ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ উপজেলার বেইলি ব্রিজ এলাকায় যানবাহনের লম্বা লাইন ;নয়া দিগন্ত
১ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ১০:৪৯

পাটুরিয়া ও আরিচায় যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন

পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন শেষে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মমুখী মানুষের ঢল নেমেছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাটে। ছুটি কাটিয়ে যাত্রীরা থেমে থেমে যাতায়াত করলেও শুক্রবার বিকেল থেকে হঠাৎ কর্মমুখী মানুষের চাপ বেড়ে যায় ঘাট এলাকায়। এ ঘাটে প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে দালাল, চাঁদাবাজ, মলম পার্টি, টানাপার্টি ও ছিনতাইকারীর উৎপাত অনেকটা কমলেও বেড়েছে যানবাহনের চাপ।
এতে করে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার জিরো পয়েন্ট থেকে গোয়ালন্দ পদ্মার মোড় পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার যাত্রীবাহী বাসের লম্বা লাইন দেখা যায়। অপর দিকে কর্মমুখী মানুষের উপচেপড়া ভিড়কে পুঁজি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে নিচ্ছে মহাসড়কে চলাচলরত লোকাল যানবাহনগুলো। মাত্র ১১ কিলোমিটার দূরত্ব দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার জিরো পয়েন্ট থেকে গোয়ালন্দ মোড়। ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ সামাল দেয়ার নামে যাত্রী প্রতি ৮০-১০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। যেখানে স্বাভাবিক সময়ে ভাড়া ১০-১৫ টাকা ছিল। এতে করে সাধারণ যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে দুর্বিপাকে।
শুক্রবার বিকেলে ঘাট এলাকা পরিদর্শনকালে দেখা যায়, গোয়ালন্দের পদ্মার মোড় থেকে পুলিশ প্রশাসনের কড়া নজরে মাহিন্দ্রা, লেগুনা, অটোরিকশাসহ অবৈধ যানবাহনগুলোকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক হয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এ যানবাহনগুলো পদ্মার মোড় থেকে উজানচর শামছু মণ্ডলের হাট ঘুরে দৌলতদিয়া ঘাটে যাচ্ছে। এই অজুহাতে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাটে রাজধানীগামী কর্মমুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড় সামাল দিতে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ প্রশাসন ও গোয়ালন্দ উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের উচ্চপদের কর্মকর্তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সার্বক্ষণিক সক্রিয় রয়েছে প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গোয়ালন্দ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো: হাবিব হাসান জানান, দৌলতদিয়া ঘাটে হঠাৎ করে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় লম্বা লাইনের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। দৌলতদিয়ার বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপক মো: শফিকুল ইসলাম জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ছোট-বড় ১৯টি ফেরির মধ্যে বর্তমানে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে।
শিবালয় (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাটযোগে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের যাতায়াত নির্বিঘœ করতে প্রশাসনের নানামুখী উদ্যোগে স্বস্তি প্রকাশ করলেও ফিরতি পথে এর উল্টো চিত্র দেখা যায়। রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া এবং পাবনার কাজিরহাট থেকে ফেরি-লঞ্চ, স্পিটবোটসহ ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে কর্মমুখী যাত্রীরা মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাটে পৌঁছে পরিবহন সঙ্কটে নানা হয়রানির শিকার হয়। স্বল্পসংখ্যক বাস-ট্রাক ও পিকআপে গন্তব্যে রওনা দিতেও তাদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। ঈদের ছুটি শেষে গতকাল শুক্রবার এ দু’ঘাটে কর্মমুখী মানুষের ছিল উপচে পড়া ভিড়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছেÑ এসব অনিয়ম দেখার যেন কেউ নেই। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ‘অজ্ঞাত’ কারণে নিশ্চুপ থাকায় ভুক্তভোগী যাত্রীসাধারণেরা হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
শুক্রবার পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাটে সরজমিন দেখা গেছে, ঈদ ফেরত কর্মমুখী অগণিত যাত্রীর উপচে পড়া ভিড়। পরিবহন সঙ্কটের কারণে লোকজন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছে। এ সুযোগে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও অন্যান্য সংযোগ রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের এক শ্রেণীর মালিক-শ্রমিকেরা স্থানীয় নেতাকর্মীদের সহায়তায় কয়েক গুণ বেশি ভাড়ায় গাড়িতে যাত্রী তুলে দিচ্ছে।
অপর দিকে, পদ্মার ওপাড়ে দৌলতদিয়া ও কাজিরহাট থেকে এ পাড়ের পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে আসা প্রতিটি লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হচ্ছে। নদীতে অবৈধভাবে চলাচলরত ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও স্পিডবোটে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে কর্মমুখী মানুষ। এতে, নারী-শিশু যাত্রীদের বেশে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এ ছাড়া, ফেরিতে দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়ায় পার হয়ে আসা যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকেরা অভিযোগ করেন ফেরির ক্যান্টিনগুলোতে বাসিপচা খাবার বিক্রি হচ্ছে। দাম ও আদায় হচ্ছে তাদের ইচ্ছা মাফিক। ফেরির ভেতরে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে শৌচপাত্রের অভাবে অস্বস্তিতে পড়েছেন অনেকেই। ভেতরে শৌচপাত্র না থাকায় বাধ্য হয়ে পানির বোতল কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে। ফেরিতে বিশেষ কয়েকটি শৌচাগার তালাবদ্ধ থাকায় যাত্রীরা হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ বিষয়ে ফেরি কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তারা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সংস্থার প্রতিটি ফেরিতে যাত্রীসাধারণের জন্য পর্যাপ্ত টয়লেট ও লোকবল নিয়োজিত রয়েছে। তাতে প্রয়োজনীয় পানি ও শৌচপাত্র সরবরাহ করা হয়েছে।
এ দিকে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন বাস মালিক-শ্রমিকরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ মানতে নারাজ। তারা বলেন, আমরা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত একটি পয়সাও বেশি নিচ্ছি না। বছরের অন্যান্য সময়ে যাত্রীদের কাছ থেকে যে ভাড়া আদায় করে হয় তা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অর্ধেকেরও কম। নিয়ম মেনে ভাড়া আদায় করায় যাত্রীরা এমন অভিযোগ তুলছেন বলে তারা উল্টো অভিযোগ তোলেন।
পরিবহন মালিক পরিচয়ে নাম না প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে জানান, পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাটে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের নামে স্থানীয় নামধারী কিছু মালিক-শ্রমিকেরা প্রশাসনের সহায়তায় যাত্রীবাহী প্রতিটি পরিবহনের ট্রিপ প্রতি ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে। এ খরচ পুষিয়ে নেয়ার জন্যই যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
ঘাটসংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা জানিয়েছেন, যানবাহনের তুলনায় যাত্রীচাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘাট এলাকায় সাময়িক এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কোনো অভিযোগ এলে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তায় উভয় ঘাট এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/231986