সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ, গ্যাসের মজুদ দিন দিন ফুরিয়ে আসছে। কিন্তু নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার হচ্ছে না। এ কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ছে। এমনিতেই পতিত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে হরিলুট হয়েছে। লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। কিছু ব্যাংক খালি করে ফেলা হয়েছে। ডলার সঙ্কটের কারণে উচ্চমূল্যের এলএনজিসহ এখন প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানি করা যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় পরিবেশ বান্ধব সৌর শক্তি ব্যবহার করে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো গেলে সঙ্কট অনেকাংশেই কেটে যাবে।
এ বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র ইলেকট্রিক্যাল প্ল্যানিং ইঞ্জিনিয়ার ও ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ইসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো: ইস্কান্দার আলী খান বলেছেন, তিনি জানতে পেরেছেন বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ইতোমধ্যে বিগত সরকারের আমলে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৩১টি বেসরকারি কোম্পানিকে বাতিল করেছেন। কারণ হিসেবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটারি কমিশনের (বিইআরসি) সাথে অনেক বেশি হারে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি হয়েছিল। এতে জনগণের উপকার না হয়ে কোম্পানিগুলো লাভবান হতো। আর এখন থেকে সরকার ও বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। কিন্তু তা করলে বিদ্যুৎ সমস্যা দীর্ঘায়িত হবে। সরকার বা বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানির যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে অনেক সময় প্রয়োজন। তা ছাড়া দুর্নীতি, বৈদেশিক ঋণপ্রাপ্তি, ব্যয় বৃদ্ধি ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হবে। ফলে মানুষ কোনো সুবিধা ভোগ করতে পারবে না। বরং পিপিএ (পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট) এর ধারা সংশোধন করে বেসরকারি পর্যায়ে হস্তান্তর করতে হবে। তিনি বলেন, পিপিএ এমনভাবে সংশোধন করা উচিত যাতে কোনো প্রাইভেট কোম্পানি এবং বিইআরসি অবৈধভাবে উচ্চ হারে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি করতে না পারে।
তিনি জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি বাড়িতে সৌর বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। যখন তার নিজের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো হয়, তখন বাড়ির মালিক অতিরিক্ত সৌর বিদ্যুৎ পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কাছে বিক্রি করেন। পাকিস্তানে মোট বিদ্যুতের চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ সৌর বিদ্যুৎ থেকে উৎপন্ন হয়। ভিয়েতনামের মোট উৎপাদিত সৌর বিদ্যুৎ বাংলাদেশের মোট চাহিদার প্রায় সমান।
তিনি বলেন, সৌর শক্তি পরিবেশবান্ধব এবং এর কোনো অপারেটিং খরচ নেই। আমরা যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করি তাকে বলা হয় এসি
(অল্টারনেটিং কারেন্ট)। এটা সংরক্ষণ করা যাবে না, তবে এটি দিয়ে ব্যাটারি চার্জ করে সৌরশক্তি সংরক্ষণ করা যায়। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ার মতো আমাদের উচিত প্রতিটি বাড়িতে সৌর বিদ্যুৎ তৈরি করা এবং অতিরিক্ত শক্তি ইউটিলিটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করা। সরকারকে এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এ জন্য গ্রিড অস্থিরতা একটি সমস্যা হতে পারে। তবে, সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই সমস্যা সহজেই সমাধান করা যাবে বলে তিনি মনে করেন।