৭ জুলাই ২০১৭, শুক্রবার, ৫:৫২

বাড়ছে বন্যা দুর্গতদের আহাজারি

কক্সবাজারের আরো দু’জনের মৃত্যু : কুড়িগ্রাম-গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জে পানি বাড়ছে : বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গন : সিলেটে কমছে পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ : পেছানো হবে পরীক্ষা, বন্ধ রাখা যাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : হালদায় বিলীনের আশংকায় নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়ক
ইনকিলাব ডেস্ক : গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে দেশের পর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রবল বন্যা ও নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। সে সাথে বেড়েছে পাহাড়ধসের আশঙ্কা। আর উত্তরের জনপদের ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা-যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। এ বিষয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো বিস্তারিত প্রতিবেদন-
কক্সবাজার থেকে শামসুল হক শারেক জানান, গতকাল থেকে বৃষ্টি থামায় মাতামুহুরী, বাকঁখালীসহ সকল নদীগুলোতে উজানের ঢল কিছুটা কমেছে। তবে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। চকরিয়া, পেকুয়া, রামু ও কক্সবাজার সদরের উপকূলীয় এলাকা এখনো পানির নিচে ডুবে আছে। চকরিয়ার ঢেমুশিয়া, বরইতলী, কোনাখালী, বিএমচর, বদরখালীসহ উপকূলীয় এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে কক্সবাজার জেলাব্যাপী প্রবল বন্যা ও নদীভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। সে সাথে বেড়েছে পাহাড়ধসের ঝুঁকি। বন্যায় তলিয়ে গেছে জেলা সদর, চকরিয়া, পেকুয়া, উখিয়া, টেকনাফ ও রামু উপজেলাসহ নিম্নাঞ্চলের শত শত গ্রাম। দুর্ভোগে পড়েছে এসব এলাকার পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে সর্বত্র। বন্যাদূর্গত এলাকার শত শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অঘোষিতভাবে বন্ধ রয়েছে।

বন্যায় আরো দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানাগেছে। এনিয়ে কক্সবাজারে বন্যায় ৪ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেল। উখিয়ার পালংখালীর আনজুমানপাড়ায় দেয়ালচাপায় ১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ঘুমধুমে পাহাড় ধসে চেমন খাতুন নামে বয়োবৃদ্ধ মহিলা মারা গেছে। পাহাড়ের মাটি এসে পড়ায় কলাতলীতে মেরিনড্রাইভ সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে। উপড়ে গেছে সড়কের দুই পাশের অনেক গাছপালা।
কক্সবাজার জেলা কন্ট্রোল রোম জানিয়েছে, পানি কমে যাওয়ায় বিভিন্নস্থানে আশ্রয় নেয়া লোকজন নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেছে। মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর পানি বিপদ সীমান নিচে চলে এসেছে। জেলা প্রশাসন বন্যা দুর্গতদের মাঝে এপর্যন্ত বিতরণ করেছে ১৬ শত কেজি চিড়া, ৫৬০ কেজি গুড়, ১১ টন চাল, ৯ আইটেমের দুই হাজার প্যকেট ত্রাণ সামগ্রী ও এক লাখ ৪০ হাজার নগদ টাকা।
কক্সবাজারের পাহাড়গুলোতে ৫ লাখ মানুষ ঝুঁিকপূর্ণ বসবাস করছে বলে জানাগেছে। গত কয়েকদিন আগেও টেকনাফে পাহাড়ধসে বাপ-মেয়ে দু’জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। কক্সবাজার শহর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও চকরিয়-পেকুয়ার পাহাড়ে ঝুঁিক নিয়ে বসবাস করে আসছে এই বিপুল সংখ্যক মানুষ। প্রতিবছর পাহাড়ধসে প্রাণ হানির ঘটনা ঘটলেও বসবাসকারীরা মানছে না কোন বাধা নিষেধ। তবে বর্ষা এলেই পাহাড়ে এসব অবৈধ দখলদার ও বসবাসকারীদের পাহাড়ধসের শঙ্কায় দিন কাটে প্রতিনিয়ত। রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাবে এবং স্থানীয় প্রশাসনের আশকারায় পাহাড়ে গড়ে উঠেছে এসব অবৈধ স্থাপনা। এতে গত দশ বছরে ঘটেছে শতাধিক নারী-পুরুষের প্রাণহানির ঘটনা।

সিলেট খেকে খলিলুর রহমান জানান, সিলেটের আটটি উপজেলায় দীর্ষমেয়াদী বন্যায় দেখা দিয়েছে। তবে গতকাল সকাল থেকে ওইসব এলাকায় বন্যার পানি কমতে দেখা গেছে। তবে পানি কমার সাথে সাথে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। এদিকে, মানুষের দুর্ভোগ কমাতে এবং বন্যা কবলিত মানুষের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছাতে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন জনপ্রতিনিরা ও স্থানীয় প্রশাসন। এছাড়াও এবার আশ্রয় কেন্দ্রগুলো পরির্দশন করছেন স্বয়ং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফয়জুর রহমান। এর আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রীও আশ্রয় কেন্দ্রগুলো পরির্দশন করেছিলেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারার পানি কিছুটা কমেছে। তবে এখনও বিপদসীমার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটায় কানাইঘাটে সুরমা বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার, শেওলায় কুশিয়ারা বিপদসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার, আমলসীদে কুশিয়ারা বিপদসীমার ৬২ সেন্টিমিটার, শেরপুরে কুশিয়ারা ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। গতকাল সিলেটের ফেঞ্জুগঞ্জ উপজেলার ফরিদপুর আশ্রয়কেন্দ্র, বারহাল গুচ্ছগ্রাম মঈনপুর এলাকায় ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এছাড়াও বন্যা কবলিত বাকি উপজেলাগুলোতে মানুষের দুভোর্গ বেড়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, চলমান বন্যায় ঘর বাড়িতে উঠেছে পানি, তলিয়ে গেছে কবলিত এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জরুরি অবস্থায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ রাখা হলেও ৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে ষাণ্মাসিক পরীক্ষা নেয়ার নির্দেশনা থাকায় বন্ধ করা হয়নি মাধ্যমিক স্কুল। ওদিকে বন্যা কবলিত এলাকার রাস্তাঘাট-স্কুল তলিয়ে যাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়া-আসা করছেন। তবে এ ব্যাপারে সিলেট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলজার আহমদ খান জানিয়েছেন, গতকাল থেকে ২১ তারিখের মধ্যে সকল মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ষান্মাসিক পরীক্ষা সম্পন্ন করার নির্দেশ রয়েছে। তবে, বন্যায় যে সকল এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং যে সকল স্কুলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ, সেসব স্কুলের জন্য পরীক্ষার সময় বাড়ানো যেতে পারে। এর জন্য স্থানী শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি পরীক্ষা পেছাতে পারে। শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা বিবেচনায় বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাময়িক বন্ধও রাখতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সিলেটের আট উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষ ক্ষতিপ্রস্থ হয়েছেন। ওইসব উপজেলায় মোট ৫৬ টি ইউনিয়নের ৪৬৬ গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে। এসব এলাকার ১৭ হাজার ৮৫৮ পরিবারের ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭৫৫ জন লোক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তাছাড়া ৪ হাজার ৪৯১ টি ঘরবাড়ি বন্যায় ক্ষতি হয়েছে। ৪ হাজার ৩৩০ হেক্টর আউশ ধান ও আমনের বীজতলাসহ ফসলী জমি তলিয়ে গেছে। বন্যার কারণে বন্ধ রয়েছে দু’শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান। এ পর্যন্ত হয়েছে ২৭৫ মেট্রিক টন ত্রাণ ও ৪ লাখ ৫৫ হাজার নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বিতরণ করা হচ্ছে শুকনো খাবারও।

সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও অবিরাম বর্ষনে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি অব্যাহত বৃদ্ধি পেয়ে বাঁধের বাইরে এবং চরাঞ্চলের নিচু এলাকা পাবিত হয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীতে ৩২ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই নদী তীরবর্তীসহ চরাঞ্চলের নিচু এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। কোন কোন চরের নীচু এলাকার বাড়ি-ঘরে পানি উঠেছে বলে জানা গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জ পরিচালন ও রক্ষনাবেক্ষণ বিভাগ জানায়, যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে সমতল ও নিচু এবং চরাঞ্চলের ২৭টি ইউনিয়নের নিচু এলাকায় পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ২/১ দিনের মধ্যে যমুনার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, যে কোন ধরনের পরিস্থিতি মোকালোয় সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে।
কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, কুড়িগ্রামের প্রধান-প্রধান নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ছে দ্রæত গতিতে। ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী ও নুনখাওয়া পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এই গতিতে পানি বাড়লে দু’একদিনের মধ্যে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। পানি বাড়ার ফলে এরই মধ্যে দুই শতাধিক চর ও দ্বীপচরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেকের ঘরবাড়িতে পানি ঢুকেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার পরিবারের ৫০ হাজার মানুষ। ডুবে গেছে পাট, আউস, সবজিসহ কিছু ফসল। এছাড়াও ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে প্রায় শতাধিক পরিবার।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় ধরলা নদী ব্রিজ পয়েন্টে ২৫.৬৯ সে.মি, ব্রহ্মপুত্র নদের নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৫.৯৭ সে.মি., ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ২৩.৬৮ সেন্টিমিটার ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তায় ২৮.৪১ সেন্টিমিটার পানি রেকর্ড করা হয়েছে। চিলমারীতে ব্রহ্মপূত্রের পানি বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যান্য নদীগুলো বিপদসীমার নীচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ার ফলে ইউনিয়নের ১০টি চরের প্রায় দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। পোড়ারচরের বাসিন্দা শরিফুল হক জানান, পানিবন্দি প্রায় ৩৫টি পরিবার আবাসন প্রকল্পের গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। মেম্বার মানিক মিয়া জানান, ভগবতিপুরে প্রায় ৫০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পরেছে।
জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ত্রাণ অধিদপ্তরের কাছে ৫০০ মে. টন চাল ও ১৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানিয়েছেন, বন্যা মোকাবেলায় সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

গাইবান্ধা জেলা সংবাদদাতা জানান, গত কয়েকদিনে টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা উপজেলা নদী তীরবর্তী নি¤œ অঞ্চল বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙ্গন দেখা দিয়েছে । এসব এলাকার অনেক ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া বাদের কয়েকটি স্থানে হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রক্ষপুত্র নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে জেলা প্রশাসন এর উদ্যোগে এান ও দুযোগ কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, খাদ্য, আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন সহ অন্যান্য বিষয় সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।
ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) থেকে সৈয়দ জাহেদুল্লাহ কুরাইশী জানান, গত তিনদিনের লাগাতার ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নিম্নাঞ্চল ফের প্লাবিত হয়ে পড়েছে। হালদা নদীর ঢলের স্রোতে বিলীন হতে যাচ্ছে ফটিকছড়ির নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়ক। হালদা, সর্ত্তা, ধুরুং, লেলাং-তেলপারই খালের বাঁধভাঙ্গা স্থান সমূহ দিয়ে পানি প্রবেশ করে গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পানি বন্দি হয়ে আছে হাজারো মানুষ।
জানা যায়, পাহাড়ী ঢল ও অবিরাম বর্ষণের ফলে উপজেলার শতাধিক গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ফটিকছড়ির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হালদা নদী, ধুরুং, সর্ত্তা, লেলাং-তেলপারই, মনাইছড়ি, কুতুবছড়ি, বারমাসিয়া, ফটিকছড়ি, হারুয়ালছড়ি, গজারিয়া, শোভনছড়ি, রক্তছড়ি খালের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পূর্বের বাঁধভাঙ্গা স্থান সমূহ দিয়ে পানি প্রবেশ করায় গ্রামীণ সড়কগুলো ডুবে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এদিকে হালদা নদীর নাজিরহাট পুরাতন ব্রিজের গোড়া থেকে জেবিআইসির অর্থায়নে নির্মিত নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়কের কিছু অংশ গত ৪ জুলাই হালদা নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। পাউবোর প্রধান প্রকৌশলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ফটিকছড়ির তলদেশ খ্যাত সমিতিরহাট ইউপি এলাকার সাড়ে ৭ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধ হালদার উপর্যুপরি তান্ডবে বিলীন হয়ে যাওয়ায় জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। পাশেই পানিসম্পদ মন্ত্রীর বাড়ি হলেও তিনি না দেখার ভান ধরে বসে আছেন। বরং তিনি নিজ হাটহাজারী অংশ একনেকে পাস করালেও ফটিকছড়ি অংশকে বাদ দিয়ে বিমাতা সুলভ আচরণ করেছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এ নিয়ে জনমনে চরম ক্ষোভ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গতকাল বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। ফটিকছড়ির ইউএনও বলেন, গত মাসে ৩ বারের বন্যায় ফটিকছড়িতে শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সে ক্ষতি থাকাবস্থায় আবারো বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় জনমনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।
বাড়ছে বন্যা দুর্গতদের আহাজারি | প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম 2 0 0 4 কক্সবাজারের আরো দু’জনের মৃত্যু : কুড়িগ্রাম-গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জে পানি বাড়ছে : বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গন : সিলেটে কমছে পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ : পেছানো হবে পরীক্ষা, বন্ধ রাখা যাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : হালদায় বিলীনের আশংকায় নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়ক ইনকিলাব ডেস্ক : গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে দেশের পর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রবল বন্যা ও নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। সে সাথে বেড়েছে পাহাড়ধসের আশঙ্কা। আর উত্তরের জনপদের ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা-যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। এ বিষয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো বিস্তারিত প্রতিবেদন- কক্সবাজার থেকে শামসুল হক শারেক জানান, গতকাল থেকে বৃষ্টি থামায় মাতামুহুরী, বাকঁখালীসহ সকল নদীগুলোতে উজানের ঢল কিছুটা কমেছে। তবে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। চকরিয়া, পেকুয়া, রামু ও কক্সবাজার সদরের উপকূলীয় এলাকা এখনো পানির নিচে ডুবে আছে। চকরিয়ার ঢেমুশিয়া, বরইতলী, কোনাখালী, বিএমচর, বদরখালীসহ উপকূলীয় এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে কক্সবাজার জেলাব্যাপী প্রবল বন্যা ও নদীভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। সে সাথে বেড়েছে পাহাড়ধসের ঝুঁকি। বন্যায় তলিয়ে গেছে জেলা সদর, চকরিয়া, পেকুয়া, উখিয়া, টেকনাফ ও রামু উপজেলাসহ নিম্নাঞ্চলের শত শত গ্রাম। দুর্ভোগে পড়েছে এসব এলাকার পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে সর্বত্র। বন্যাদূর্গত এলাকার শত শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অঘোষিতভাবে বন্ধ রয়েছে। বন্যায় আরো দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানাগেছে। এনিয়ে কক্সবাজারে বন্যায় ৪ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেল। উখিয়ার পালংখালীর আনজুমানপাড়ায় দেয়ালচাপায় ১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ঘুমধুমে পাহাড় ধসে চেমন খাতুন নামে বয়োবৃদ্ধ মহিলা মারা গেছে। পাহাড়ের মাটি এসে পড়ায় কলাতলীতে মেরিনড্রাইভ সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে। উপড়ে গেছে সড়কের দুই পাশের অনেক গাছপালা। কক্সবাজার জেলা কন্ট্রোল রোম জানিয়েছে, পানি কমে যাওয়ায় বিভিন্নস্থানে আশ্রয় নেয়া লোকজন নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেছে। মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর পানি বিপদ সীমান নিচে চলে এসেছে। জেলা প্রশাসন বন্যা দুর্গতদের মাঝে এপর্যন্ত বিতরণ করেছে ১৬ শত কেজি চিড়া, ৫৬০ কেজি গুড়, ১১ টন চাল, ৯ আইটেমের দুই হাজার প্যকেট ত্রাণ সামগ্রী ও এক লাখ ৪০ হাজার নগদ টাকা। কক্সবাজারের পাহাড়গুলোতে ৫ লাখ মানুষ ঝুঁিকপূর্ণ বসবাস করছে বলে জানাগেছে। গত কয়েকদিন আগেও টেকনাফে পাহাড়ধসে বাপ-মেয়ে দু’জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। কক্সবাজার শহর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও চকরিয়-পেকুয়ার পাহাড়ে ঝুঁিক নিয়ে বসবাস করে আসছে এই বিপুল সংখ্যক মানুষ। প্রতিবছর পাহাড়ধসে প্রাণ হানির ঘটনা ঘটলেও বসবাসকারীরা মানছে না কোন বাধা নিষেধ। তবে বর্ষা এলেই পাহাড়ে এসব অবৈধ দখলদার ও বসবাসকারীদের পাহাড়ধসের শঙ্কায় দিন কাটে প্রতিনিয়ত। রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাবে এবং স্থানীয় প্রশাসনের আশকারায় পাহাড়ে গড়ে উঠেছে এসব অবৈধ স্থাপনা। এতে গত দশ বছরে ঘটেছে শতাধিক নারী-পুরুষের প্রাণহানির ঘটনা। সিলেট খেকে খলিলুর রহমান জানান, সিলেটের আটটি উপজেলায় দীর্ষমেয়াদী বন্যায় দেখা দিয়েছে। তবে গতকাল সকাল থেকে ওইসব এলাকায় বন্যার পানি কমতে দেখা গেছে। তবে পানি কমার সাথে সাথে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। এদিকে, মানুষের দুর্ভোগ কমাতে এবং বন্যা কবলিত মানুষের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছাতে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন জনপ্রতিনিরা ও স্থানীয় প্রশাসন। এছাড়াও এবার আশ্রয় কেন্দ্রগুলো পরির্দশন করছেন স্বয়ং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফয়জুর রহমান। এর আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রীও আশ্রয় কেন্দ্রগুলো পরির্দশন করেছিলেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারার পানি কিছুটা কমেছে। তবে এখনও বিপদসীমার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটায় কানাইঘাটে সুরমা বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার, শেওলায় কুশিয়ারা বিপদসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার, আমলসীদে কুশিয়ারা বিপদসীমার ৬২ সেন্টিমিটার, শেরপুরে কুশিয়ারা ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। গতকাল সিলেটের ফেঞ্জুগঞ্জ উপজেলার ফরিদপুর আশ্রয়কেন্দ্র, বারহাল গুচ্ছগ্রাম মঈনপুর এলাকায় ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এছাড়াও বন্যা কবলিত বাকি উপজেলাগুলোতে মানুষের দুভোর্গ বেড়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে, চলমান বন্যায় ঘর বাড়িতে উঠেছে পানি, তলিয়ে গেছে কবলিত এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জরুরি অবস্থায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ রাখা হলেও ৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে ষাণ্মাসিক পরীক্ষা নেয়ার নির্দেশনা থাকায় বন্ধ করা হয়নি মাধ্যমিক স্কুল। ওদিকে বন্যা কবলিত এলাকার রাস্তাঘাট-স্কুল তলিয়ে যাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়া-আসা করছেন। তবে এ ব্যাপারে সিলেট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলজার আহমদ খান জানিয়েছেন, গতকাল থেকে ২১ তারিখের মধ্যে সকল মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ষান্মাসিক পরীক্ষা সম্পন্ন করার নির্দেশ রয়েছে। তবে, বন্যায় যে সকল এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং যে সকল স্কুলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ, সেসব স্কুলের জন্য পরীক্ষার সময় বাড়ানো যেতে পারে। এর জন্য স্থানী শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি পরীক্ষা পেছাতে পারে। শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা বিবেচনায় বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাময়িক বন্ধও রাখতে পারবেন। প্রসঙ্গত, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সিলেটের আট উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষ ক্ষতিপ্রস্থ হয়েছেন। ওইসব উপজেলায় মোট ৫৬ টি ইউনিয়নের ৪৬৬ গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে। এসব এলাকার ১৭ হাজার ৮৫৮ পরিবারের ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭৫৫ জন লোক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তাছাড়া ৪ হাজার ৪৯১ টি ঘরবাড়ি বন্যায় ক্ষতি হয়েছে। ৪ হাজার ৩৩০ হেক্টর আউশ ধান ও আমনের বীজতলাসহ ফসলী জমি তলিয়ে গেছে। বন্যার কারণে বন্ধ রয়েছে দু’শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান। এ পর্যন্ত হয়েছে ২৭৫ মেট্রিক টন ত্রাণ ও ৪ লাখ ৫৫ হাজার নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বিতরণ করা হচ্ছে শুকনো খাবারও। সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও অবিরাম বর্ষনে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি অব্যাহত বৃদ্ধি পেয়ে বাঁধের বাইরে এবং চরাঞ্চলের নিচু এলাকা পাবিত হয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীতে ৩২ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই নদী তীরবর্তীসহ চরাঞ্চলের নিচু এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। কোন কোন চরের নীচু এলাকার বাড়ি-ঘরে পানি উঠেছে বলে জানা গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জ পরিচালন ও রক্ষনাবেক্ষণ বিভাগ জানায়, যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে সমতল ও নিচু এবং চরাঞ্চলের ২৭টি ইউনিয়নের নিচু এলাকায় পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ২/১ দিনের মধ্যে যমুনার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, যে কোন ধরনের পরিস্থিতি মোকালোয় সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে। কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, কুড়িগ্রামের প্রধান-প্রধান নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ছে দ্রæত গতিতে। ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী ও নুনখাওয়া পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এই গতিতে পানি বাড়লে দু’একদিনের মধ্যে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। পানি বাড়ার ফলে এরই মধ্যে দুই শতাধিক চর ও দ্বীপচরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেকের ঘরবাড়িতে পানি ঢুকেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার পরিবারের ৫০ হাজার মানুষ। ডুবে গেছে পাট, আউস, সবজিসহ কিছু ফসল। এছাড়াও ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে প্রায় শতাধিক পরিবার। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় ধরলা নদী ব্রিজ পয়েন্টে ২৫.৬৯ সে.মি, ব্রহ্মপুত্র নদের নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৫.৯৭ সে.মি., ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ২৩.৬৮ সেন্টিমিটার ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তায় ২৮.৪১ সেন্টিমিটার পানি রেকর্ড করা হয়েছে। চিলমারীতে ব্রহ্মপূত্রের পানি বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যান্য নদীগুলো বিপদসীমার নীচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ার ফলে ইউনিয়নের ১০টি চরের প্রায় দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। পোড়ারচরের বাসিন্দা শরিফুল হক জানান, পানিবন্দি প্রায় ৩৫টি পরিবার আবাসন প্রকল্পের গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। মেম্বার মানিক মিয়া জানান, ভগবতিপুরে প্রায় ৫০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পরেছে। জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ত্রাণ অধিদপ্তরের কাছে ৫০০ মে. টন চাল ও ১৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানিয়েছেন, বন্যা মোকাবেলায় সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। গাইবান্ধা জেলা সংবাদদাতা জানান, গত কয়েকদিনে টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা উপজেলা নদী তীরবর্তী নি¤œ অঞ্চল বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙ্গন দেখা দিয়েছে । এসব এলাকার অনেক ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া বাদের কয়েকটি স্থানে হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রক্ষপুত্র নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে জেলা প্রশাসন এর উদ্যোগে এান ও দুযোগ কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, খাদ্য, আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন সহ অন্যান্য বিষয় সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) থেকে সৈয়দ জাহেদুল্লাহ কুরাইশী জানান, গত তিনদিনের লাগাতার ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নিম্নাঞ্চল ফের প্লাবিত হয়ে পড়েছে। হালদা নদীর ঢলের স্রোতে বিলীন হতে যাচ্ছে ফটিকছড়ির নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়ক। হালদা, সর্ত্তা, ধুরুং, লেলাং-তেলপারই খালের বাঁধভাঙ্গা স্থান সমূহ দিয়ে পানি প্রবেশ করে গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পানি বন্দি হয়ে আছে হাজারো মানুষ। জানা যায়, পাহাড়ী ঢল ও অবিরাম বর্ষণের ফলে উপজেলার শতাধিক গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ফটিকছড়ির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হালদা নদী, ধুরুং, সর্ত্তা, লেলাং-তেলপারই, মনাইছড়ি, কুতুবছড়ি, বারমাসিয়া, ফটিকছড়ি, হারুয়ালছড়ি, গজারিয়া, শোভনছড়ি, রক্তছড়ি খালের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পূর্বের বাঁধভাঙ্গা স্থান সমূহ দিয়ে পানি প্রবেশ করায় গ্রামীণ সড়কগুলো ডুবে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এদিকে হালদা নদীর নাজিরহাট পুরাতন ব্রিজের গোড়া থেকে জেবিআইসির অর্থায়নে নির্মিত নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়কের কিছু অংশ গত ৪ জুলাই হালদা নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। পাউবোর প্রধান প্রকৌশলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ফটিকছড়ির তলদেশ খ্যাত সমিতিরহাট ইউপি এলাকার সাড়ে ৭ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধ হালদার উপর্যুপরি তান্ডবে বিলীন হয়ে যাওয়ায় জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। পাশেই পানিসম্পদ মন্ত্রীর বাড়ি হলেও তিনি না দেখার ভান ধরে বসে আছেন। বরং তিনি নিজ হাটহাজারী অংশ একনেকে পাস করালেও ফটিকছড়ি অংশকে বাদ দিয়ে বিমাতা সুলভ আচরণ করেছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এ নিয়ে জনমনে চরম ক্ষোভ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গতকাল বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। ফটিকছড়ির ইউএনও বলেন, গত মাসে ৩ বারের বন্যায় ফটিকছড়িতে শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সে ক্ষতি থাকাবস্থায় আবারো বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় জনমনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।

https://www.dailyinqilab.com/article/86464/