১৩ জুলাই ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১১:৫১

প্রধান ৭ দেশ থেকে বেশি কমেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ

প্রবাসী আয়ে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা ৭টি প্রধান দেশ থেকে রেমিট্যান্স কমেছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, কুয়েত, যুক্তরাজ্য এবং ওমান থেকে এবারে রেমিট্যান্স কম এসেছে। প্রবাসী আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ

রেমিট্যান্স আসে এসব দেশ থেকে। তবে এসব অঞ্চলের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কমেছে বেশি হারে। আর পতনের এই সময়েও শীর্ষে রয়েছে ইতালি। জ্বালানি তেলের দরপতনই রেমিট্যান্স কমার মূল কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত (২০১৬-১৭) অর্থবছরে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। নানামুখী উদ্যোগের পরও গত (২০১৬-১৭) অর্থবছরে প্রবাসী আয় কমেছে সাড়ে ১৪ শতাংশ। গত ৫ বছরে এটিই সর্বনিম্ন প্রবাসী আয়।
বিশ্লেষকরা জানান, জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কুয়েতের মতো উপসাগরীয় দেশগুলোর অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়েছে। ফলে এসব অঞ্চলের প্রবাসীদের মজুরি কমেছে। এছাড়া ডলারের সঙ্গে বেশকিছু দেশের স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন, সৌদি আরবে আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) সংক্রান্ত খরচ বৃদ্ধি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিদেশে স্থায়ী হওয়া ও অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতাকেও রেমিট্যান্স কমার কারণ হিসেবে দেখছেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৭৩০ কোটি ৭১ লাখ ডলার। যেখানে এর আগের অর্থবছরে এসেছিল ৮৫৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। মধ্যপ্রাচ্য থেকে রেমিট্যান্স কমেছে ১২৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। শুধু মধ্যপ্রাচ্যের দেশ নয়, রেমিট্যান্স কমেছে ইউরোপ-আমেরিকার দেশ থেকেও। গত অর্থবছরে ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো থেকে প্রবাসী আয় এসেছে ৫৪৬ কোটি ২২ লাখ ডলার। যেখানে আগের অর্থবছরে এসেছিল ৬৩৭ কোটি ৬১ লাখ ডলার। এ অঞ্চল থেকে রেমিট্যান্স কমেছে ৯১ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব থেকে গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) ২২৬ কোটি ৭২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। যেখানে আগের অর্থবছরে এসেছিল ২৯৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। আরব আমিরাত থেকে এসেছে ২০৯ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে এসেছিল ২৭১ কোটি ১৭ লাখ ডলার। কুয়েত থেকে ১০৩ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। যেখানে আগের অর্থবছর এসেছিল ১০৪ কোটি ডলার। ওমান থেকে এসেছে ৮৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। আগের অর্থবছর এসেছিল ৯০ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাংলাদেশিরা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যে পরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন, তা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম। যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬৮ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে এসেছিল ২৪২ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। আর যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ৮০ কোটি ৮১ লাখ ডলার। আগের অর্থবছর এসেছিল ৮৬ কোটি ৩২ লাখ ডলার। এদিকে মোট হিসাবে বড় পতনের এই সময়েও কয়েকটি দেশ থেকে রেমিট্যান্স বেড়েছে। এরমধ্যে শীর্ষে রয়েছে ইউরোপের দেশ ইতালি। এ দেশ থেকে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ৫১ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৪৬ শতাংশ বেশি। রেমিট্যান্স বেড়েছে এমন দেশের তালিকায় ইতালির পাশাপাশি রয়েছে জার্মানি, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, রেমিট্যান্স বাড়াতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রেমিট্যান্স সেবার মান বাড়াতে ব্যাংকগুলোকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে সম্প্রতি ফি কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, রেমিট্যান্স ফি কমিয়ে আনার বিষয়ে সরকার দ্রুতই পদক্ষেপ নেবে।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=73814&cat=3/