষায় মূল্যায়নের তৎপরতার চেয়ে শিক্ষার দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার। ক্লাসরুমে কী পড়ানো হচ্ছে, সেদিকে খেয়াল রাখা সবচেয়ে বেশি জরুরি। এদিকে খেয়াল না রেখে কেবল ফলাফল নিয়ে ভাবলে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভব হবে না।’ তিনি উত্তরপত্র মূল্যায়নে পদ্ধতিগত পরিবর্তনের সমালোচনা করে বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ কেন একেকবার একেক রকম পদ্ধতিতে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করছে? এগুলো খুবই নৈরাজ্যজনক। কর্তৃপক্ষ যখন যা ইচ্ছে তাই করছে। তারা নির্ধারিত নিয়মে যেতে পারছে না। অথচ ইংরেজি মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে একই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। কিন্তু বাংলা মাধ্যমে একেক সময় একেকভাবে হচ্ছে। এতে করে বাংলা মাধ্যমের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হবে। এসব বন্ধ করে সবকিছু একটি নিয়মের মধ্যে এনে সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।’

কয়েক বছর ধরে শিক্ষা ও পরীক্ষা পদ্ধতি এবং কারিকুলাম ও পাঠ্যবই ঘন ঘন পরিবর্তন করা হচ্ছে। শিক্ষা পদ্ধতিতে এযাবৎকালের সবচেয়ে ওলটপালট করা পরিবর্তনের নাম ‘সৃজনশীল শিক্ষা’। ২০০৬ সালে এই পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে। তখন অবশ্য অভিভাবকদের বাধার মুখে সরকার তা চালু করতে পারেনি। পরে ২০১০ সালে কেবল দুই বিষয়ের পরীক্ষা এই পদ্ধতিতে নেয়া হয়। ২০১২ সালে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে নতুন কারিকুলাম তৈরি করা হয়। এর আগে ১৯৯৬ সালে কারিকুলাম তৈরি করা হয়েছিল। নতুন কারিকুলামের আলোকে ২০১৩ সালে শিশুদের হাতে তুলে দেয়া হয় পাঠ্যবই। এরপর শুরু হয় তা পরিবর্তনের হিড়িক। ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬ এবং চলতি বছরও এসব বই পরিমার্জন-পরিবর্তন হয়েছে। আগামী বছরের বইও পরিবর্তনে দুটি কমিটি কাজ করছে। ২০০২, ২০০৭, ২০০৯ এবং ২০১০ সালেও পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন আনা হয়। পরীক্ষায় সবচেয়ে বড় মৌলিক পরিবর্তন আসে ১৯৯১ সালে। ওই বছর এসএসসিতে চালু করা হয় ৫০ নম্বরের এমসিকিউ। প্রথমে প্রতি বিষয়ে ৫০০টি প্রশ্ন নির্ধারণ করে দেয়া হয়। শিক্ষার্থীরা কেবল এগুলো পড়ে পাস করছে দেখে পরে প্রশ্নের সংখ্যা তুলে দেয়া হয় ১৯৯৬ সালে। প্রথমদিকে রচনামূলক ও এমসিকিউতে আলাদা পাসের ব্যবস্থা ছিল না। পরে আলাদা পাস করা হয়। ২০০৮ সালে সৃজনশীল চালুর পর এমসিকিউয়ের পূর্ণ নম্বর কমিয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়। পরে দুর্নীতির কারণে এ বছর থেকে ৩০ শতাংশ প্রশ্ন হচ্ছে এমসিকিউতে। গত দেড় দশকে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন পদ্ধতিও অন্তত তিনবার পরিবর্তন করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে গ্রেডিং পদ্ধতি, এসবিএ (স্কুলভিত্তিক মূল্যায়ন) ও ধারাবাহিক মূল্যায়ন। এর ধারাবাহিকতায় এ বছর এসএসসি-এইচএসসিতে নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। আরেক দফা মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তনে বর্তমানে গবেষণা চলছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ ও মেধাবী জনশক্তি তৈরি করার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের তেমন চিন্তা নেই। শিক্ষাব্যবস্থা ঘিরে সৃষ্ট দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেই। বরং গত কয়েক বছর ধরে নম্বর বাড়িয়ে দিয়ে গণহারে পাস করানোর জন্য তারা কাজ করেছেন। এ নিয়ে শিক্ষাবিদরা তখন প্রতিবাদ করেছেন। তারা শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু তখন এসব স্বীকার করা হয়নি। উল্টো বেশি পাস আর জিপিএ-৫ এর পক্ষে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষপর্যায় থেকে সাফাই গাওয়া হয়েছে। এ বছর পাসের হার কমে যাওয়ায় উত্তরপত্র অতিমূল্যায়ন বা অবমূল্যায়নের ইস্যু টেনে আনা হয়েছে। রোববার খোদ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ স্বীকার করলেন, আগে সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন হতো না। অতিমূল্যায়ন বা অবমূল্যায়নের শিকার হতো শিক্ষার্থীরা। এবার ঠিকমতো খাতা মূল্যায়িত হওয়ায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে।

কিন্তু শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, পাস-ফেল বা খাতা মূল্যায়ন বিষয়ে বাগাড়ম্বর নয়, আমাদের মূল সংকট হচ্ছে স্থায়ী শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে দক্ষ ও মেধাবী জাতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে। জাতীয়ভাবে আমরা এই সংকট আজও উত্তরণ ঘটাতে পারিনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সে ব্যবস্থা নিতে পারেনি। মেধাবী জাতি গঠনে দরকার শিক্ষা পদ্ধতির প্রয়োজনীয় পরিবর্তন। আমাদের ওই জায়গায় হাত দিতে হবে। সেভাবে গড়ে তুলতে হবে শিক্ষাব্যবস্থা। তারা আরও বলেন, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার মূল ভিত্তি উচ্চ মাধ্যমিক স্তর। কর্মক্ষেত্রের দক্ষতার ভিত্তি তৈরি হয় এ স্তর পর্যন্ত। কিন্তু শিক্ষার এ স্তর পর্যন্ত স্থায়ী ধারাবাহিক কোনো পদ্ধতি না থাকায় শক্ত ভিত্তি তৈরি হচ্ছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনোভাবে একটি সনদ নিয়ে শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতায় নামছে। এ শ্রমবাজারে ন্যূনতম একটি সনদ নিয়ে যাওয়ার জন্য পিইসি (প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী) ও জেএসসির (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষা চালু করা হয়েছে। আগে থেকে আছে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। কিন্তু শিক্ষার্থীরা স্তর অনুযায়ী দক্ষতা অর্জন করছে না, শিখছে না। শিক্ষা ও পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে দেশে স্থির কোনো নীতি নেই। এ নিয়ে কেবল পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত আছে। এতে শিক্ষার্থীরা গিনিপিগে পরিণত হচ্ছে।

শিক্ষাবিদদের এই বক্তব্যের সমর্থন মেলে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা পরিষদের (বিআইডিএস) গবেষণায়। রোববার প্রকাশিত যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে দক্ষ শ্রমশক্তির দারুণ অভাব আছে। ২৬৫ পৃষ্ঠার ওই গবেষণায় দেশের দশটি খাতে ২০২০ সাল নাগাদ ৭ কোটি ৩০ লাখ কর্মী দরকার হবে। এই চাহিদা পূরণে প্রতিবেদনে ছাত্রছাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত এবং প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেয়া হয়েছে।

বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা বর্তমানে পরীক্ষার্থী তৈরি করছি, শিক্ষার্থী নয়। শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, এক সময়ে খাতা অতি বা অবমূল্যায়িত হতো। কিন্তু যখন এ নিয়ে কথা উঠেছিল, তখন তিনি তা স্বীকার করেননি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে কত সুন্দরভাবে পরীক্ষা নেয়া গেল, মান কিভাবে বণ্টন করা গেল আর জিপিএ-৫ কত পারসেন্ট পেল। এক সময় এটাই বলা হতো। অথচ এখন বলা হচ্ছে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আগের পদ্ধতি ভুল ছিল। আমরা এখন সঠিক পদ্ধতি বের করেছি।’ অধ্যাপক ইসলাম আরও বলেন, ‘৩০ ভাগ শিক্ষার্থী যে ফেল করল- কেন ফেল করল, সে বিষয়ে দায়িত্বশীলরা কী নিজেকে কখনও জিজ্ঞেস করবেন?’ তিনি মনে করেন, ‘অবস্থাটা ক্রমাগত দিনে দিনে নিচের দিকে যাচ্ছে। আমরা শিক্ষা নিয়ে কখনই গভীরভাবে ভাবিনি। তিনি বলেন, শিক্ষায় মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে। একবার পরিবর্তন আনলে তা ৫-৭ বছর রাখতে হবে। প্রতি বছর পদ্ধতি পরিবর্তন করে শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ বানানো যাবে না।’

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষাব্যবস্থা এখন কোচিংনির্ভর হয়ে গেছে। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেই ক্লাসরুমে পাঠদান হয় না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানাভাবে দুর্নীতি হচ্ছে। অভিভাবকরা আমাদের অবহিত করছেন। শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে অভিভাবকদের অনেক অসন্তোষ আছে। সার্বিকভাবে শিক্ষাব্যবস্থায় অনাকাক্সিক্ষত ও অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি চালু হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে সম্পূর্ণ মেধাহীন সমাজ তৈরি হবে। অথচ প্রধানমন্ত্রী জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তৈরির স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা সেই সমাজ তৈরির উপযোগী নয়। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, কাল (রোববার) শিক্ষামন্ত্রী খাতা মূল্যায়নের ব্যাপারে যে বক্তব্য দিলেন তাতে তিনি নিজের অবস্থানই খাটো করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, এর আগে খাতা ঠিকমতো মূল্যায়ন হতো না। যে কারণে পাসের হার বা জিপিএ-৫ বেড়েছে। এবার খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়িত হওয়ায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে। এখন যদি আগের কোনো ছাত্র জবাব চায় যে, তাকে বেশি নম্বর দেয়া হল কেন? বা গতকাল পাস করা কোনো ছাত্র যদি জানতে চায় যে, আগে একজনকে বেশি নম্বর দিয়ে লাভবান করা হয়েছে। তাকে কম নম্বর দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। তাহলে এসব প্রশ্নের কী জবাব দেবেন শিক্ষামন্ত্রী? এই বক্তব্য দিয়ে তিনি নিজেই বিপরীতমুখী অবস্থান নিলেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আইন-কানুন, বিধি-নীতিমালা আছে। কিন্তু তার প্রয়োগ নেই। ধরুন, কোচিং বাণিজ্যের বিরুদ্ধে নীতিমালা আছে। কিন্তু তার প্রয়োগ নেই। আবার শিক্ষা প্রশাসনে দুর্নীতিবাজ হিসেবে কেউ চিহ্নিত হয়, সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী কমবেশি শাস্তি হলেও তাকে পদে বহাল তবিয়তে রাখার ঘটনা আছে। এতে দুর্নীতিবাজরা বরং উৎসাহিত হয়।

গণসাক্ষরতা অভিযানের (ক্যাম্পে) উপপরিচালক কেএম এনামুল হক এ ব্যাপারে বলেন, কম্বোডিয়ায় এক সময় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত শিক্ষার্থী পাস করত। তখন সেখানকার নাগরিকরা শিক্ষার মান, শিক্ষার্থীর অর্জিত দক্ষতা ইত্যাদি নিয়ে ব্যাপক আপত্তি তোলেন। এমন পরিস্থিতিতে সেখানকার শিক্ষামন্ত্রী কঠোর হন। ২০১৪ সালে ঘোষণা করেন- পরীক্ষার হলে কোনো নকল হবে না, প্রশ্নপত্র ফাঁস নয়। এমন কঠোরতায় ওই বছর পাসের হার ২৭ শতাংশে নেমে যায়। এ নিয়েও দেশব্যাপী তোলপাড় হয়। মন্ত্রী ঘোষণা করলেন, তিন মাস পর রেফার্ড পরীক্ষা হবে। তিন মাস পরের পরীক্ষায় আরও ১৫ শতাংশ পাস করে। কঠোরতার এই ধারা অব্যাহত থাকায় ২০১৫ সালে পাস ৫৫ শতাংশ, ২০১৬ সালে ৬২ শতাংশ হয়। এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষা আগস্টে হবে, তাই পাসের হার জানা যায়নি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় কঠোরতায় সেখানে পাসের হার এবং শিক্ষার মান দুটিই বেড়েছে। আমরাও মোটা পাসের হার চাই না। কতজন ফেল করল সেটা মুখ্য নয়। মুখ্য হচ্ছে, কলকারখানা, সরকারি-বেসরকারি চাকরিসহ রাষ্ট্রে কী পরিমাণ দক্ষ ও মেধাবী জনশক্তি লাগবে- তা তৈরি করতে পারছি না। সেই উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা চাই।

 

http://www.jugantor.com/first-page/2017/07/25/142714/