১২ জুলাই ২০১৭, বুধবার, ১১:৪২

ভরা বর্ষায়ও ঢাকার ৪০০ কিমি. সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি

নীতিমালা মানছে না সিটি কর্পোরেশনই * ঢাকা যেন দুর্ভোগের নগরী

রাজধানীতে ভরা বর্ষা মৌসুমেও চলছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। এক-দুই কিলোমিটার নয়, মহানগরীর ৪০০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির এ মহাকর্মযজ্ঞ। উন্নয়ন কাজের নামে মিডিয়ান নির্মাণ, ড্রেনেজ, ফুটপাত ও মূল সড়ক খোঁড়ার কারণে রাজধানী ঢাকা রীতিমতো ক্ষতবিক্ষত। একটু বৃষ্টি হলেই নগরবাসীর নিত্যদুর্ভোগ মহাদুর্ভোগে রূপ নিচ্ছে। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে মঙ্গলবারও নগরবাসীকে যানজট-জলাবদ্ধতায় নাকাল হতে হয়েছে। অনেকেরই প্রশ্ন, বৃষ্টির মৌসুমে খোঁড়াখুঁড়ির এ মহাকর্মযজ্ঞ রীতিমতো পরিণত হয়েছে মহাদুর্ভোগে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ১০০ কিলোমিটার সড়কে উন্নয়ন কাজ চলছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৫০ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজ চলছে। এর বাইরে ঢাকা শহরে মেট্রোরেল, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পসহ অন্যান্য সংস্থার উন্নয়ন কাজ চলছে ৫০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে।

সড়ক খনন নীতিমালা অনুযায়ী ৩০ এপ্রিল থেকে ৩০ অক্টোবর ঢাকা শহরের সড়ক খনন বন্ধ রাখার কথা। এটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের। অবাক হলেও সত্য, সড়ক খনন বন্ধ রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত এ দুই সংস্থাই ভরা বর্ষায় ঢাকার ৩৫০ কিলোমিটার সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করছে। আর সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প বাস্তবায়নে সিটি কর্পোরেশন আরও ৫০ কিলোমিটার সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির অনুমতি দিয়েছে। ঢাকা শহরের ২ হাজার ৩৫০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৪০০ কিলোমিটার সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চলায় প্রায় দুই কোটি নগরবাসী এখন সীমাহীন ভোগান্তিতে। এ ব্যাপারে নগরবাসীর পক্ষ থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানো হলেও তাতে কোনো ভ্রƒক্ষেপই নেই সংস্থা দুটির।

সাম্প্রতিক সময়ের ভারি বৃষ্টিতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার সড়কে হাঁটুপানি জমে যাচ্ছে। বিশেষ করে মিরপুরের দক্ষিণ পাইকপাড়া, মাজার রোড, ১০ নম্বর থেকে ১২ নম্বর পর্যন্ত সড়ক, সাংবাদিক কলোনি ও কালশী এলাকার সড়কের করুণ অবস্থা। এর বাইরে কুড়িল প্রগতি সরণি, কারওয়ান বাজার, ধানমণ্ডির মধুবাগ, রায়ের বাজার, শান্তিনগর, রাজারবাগ, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, মতিঝিল, পুরান ঢাকার আলাউদ্দিন রোড ও নাজিম উদ্দিন রোডেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্পটে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধ সড়কে কর্মব্যস্ত নগরবাসীকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে দেখা গেছে। রিকশা উল্টে যাওয়া, মোটরবাইক গর্তে পড়ে আহত হওয়ার দৃশ্য ঢাকায় মঙ্গলবারও চোখে পড়ে।

পুরান ঢাকার আলাউদ্দিন রোডের বাসিন্দা মোস্তফা কামাল যুগান্তরকে বলেন, বর্ষাকে মানুষ স্বস্তির ঋতু মনে করলেও রাজধানীবাসীর কাছে সেটা গজবের ঋতুতে পরিণত হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা-যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে। এরই মধ্যে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করায় জলাবদ্ধতা বৃদ্ধির সঙ্গে দুর্ঘটনাও ঘটছে হরহামেশা।

মিরপুর ১২ নম্বর এলাকার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মামুন যুগান্তরকে বলেন, বর্ষার মৌসুমে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির নিয়ম মানা হচ্ছে না। মিরপুরের বিভিন্ন অলিগলি ও প্রধান সড়কে সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থার উন্নয়ন কাজ চলছে। এ কারণে সামান্য বৃষ্টিতে সড়কগুলো কর্দমাক্ত, জলাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। সে কারণে এসব সড়কে চলাচলে রীতিমতো নাকাল হচ্ছে নগরবাসী। এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা দক্ষিণের সড়ক উন্নয়ন কাজ দ্রুত শেষ করতে আমরা জোর চেষ্টা চালাচ্ছি। তবে এর বাইরেও অন্যান্য সংস্থা জরুরি উন্নয়ন কাজের কারণে কিছু সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করছে। তিনি বলেন, আগামী বর্ষা মৌসুমে নগরবাসীর ভোগান্তির বিষয় মাথায় রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) মো. শরীফ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, জরুরি প্রয়োজনে বর্ষা মৌসুমেও বিভিন্ন সড়কে উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছে। নগরবাসীর ভোগান্তির বিষয় মাথায় রেখে এসব কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ঢাকা উত্তর এলাকার ১ হাজার ৩৫০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ২৫০ কিলোমিটারে উন্নয়ন কাজ চলছে। তবে মেট্রোরেলসহ অন্যান্য সংস্থার উন্নয়ন কাজের কারণেও কিছু সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে এসব সড়ক খননের অনুমোদন দেয়া হয়ে থাকে।

http://www.jugantor.com/last-page/2017/07/12/138843