৩ জুন ২০১৭, শনিবার, ১০:৫৪

টিআইএন লাগবে ৩১ কাজে

আগামী অর্থবছরে আরও বেশি মানুষ করজালে আসবেন। ৩১ ধরনের কাজের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে ১২ ডিজিটের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই তালিকায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসা, মোবাইল ব্যাংকিং, পরিবেশক এজেন্সি, বিভিন্ন ধরনের পরামর্শক, ক্যাটারিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, জনবল সরবরাহ ও সিকিউরিটি সার্ভিস। এমনকি আমদানি-রপ্তানির বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে হলেও টিআইএন লাগবে। টিআইএন ছাড়া এখন থেকে এসব ব্যবসা করা যাবে না।

পাড়া-মহল্লায় হাজার হাজার তরুণ মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসা করেন। এটা কর্মসংস্থানের নতুন খাত হয়ে গেছে। ওই সব তরুণের অনেকেই মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসা করেন। এ জন্য তাঁরা সংশ্লিষ্ট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে এজেন্টশিপ নেন। এবার তাঁদের টিআইএন নিতে হবেই। টিআইএন ছাড়া এই ধরনের ব্যবসা করা যাবে না।
আবার বিভিন্ন কোম্পানি নিজেদের পণ্য ও সেবা বেচাকেনার জন্য দেশজুড়ে পরিবেশক বা এজেন্ট নিয়োগ দেয়। এই এজেন্ট ও পরিবেশকদেরও এখন টিআইএন নেওয়া বাধ্যতামূলক। আবার একজন ব্যক্তি যদি কোনো প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শ সেবা, খাবার সরবরাহ, ইভেন্ট ম্যানেজ সেবা, জনবল সরবরাহ এবং নিরাপত্তা সেবা (সিকিউরিটি সার্ভিস) দেন; তাহলে ওই ব্যক্তিকে অবশ্যই টিআইএন নিতে হবে।
কিছু ব্যবসা বা কাজ করতে কিংবা পেশাজীবীদের টিআইএন থাকা আগে থেকেই বাধ্যতামূলক। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ঋণপত্র স্থাপন, রপ্তানি নিবন্ধন সনদ নেওয়া, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া বা পুনর্নিবন্ধন, দরপত্র জমা, অভিজাত ক্লাবের সদস্যপদ গ্রহণ, বিমা জরিপ প্রতিষ্ঠান, জমি, ভবন ও ফ্ল্যাট নিবন্ধন, মোটরসাইকেল-বাস-ট্রাকের মালিকানা পরিবর্তন ও ফিটনেস নবায়ন, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, হিসাববিদসহ বিভিন্ন ধরনের পেশাজীবী সংগঠন সদস্য, কোম্পানির পরিচালক ও স্পনসর শেয়ারহোল্ডার, বিবাহ নিবন্ধনকারী বা কাজি, ড্রাগ লাইসেন্সধারী।
এ ছাড়া বরাবরের মতো জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হলে ভবন নকশা অনুমোদনে, বাণিজ্য সংগঠনের সদস্য, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ঋণ নিলে, ক্রেডিট কার্ড থাকলে, বাণিজ্যিক গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ চাইলে টিআইএন থাকতে হবে। আবার ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে চাইলে অভিভাবকের টিআইএন লাগবে। সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার মূল বেতন ১৬ হাজার টাকার বেশি হলেও টিআইএন লাগবে। এমনকি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন ১৬ হাজার টাকার বেশি হলেও টিআইএন নিতে হবে।
করদাতার স্বস্তিও মিলবে
সর্বজনীন পদ্ধতিতে আপনি রিটার্ন জমা দিয়ে ফেলেছেন। ভাবনার বিষয় কোথাও ভুল কি না, রিটার্ন নিরীক্ষায় ফেলা হলো কি না। আপনার দুশ্চিন্তা কাটছে না। আপনার মতো এমন করদাতার জন্য এবারের বাজেটে কিছুটা স্বস্তি দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আয়কর অধ্যাদেশের ৮২ বিবি ধারা সংশোধন করার প্রস্তাব করা হয়েছে
এই ধারাটি সংশোধন করায় করদাতারা স্বস্তি পাবেন। যেমন আপনি রিটার্ন জমা দিয়ে ফেলেছেন। এরপর কর কর্মকর্তা খুঁজে পেলেন আপনার রিটার্নে কিছু ভুল আছে। এমন পরিস্থিতিতে কর কর্মকর্তা ওই করদাতাকে এই ভুলটি জানিয়ে চিঠি দেবেন। ওই করদাতা ভুল সংশোধন করে পুনরায় রিটার্ন জমার সুযোগ পাবেন।
কর কর্মকর্তা রিটার্ন বিবরণী নিরীক্ষা করে কিছু না পেলে কর পরিমাণ পুনর্মূল্যায়ন করতে পারবেন না। যদি নিরীক্ষায় কর পাওনা হয়, তবে ওই করদাতাকে চিঠি দিয়ে কর দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। ওই করদাতা পুনরায় সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করে কর দিতে পারবেন।
কোনো করদাতা যদি আগের বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি কর দেন; তবে ওই করদাতার কর নথি নিরীক্ষায় ফেলা যাবে না। এত দিন ২০ শতাংশের বেশি কর দিলে এই সুবিধা ভোগ করতেন করদাতারা।

http://www.prothom-alo.com/economy/article/1202936/