রাজধানীসহ সারা দেশেই প্রতিদিন ডেঙ্গুতে মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিয়মিত ওষুধ স্প্রে করলেও ৯০ শতাংশ এলাকা মশার ওষুধের বাইরে থেকে যাচ্ছে।
ঢাকার কিছু এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানো যায় না, কিছু এলাকায় মশক নিধন কর্মীদের যাওয়ার অনুমতিও নেই। এ ছাড়া দুই সিটির প্রায় ৭৫০ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট এবং কাভার্ড ড্রেনেও মশার ওষুধ পৌঁছানো যাচ্ছে না।
এদিকে দেশে গত এক দিনে ডেঙ্গুতে আরো সাতজনের মৃত্যু হয়েছে; এ সময়ে রোগটি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫৯৬ জন। এ নিয়ে চলতি বছর হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯৬ হাজার ২২৮। আর মৃত্যু হয়েছে ৫২৯ জনের।
গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির এমন তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু সিটি করপোরেশনের তৎপরতায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। নাগরিক সচেতনতার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারিসহ দায়িত্বশীল সব প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত হতে হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে মশক নিধনকর্মী যাওয়ার অনুমতি নেই। ওই সব প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের নিজেদেরই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কথা, যা তারা করছে না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল কবির বলেন, ‘সিটি করপোরেশন ওষুধ স্প্রে করে সড়কের পাশে, নালা-নর্দমায়। কিউলেক্স মশার ক্ষেত্রে আমাদের এই মশক নিধন কার্যক্রম ৯০ শতাংশ কাজ করে। আর ১০ শতাংশ মানুষের সচেতনতাই যথেষ্ট হয়। যেহেতু নর্দমাসহ খোলা জায়গায় মশা দেখা যায়। কিন্তু এডিস মশার ক্ষেত্রে সেটি সম্পূর্ণ উল্টো।
আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা এখানে ১০ শতাংশ কাজ করে। বাকি ৯০ শতাংশই মানুষের সচেতনতার ওপর নির্ভর করে।’
এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘সাধারণত এডিস মশা জন্মায় ভবনের এসি ও ফ্রিজের জমা পানি, ছাদবাগানে, বিভিন্ন টবে, ভবনের আশপাশে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে। আর এসব স্থানেই করপোরেশন ওষুধ স্প্রে করতে পারে না। কারণ ভবন মালিকরা ভবনে ঢোকার অনুমতি দেয় না। এ ছাড়া দুই ভবনের মধ্যবর্তী জায়গাগুলো এমনভাবে সংরক্ষণ করা হয়, সেখানে কেউ যেতে পারে না। ওই সব স্থানে এডিস মশা জন্মায়। নাগরিকরা সচেতন না হলে সিটি করপোরেশনের একক চেষ্টায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আমরা মানুষকে সচেতন করছি।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে কিউলেক্স মশা এবং এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম দুই রকম। বর্তমান সিটি করপোরেশনগুলোর কার্যক্রম কিউলেক্স নিয়ন্ত্রণের জন্য ঠিক থাকলেও কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আসবে, এটা ঠিক নয়। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আনতে তার উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করতে হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি রাজধানীর খিলগাঁও, বনশ্রী, রামপুরা, লালবাগ, আজিমপুর, শহীদনগর, কামরাঙ্গীর চর, হাজারীবাগ, জুরাইন, মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের হাজারীবাগ, ৫৩ ও ৬০ নম্বর ওয়ার্ডের কদমতলী ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সবুজবাগে ডেঙ্গু রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এসব এলাকায় বিশেষ অভিযানের পাশাপাশি স্থানীয় নাগরিকদের কর্মস্থলে না গিয়ে নিজের বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার করার জন্যও অনুরোধ জানিয়েছে ডিএসসিসি।
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৭ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৫৯৬
দেশে গত এক দিনে ডেঙ্গুতে আরো সাতজনের মৃত্যু হয়েছে; এ সময়ে রোগটি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৯৬ জন।
গতকাল ভর্তি রোগীদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৯৮ জন, ঢাকা বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রামে ৬৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩২ জন, খুলনায় ৭২ জন, বরিশাল বিভাগে ৩১ জন, ময়মনসিংহে ২০ জন, রংপুর বিভাগে আটজন এবং সিলেট বিভাগে দুজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
গত এক দিনে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের তিনজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে, উত্তর সিটি করপোরেশনে একজন। এ ছাড়া ঢাকা, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগের হাসপাতালে একজন করে মারা গেছে।
এ বছর মোট ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৫৭ হাজার ৪৪৩ জন ঢাকার বাইরের রোগী। ঢাকার দুই মহানগর এলাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৮ হাজার ৪৮৫ জন।
এ বছর সবচেয়ে বেশি ৩০ হাজার ৮৭৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছে অক্টোবর মাসে। ওই মাসে ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এক মাসে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে নভেম্বরে, ১৭৩ জন। নভেম্বরে ২৯ হাজার ৬৫২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।