১৫ জুন ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:৪৪

বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ফের পাহাড় ধসের আশঙ্কা

পাবর্ত্য চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টিপাত চলতে থাকলে আবারও পাহাড় ধস হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভূ-তত্ত্ববিদরা। তারা বলছেন, আবহাওয়া অধিদফতর থেকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি মাঝারি ধরনের বর্ষণের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বৃষ্টিপাত হয়েছে। এভাবে বৃষ্টিপাত চলতে থাকলে আবারও পাহাড় ধস হতে পারে।


এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মু. মুস্তাফা আলম ‘ইত্তেফাক’কে বলেন, আমাদের পাহাড়গুলো পাললিক শিলার পাহাড়। অর্থাত্ পাহাড়ের মাটি মূলত কাদা ও বালুর মিশ্রণে তৈরি। ফলে ভারী বৃষ্টিপাত হতে থাকলে বেডিং প্লেইন দিয়ে পানি ঢুকে মাটির স্তর পিচ্ছিল হয়ে যায়। তখন মধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে মাটি ধসে পড়ে। পাবর্ত্য অঞ্চলে পাহাড়ের মাটি কেটে ফেলা এবং গাছপালা কেটে বন নিধন করায় পাহাড়ের স্তরগুলোর মধ্যে সহজেই পানি ঢুকে যায় বলে উল্লেখ করেন তিনি। ড. মু. মুস্তাফা আলম বলেন, পাহাড় ধস কংক্রিটের কোনো বাঁধ দিয়েও আটকে রাখা সম্ভব নয়। বরং এখন যেভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে এভাবে বৃষ্টিপাত চলতে থাকলে আবারও পাহাড় ধস হতে পারে। আর ভূমিকম্প হলে পাহাড় ধসের আশঙ্কা আরো বেশি। তাই প্রাণহানি রোধ করতে মানুষকে সচেতন করতে হবে।

ভূ-তত্ত্ববিদরা বলছেন, যারা পাহাড়ে থাকেন তারা ঘর নির্মাণ ও রাস্তা তৈরির জন্য পাহাড়ের উপরের দিকের মাটির শক্ত স্তর কেটে ফেলেন। তাছাড়া পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বড়গাছ কেটে সেখানে জুম চাষ করার কারণে বৃষ্টির সময় পাহাড়ের মাটি আটকে রাখার প্রাকৃতিক পদ্ধতিও ব্যাহত হচ্ছে। ভূ-তাত্ত্বিকরা বলছেন, একদিকে পাহাড়ে কঠিন শিলা নেই তার উপর উপরের দিকের শক্ত মাটির স্তরও কেটে ফেলা হচ্ছে। এতে পাহাড় অনেক ক্ষেত্রে ৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঢালু হয়ে যায়। অথচ পাললিক শিলার পাহাড় ৩০ ডিগ্রি ঢালু হলেই সেখানে ধসের আশঙ্কা থাকে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি মো. মাহফুজুল হক ‘ইত্তেফাক’কে বলেন, আমাদের দেশে পাহাড় ধসের সাথে বৃষ্টিপাতের যোগসূত্র অনেক বেশি। কারণ টানা বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ের অভ্যন্তরে পানি জমে যায়। এতে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়, পাহাড় ধসে পড়ে। সিলেটের পাহাড় নিচু ও ঢাল কম হওয়ায় সেখানে আশঙ্কা কম; কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড় অনেক উঁচু ও ঢালু হওয়ায় এখানে পাহাড় ধসের আশঙ্কা অনেক বেশি। মো. মাহফুজুল হক বলেন, পাহাড় ধসের আগাম বার্তা পাওয়ার জন্য আমাদের উন্নতমানের প্রযুক্তি রয়েছে। এর মাধ্যমে আগে থেকেই পাহাড় ধসের আশঙ্কা-বার্তা পাওয়া যায়; কিন্তু পাহাড়ে যারা বসবাস করেন তারা বাড়ি-ঘর ছেড়ে যেতে চান না। ফলে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তারাও জানেন এখানে পাহাড় ধসের শঙ্কা রয়েছে, তাদেরকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্ক করার পরও তারা যেতে চায় না। এক প্রশ্নের জবাবে মো. মাহফুজুল হক বলেন, ভূমিকম্প হলে পাহাড় ধসের আশঙ্কা থাকে। তবে ভূমিকম্পের বিষয়টি আগে থেকে সতর্ক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখন আবার সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর সতর্কতা দেওয়ায় ভারী বৃষ্টিপাত হতে থাকলে আবারও পাহাড় ধস হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/first-page/2017/06/15/202688.html