৫ জুলাই ২০১৭, বুধবার, ১২:১৬

ঈদে সড়ক রেল ও নৌ পথে ২৪০ দুর্ঘটনা ৩১১ জন নিহত আহত ৮৬২

যাত্রী কল্যাণ সমিতির জরিপ

সম্প্রতি ঈদযাত্রায় দেশের সড়ক, রেল ও নৌপথে ২৪০টি দুর্ঘটনায় ৩১১ জন মানুষ নিহত ও ৮৬২ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে সড়কে দুর্ঘটনার হার সবচেয়ে বেশি। ২০৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭৪ জন নিহত ও ৮৪৮ জন আহত হয়েছে। অতীতের ঈদগুলোর তুলনায় এ হার বেড়েছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক জরিপে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো: মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ প্রতিবেদন তুলে ধরেন। সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতি বছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় চার বছর ধরে বিষয়টি তারা পর্যবেণ করে আসছে। এবারের ঈদে রেশনিং পদ্বতিতে ছুটি থাকায় ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হলেও সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে, বেড়েছে প্রাণহানি ও য়তির পরিমাণ। তিনি জানান, ঈদযাত্রা শুরুর দিন ১৯ জুন থেকে ঈদ শেষে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফেরা ১ জুলাই পর্যন্ত বিগত ১৩ দিনে ২০৫টি দুর্ঘটনায় ২৭৪ জন নিহত ও ৮৪৮ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে নৌপথে একটি দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত ও ১৪ জন আহত হয়েছেন। উল্লিখিত সময়ে রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে পূর্বাঞ্চলে ২৫ জন ও পশ্চিমাঞ্চলে ৯ জনসহ মোট ৩৪ জন নিহত হন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা ২২টি জাতীয় দৈনিক, ৬টি আঞ্চলিক দৈনিক ও ১০টি অনলাইন দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, উল্লিখিত সময়ে ১৯ জুন ১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত ও ৯২ জন আহত হন। ২০ জুন ৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত ও ২০ জন আহত হন। ২১ জুন ১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত ও ১৮ জন আহত হন। ২২ জুন ১১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত ও ৩৯ জন আহত হন। ২৩ জুন ১৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হন। ২৪ জুন ২০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১ জন নিহত ও ৮৫ জন আহত হন। ২৫ থেকে ২৮ জুন ৬০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮০ জন নিহত ও ১২৮ জন আহত হন। ২৯ জুন ২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৪ জন নিহত ও ১২৪ জন আহত হন। ৩০ জুন ২১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত ও ৭৮ জন আহত হন। ১ জুলাই ২৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত ও ২২৯ জন আহত হন।

পর্যবেণে দেখা যায় মোট যানবাহনের ৩৮ ভাগ বাস, ৩৪ ভাগ ট্রাক ও পিকআপ, ২৪ ভাগ নছিমন-করিমন, ভটভটি-ইজিবাইক, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল, ৪ ভাগ অন্যান্য যানবাহন এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল। দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, পথচারী ৩৬ শতাংশ, মুখোমুখি সংঘর্ষ ৩৮ শতাংশ, ওভারটেকিং ১৩ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণে ১৩ শতাংশ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়।
তাদের সমিতির পর্যবেণে দুর্ঘটনার জন্য ১০টি কারণকে দায়ী করা হয়। এগুলো হলো : ১. অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ২. অতিরিক্ত গতিতে যানবাহন চালানো, ৩. অদ চালক দ্বারা যানবাহন চালানো, ৪. ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন, ৫. মহাসড়কে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, নসিমন-করিমন চলাচল, ৬. রাস্তার ওপর হাটবাজার ও ফুটপাথ দখল, ৭. ফুটপাথ না থাকা, ৮. বিপজ্জনক ওভারটেকিং, ৯. বিরতিহীন বা বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালানো ও ১০. ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।

সংবাদ সম্মেলনে দুর্ঘটনারোধে যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে ১২ দফা সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়। সুপারিশগুলো হলো : (১) সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইউনিট গঠন, (২) যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ, (৩) যানবাহনের ফিটনেস পদ্ধতি ডিজিটাল করা, (৪) রাস্তার রোড সেফটি অডিট করা, (৫) অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা, (৬) প্রশিতি চালক গড়ে তোলা, (৭) ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে মানসম্মত পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা, (৮) মহাসড়কে ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা আলাদা লেইনের ব্যবস্থা করা, (৯) ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু পদ্বতি আধুনিকায়ন করা, (১০) মহাসড়কে নছিমন-করিমন, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা বন্ধে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত শত ভাগ বাস্তবায়ন করা, (১১) ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট মেরামত করা এবং (১২) মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধে উদ্যোগ নেয়া।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিরাপদ সড়ক চাই-এর যুগ্ম মহাসচিব লায়ন গণি মিয়া বাবুল, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহসম্পাদক ব্যারিস্টার মো: শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: হানিফ খোকন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো: সামসুদ্দীন চৌধুরী, তৌহিদুল ইসলাম, জিয়াউল হক চৌধুরী প্রমুখ।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/233090