৩১ মে ২০১৭, বুধবার, ১১:১২

সংসদে কাজী ফিরোজ রশিদের প্রশ্ন

ব্যাংকের শত শত কোটি টাকা লুট করল কারা?

ব্যাংক সেক্টরের সীমাহীন দুর্নীতি এবং দেশে সুশাসনের অভাব নিয়ে মঙ্গলবার সংসদে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ। ঢাকা-৬ (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) আসন থেকে নির্বাচিত এ সংসদ সদস্য বলেন, সরকারি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির টাকা তো জনগণের টাকা। কিন্তু এসব টাকা লুটপাটকারীদের আজও চিহ্নিত করা হয়নি। এ ছাড়া তিনি ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন ছাড়াও সংসদে নিজ দলের দ্বৈত অবস্থান নিয়েও ক্ষোভ-হতাশা প্রকাশ করেন। প্রশ্ন তোলেন সুশাসন নিয়ে।
জাতীয় সংসদের ১৬তম অধিবেশনে (বাজেট অধিবেশন) শুরুর প্রথমদিন পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ব্যাংকের শত শত কোটি টাকা লুট হয়ে গেল। কোনো কিছু বের করতে পারল না। ব্যাংকের ওপর মানুষের কোনো বিশ্বাস নেই। একদিন পরেই বাজেট আসছে। এই যে ঘাটতি- এ ঘাটতি জনগণ কেন মিটাবে? এই টাকা তো জনগণের টাকা। কারা লুটপাট করছে? কারা এ জন্য দায়ী? আজ পর্যন্ত তার কোনো হিসাব পেলাম না। আমরা সংসদে কথা বলি, অথচ সংসদে অর্থমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থাকেন না। আমাদের কথা আকাশ শোনে, জনগণ শোনে। তিনি বলেন, ব্যাংকের ভয়াবহ অবস্থা। কৃষি, বেসিক, সোনালী, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকে বড় ধরনের মূলধন ঘাটতি। তাহলে ব্যাংক চলবে কী করে?
কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, জনগণ আমাদের বিরোধী দল মনে করে না। মনে করবেই বা কি করে। আমরা কথা বলতে পারি না। আমি ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারি না। তিনি আরও বলেন, সরকার হিমালয়ের উপরে উঠে যদি মনে করে আকাশ খুব কাছে। আসলে আকাশ তো কাছে না। সরকার মনে করছে জনগণ খুব কাছে, আসলে জনগণ তো কাছে না। জনগণ কারও না। জনগণ এইগুলো দেখে। দেখে একজনকে বেছে নেয়। সামনে নির্বাচন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, দেশের কোথাও সুশাসনের ইঙ্গিত পাচ্ছি না। এটা কিসের আলামত? আমরা চুপ করে থাকি। আমরা কথা কম বলি। আমাদের বিরোধী দল বলেন, আর সরকার বলেন। আমাদের কী মনে করেন আমরা জানি না। জনগণ আমাদের বিরোধী দল মনে করে না। এখানে আমার নেত্রী বসা আছেন, আমি বেশি কিছু বলতে চাই না। আপনি (স্পিকার) আমাদের কী মনে করেন সেটাই আমাদের প্রশ্ন। জনগণ আমাদের বিরোধী দল মনে করে না, কারণ আমরা কথা বলতে পারি না। ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আমার দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারি না। কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ক্ষমতায় থাকলে দুটি জিনিসের অভাব হয় না। উপদেশ দেয়া আর চাটুকার তোষামোদকারী এবং বাঁশ দেয়া।
তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র চলছে। অবাধ গণতন্ত্র যে যা ইচ্ছা বলতে পারছেন। কিন্তু আসল ঘটনা কী- সুশাসন আছে? কোথাও সুশাসন নেই। সুশাসন থাকলে এই অরাজকতা চলত না। আজ সর্বক্ষেত্রে অরাজকতা। আমরা যাব কোথায়? এই সংসদে যা কিছু বলতে পারি বাইরে তার থেকেও কম বলি। কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, আজ বাংলাদেশ ব্যাংক যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেটা ভয়াবহ। অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। এই লুটপাট সরকারের পাশের লোক না হলে কেউ করতে পারে না। এখানে কেউ লুটপাট করতে পারে না। এখন কথায় কথায় বলে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। যেখানে যাবেন শুধু চেতনা জাগে। সরকার ক্ষমতায় এলেই এসব লোকের চেতনা জাগে। চেতনার অভাব হয় না। সরকারকে পরামর্শ দেয়া, বাঁশ দেয়ার লোকের অভাব হয় না। সব টাকা কুক্ষিগত করছে একটি মহল। ভিওআইপির নামে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

http://www.jugantor.com/first-page/2017/05/31/128750/