৮ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ১১:১০

১৫ বছরে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি তৈরি পোশাক খাতে

তৈরি পোশাক খাতে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে এ খাতে রফতানি আয় হয়েছে দ্ইু হাজার ৮১৫ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধির হিসাবে যা মাত্র শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ। এটি রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম।

বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত তৈরি পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি কম হলেও সামগ্রিকভাবে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের রফতানি আয় হয়েছে তিন হাজার ৪৮৩ কোটি ডলার। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে রফতানি আয় ছিল ৩ হাজার ৪২৫ কোটি ডলার। এ হিসাবে গত অর্থবছরে দেশের মোট রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে এক দশমিক ৬৮ শতাংশ।
তৈরি পোশাক খাতে এর আগে মাত্র একবারই ২০০১-০২ অর্থবছরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। সেসময় ৪৫৮ কোটি ডলার রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তৈরি পোশাক খাতের রেকর্ড নিম্ন প্রবৃদ্ধির কারণ হিসাবে পণ্যের গড় মূল্য হ্রাস, পোশাক কারখানাগুলোতে চলমান অবকাঠামোগত সংস্কার কার্যক্রম, অর্থনৈতিক মন্দাভাব, আমদানিকারক দেশগুলোতে চাহিদার কমতি, ইউরোর অবমূল্যায়ন ও ডলারের বিপরীতে টাকার মান বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রাথমিক তথ্য অনুসারে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতে রফতানি আয় হয়েছে ২ হাজার ৮১৫ কোটি ডলার। যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় মাত্র শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। এটি তিন হাজার ৩৮ কোটি ডলারের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ খাত থেকে রফতানি আয় হয়েছিল ২ হাজার ৮০৯ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে তৈরি পোশাকের মধ্যে নিটওয়্যার পণ্যে রফতানি আয় হয়েছে এক হাজার ৩৭৬ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩ শতাংশ বেশি। ওভেন পণ্যে আয় হয়েছে ১ হাজার ৪৩৯ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে আয় হয়েছিল ১ হাজার ৪৭৩ কোটি ডলার।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, এই নামমাত্র প্রবৃদ্ধি দেশের তৈরি পোশাক খাতের বাস্তবতারই চিত্র। এতে আমরা খুব অবাক হইনি কেন না, এ খাত এখন বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এর মধ্যে রয়েছে কারখানাগুলোয় অবকাঠামোগত সংস্কার কার্যক্রম, ইউরোর দরপতন ও শ্রমিক অসন্তোষের মতো বিষয়। তিনি বলেন, এ খাতে বর্তমান সহযোগিতাগুলো অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সরকারের উচিত বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা। আগামী দুই বছরের জন্য জাহাজীকরণে ৫ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনারও দাবি জানান তিনি।

গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পণ্যের গড় মূল্যহ্রাস ও বৈশ্বিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধিতে এ ভাটা দেখা দিয়েছে। বিপরীতে আমাদের প্রতিযোগীরা ভালো করছে। তিনি তৈরি পোশাক পণ্যের বৈচিত্র্যকরণের তাগিদ দিয়ে এ বিষয়ে ব্যবসায়ী ও সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন।
সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে সামগ্রিক রফতানি আয়ে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। কিন্তু আয় হয়েছে ৩ হাজার ৪৮৩ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের তুলনায় ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম হয়েছে ২০০ কোটি ডলারেরও বেশি।
এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে সেবা খাতসহ আমাদের রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি ডলারে। তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর সংস্কার কাজ প্রায় শেষ হয়ে আসাতে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের রফতানি আয়ে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে। ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য বলেন, পণ্যের মূলহ্রাস, ইউরো ও পাউন্ডের দরপতনের কারণে রফতানি আয়, বিশেষ করে তৈরি পোশাকে প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে।

http://www.dailysangram.com/post/290731