২১ জুন ২০১৭, বুধবার, ২:৫৭

ভয়াবহ যানজটে অচল বন্দরনগরী : চরম দুর্ভোগ

ভয়াবহ যানজটে অচল হয়ে পড়েছে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে তীব্র যানজট। জটে আটকা পড়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে নগরবাসী। আমদানি-রফতানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। অচলাবস্থা ঈদ বাজারসহ ব্যবসা-বাণিজ্যেও। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যানজট স্থায়ী হচ্ছে। অসহনীয় যানজট অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এবারের রমজানে গতবারের তুলনায় নগরবাসীকে ৩০ শতাংশ বেশি স্বস্তি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল পুলিশ। যানজট কমাতে বেশকিছু নির্দেশনাও জারি করা হয়েছিল। তড়িঘড়ি করে খুলে দেয়া হয়েছে নগরীর সবচাইতে বড় ফ্লাইওভার মুরাদপুর ফ্লাইওভার। বিমানবন্দর সড়কে তিনটি সেতুও খুলে দেয়া হয় যান চলাচলের জন্য। এতকিছুর পরও স্বস্তি মিলেনি। তীব্র যানজটে অচল হয়ে পড়েছে গোটা নগরী।

যানজটে আটকা পড়ে রোজাদারদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ ইকবাল বাহার অসহনীয় যানজটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, যানজট সহনীয় করতে আমাদের প্রচেষ্টার কোন ত্রæটি নেই। আমরা চেয়েছিলাম নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব হচ্ছে না। নির্বিচারে রাস্তা কাটাকাটি, পাহাড়ী ঢল ও জোয়ারে রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য হওয়া এবং তার উপর ঈদ সামনে রেখে নগরীতে অতিরিক্ত যানবাহনের ঢলকে দায়ী করেন তিনি। তিনি বলেন, এতসব সংকটের মধ্যেও আমরা চেষ্টা করছি যানজট কমাতে, নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে।
গতকাল নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি সড়কেই তীব্র জট। বারিক বিল্ডিং থেকে আগ্রাবাদ বাদামতল পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক পার হতে এক ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগেছে। মহানগরীর প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলিতেও ছিল তীব্র জট। কোন কোন সড়কে যানজট এখন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। বড় বড় মার্কেট ও বিপণি কেন্দ্রগুলোকে ঘিরে তীব্র জটের কারণে ঈদ বাজারের কেনাকাটাও ব্যাহত হচ্ছে। ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কেনাকাটায় বের হয়ে যানজটে আটকা পড়ছে লোকজন।
মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর বেশিরভাগ সড়কে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় প্রতিটি সড়কে চলছে ওয়াসা পাইপ লাইন বসানোর কাজ। একদিকে বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢল অন্যদিকে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি মহানগরীর বেশিরভাগ সড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। খানাখন্দে যানবাহন আটকে জট লেগে যাচ্ছে। সামনের ঈদের লম্বা ছুটি। আর এ কারণে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ভারী যানবাহনের ঢল। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে মহানগীর বিশাল এলাকা তীব্র যানজট গভীর রাত পর্যন্ত স্থায়ী হচ্ছে।
ঈদ সামনে রেখে মহানগরীর প্রায় প্রতিটি ফুটপাত এমনকি সড়কও দখল করে নিয়েছে হকাররা। অন্যদিকে বৈধ ও অবৈধ রিকশার সাথে ঈদ সামনে রেখে অন্তত ৫০ হাজার মৌসুমি রিকশা নেমেছে রাস্তায়। মহানগরীতে চলাচলকারী বৈধ-অবৈধ ২৫ হাজার অটোরিকশার সাথে আরও কয়েক হাজার অটোরিকশা আসছে জেলা থেকে। আছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও টমটমের জোয়ার। সব মিলিয়ে মহানগরীর সড়কগুলো এখন যানবাহনে ঠাসা। যানজটের সাথে সড়কে চলছে জনজট। হাঁটার সব পথ দখল হয়ে গেছে। যানজটে অতিষ্ট লোকজন গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছতেও নানা বেগ পেতে হচ্ছে।
মহানগরীর বাস টার্মিনাল গুলোতে চরম বিশৃঙ্খলা। তীব্র যানজটের মধ্যে রাস্তায় বড় বড় বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছে। যানজট কমাতে ফ্লাইওভার চালু করা হলেও এর সুফল মিলছে না। নগরীর কদমতলী ও বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার এলাকায় দেখা যায় ফ্লাইওভারের নিচে তীব্র যানজট। অথচ ফ্লাইওভারে হাতেগোনা কিছু গাড়ি চলছে। এক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকাও নির্লিপ্ত। ট্রাফিক পুলিশ ইচ্ছে করলে কিছু যানবাহন ফ্লাইওভারের দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু তারা তা করছে না। যানজট কমাতে তড়িঘড়ি করে মুরাদপুর ফ্লাইওভার খুলে দেয়া হলেও সেখানে যানজট কমেনি। ফ্লাইওভারের একাংশে যানবাহন চলছে সীমিত আকারে। র্যাম্প বা মাঝপথে উঠানামার সড়ক তৈরী না হওয়ায় ওই ফ্লাইওভারে গণপরিবহন চলছে না। মহানগরীর ভিআইপি সড়ক খ্যাত বিমানবন্দর সড়কে নির্মাণাধীন তিনটি ব্রিজ যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। তবে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ওই সড়কে তীব্র যানজট হচ্ছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে দিনের বেলায় বন্দর এলাকার বাইরে ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হলেও তা মানা হচ্ছেনা। ট্রাফিক পুলিশের সামনে চলছে ভারী যানবাহন। যত্রতত্র বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রীও তোলা হচ্ছে। বলা হয়েছিল কাউন্টারের সামনে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলা যাবে না। মহানগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে দূরপাল্লার বাসে যাত্রী উঠানামা চলছে পুলিশের সামনে। দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় ভারী যানবাহন সীমিত করারও নির্দেশনা ছিল পুলিশের পক্ষ থেকে। এসব নির্দেশনার কোনটিই বাস্তবায়ন হচ্ছেনা।

https://www.dailyinqilab.com/article/84649/