মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার প্রায় এক বছর ধরেই বন্ধ হয়ে আছে। আদৌ দেশটির শ্রমবাজার খুলবে কি না তারও নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছে না। কিন্তু রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে কর্মীর বহির্গমন ছাড়পত্র প্রক্রিয়া করানোর অনুমোদন প্রতিনিয়ত দেয়া হচ্ছে। এসব নিয়োগানুমতি দেয়ার ফলে বিদেশগামী কর্মীরা কোনো না কোনোভাবে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন বলে মনে করছেন অভিবাসন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক (বহির্গমন) উপসচিব মামুন সরদার স্বাক্ষরিত বহির্গমন ছাড়পত্র প্রক্রিয়া করার অনুমতি প্রদান সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয় নয়া পল্টনের অর্কার্ড ফারুক টাওয়ারের জেইআর এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির স্বত্বাধিকারী রানা বকুলের কাছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, রিক্রুটিং এজেন্সি (আরএল-১২৭৪) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শর্তসাপেক্ষে মালয়েশিয়ায় চারজন পুরুষ কর্মীর বহির্গমন প্রক্রিয়াকরণের অনুমতি নির্দেশক্রমে প্রদান করা হলো।
জানা গেছে, মালয়েশিয়ার কিলাং সিলানগর এলাকার ইনোভেনস পাম ইন্ডাস্ট্রিজ এসডিএন বিএসডি কোম্পানিতে অয়েল পাম প্লানটেশন পদে চারজন কর্মী নিয়োগ দেয়া হবে। বেতন হবে ১৫ শ’ রিংগিট। চুক্তির মেয়াদ হবে তিন বছর। কর্মীর বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। কর্মঘণ্টা হবে ৮। ওভারটাইম চিকিৎসা ও চাকরির অন্যান্য শর্ত মালয়েশিয়ার শ্রম আইন অনুযায়ী প্রযোজ্য হবে। অভিবাসন ব্যয় হবে ৪১ হাজার ২৪০ টাকা।
শর্তের মধ্যে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে রিক্রুটিং এজেন্সিকে অবশ্যই বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়া উভয় দেশের বিধিবদ্ধ আইন অনুসরণ করতে হবে। এ ছাড়া চুক্তিপত্রের শর্ত লঙ্ঘন হবে না, অনুমোদিত কর্মীরা উক্ত কোম্পানিতে চাকরি পাবেন প্রত্যেক কর্মীকে প্রস্তাবিত বেতনভাতা, আবাসন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে এবং কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মীর থাকা-খাওয়ার খরচ ও প্রত্যাবর্তন ব্যয়সহ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আরোপিত ক্ষতিপূরণ প্রদানে রিক্রুটিং এজেন্সি বাধ্য থাকবে মর্মে ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা দাখিল করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
শুধু রিক্রুটিং এজেন্সি জেইআর এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি না, এর আগে ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর রিক্রুটিং এজেন্সি রোজল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-২৬৭৬) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যুরো থেকে ৫০ জন কর্মীর নিয়োগানুমতি শর্তসাপেক্ষে প্রদান করা হয়। এরও আগে রিক্রুটিং এজেন্সি আর এল (২৭২২ এবং ২৭০৯)সহ বেশ কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সির আবেদনের বিপরীতে জনশক্তি ব্যুরোর বহির্গমন শাখা থেকে কর্মীর বহির্গমন প্রক্রিয়া করার জন্য নিয়োগানুমতি প্রদান করা হয়।
গতকাল রাতে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে ব্যবসায়ী রাজীব নয়া দিগন্তকে বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ২০২৪ সালের মার্চের পর থেকে এখনো বন্ধ হয়ে আছে। এই বছর খুলবে বলে মনেও হচ্ছে না। যেখানে শ্রমবাজার বন্ধ সেখানে কর্মী নিয়োগের বহির্গমন প্রক্রিয়াকরণের প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি না। হতে পারে এগুলো আগের প্রসেস করা। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগের প্রসেস করা কর্মীদের কেউই কিন্তু এখনো মালয়েশিয়াতে আসতে পারেনি। যদিও ঘোষণা দেয়া হয়েছিল ১৮ হাজার শ্রমিক মালয়েশিয়াতে আসতে পারবে। আজকে পর্যন্ত একজনও আসেনি। মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশের কর্মী আনার বিষয়ে মুখে কুলুপ এটেছে। কিছু বলছে না। আর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার যে সিন্ডিকেটে জিম্মি ছিল সেই আমিন নুরেরও কোনো আওয়াজ পাচ্ছি না। তিনি বেশির ভাগ সময় সিঙ্গাপুর ও দুবাইতে থাকেন বলে শুনছি।
উল্লেখ্য, গত ২০২৪ সালের মার্চ মাসে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশী কর্মীদের নামে কলিং ভিসা ইস্যু বন্ধের ঘোষণা দেয়। যদিও ঢাকা থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র হওয়া কর্মীদের মালয়েশিয়ায় যেতে ৩১ মে পর্যন্ত ফ্লাই করার সময় বেঁধে দেয়। এই সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়ায় যেতে পারেনি প্রায় ৩০ হাজারের মতো শ্রমিক। তার মধ্যে ১৮ হাজার শ্রমিকের বহির্গমন ছাড়পত্র হয়ে গিয়েছিল। বাকিদের কলিং ভিসা হলেও বহির্গমন ছাড়পত্র হয় নাই। মূলত শ্রমবাজারে দু’টি সিন্ডিকেটের জটিলতার কারণে এসব শ্রমিককে চরম মূল্য দিতে হয়েছে বলে অভিবাসন ব্যবসার সাথে সম্পৃক্তরা মনে করছেন। এরপর অনেক চেষ্টা চালানোর পরও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কোন বাংলাদেশী শ্রমিক আজো যেতে পারেননি। দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে হওয়ার পর কি সিদ্ধান্ত নেয়া হলো সে ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কেউ কিছু বলতে পারছেন না। যার কারণে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।
অভিবাসন ব্যবসায়ীরা বলছেন, যদি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলেও সেই বাজারে কোনোভাবেই যেন আর কেউ সিন্ডিকেট করতে না পারে সেই ব্যাপারে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণকারী দুই সিন্ডিকেটের সদস্যরা এখন এক হওয়ার চেষ্টা করছেন। তাদের মধ্যে মিটিং অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
https://www.dailynayadiganta.com/printed-edition/eUhSEyzm5fuj/