১৪ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৮:২০

পিডির হিসাবে বরাদ্দের ১৭ কোটি টাকা

মেঘনা নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি এনে তা শোধন করে রাজধানীবাসীর চাহিদা পূরণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার। সেই বরাদ্দের ১৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ওয়াহিদুল ইসলাম মুরাদ নিজের ব্যাংক হিসাবে নিয়ে ফায়দা লুটেছেন। সম্প্রতি প্রকল্প কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফজলুর রহমানের নজরে আসে বিষয়টি। প্রকল্প পরিচালকের এমন কাণ্ডকে চাকরিচ্যুতি হওয়ার মতো অপরাধ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জানা যায়, রাজধানীর পানি সংকট মেটাতে ২০১৩ সালের অক্টোবরে ‘ঢাকা এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প’ হাতে নেয় ঢাকা ওয়াসা। এ জন্য খরচ ধরা হয় ৮ হাজার ১৪৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৫ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাকি ২ হাজার ৬৫৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার সংস্থান করছে বাংলাদেশ সরকার। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে বলে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।

গেল ২১ অক্টোবর ঢাকা ওয়াসার সম্মেলন কক্ষ শীতলক্ষ্যায় ওয়াসার এমডি ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা ডাকা হয়। তখন এই প্রকল্পের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন ডেপুটি চিফ প্ল্যানিং অফিসার কাজী মো. ফারুক হোসেন। আর্থিক হিসাব-নিকাশের অধ্যায়টি ফারুক হোসেন দ্রুততার সঙ্গে উপস্থাপনের চেষ্টা করলে এমডি ফজলুর রহমানের সন্দেহ হয়। তখন তিনি প্রতিটি স্লাইড নতুন করে দেখলে বিষয়টি ধরা পড়ে।

ওই সভায় উপস্থাপন করা কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ প্রকল্পে সরকারের বরাদ্দ ছিল ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৫০ কোটি টাকা সরকার ছাড় করে। গত অর্থবছরের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের জন্য খরচ করা হয় ২৩৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। বাকি ১৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা রয়ে যায়। নিয়ম অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ছাড়ের পুরো টাকা খরচ না হলে ৩০ জুনের মধ্যে বাকি অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত পাঠাতে হবে। প্রকল্প পরিচালক ওয়াহিদুল ইসলাম মুরাদ ওই অর্থ ফেরত না পাঠিয়ে তাঁর ব্যাংক হিসাবে রেখে দেন।

ওই সভায় উপস্থিত থাকা এক কর্মকর্তা জানান, অব্যবহৃত টাকা ৩০ জুনের মধ্যে ফেরত পাঠানোর কারণ হলো, সরকারকে পরের অর্থবছরের জন্য আর্থিক পরিকল্পনা করতে হয়। নতুন পরিকল্পনা নেওয়ার ক্ষেত্রে কী পরিমাণ টাকা রক্ষিত আছে, তা সরকারকে জানতে হয়। যে কারণে এমন অর্থ ফেরত না দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ।

আরেক কর্মকর্তা জানান, সভায় বিষয়টি ধরা পড়ার পর ওয়াহিদুল ইসলাম মুরাদ বলেছিলেন, সাবেক এমডি তাকসিম এ খানের আমলে অন্য প্রকল্পের পরিচালকরাও এভাবে সরকারকে টাকা ফেরত না দিয়ে ব্যাংক হিসাবে রেখে দিয়েছেন। পরের অর্থবছরে সেই টাকা খরচ করা হয়েছে। এ জন্য তিনিও অব্যয়িত টাকা রেখে দিয়েছিলেন। তিনি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে ভবিষ্যতে এ রকম আর হবে না বলে প্রতিজ্ঞা করেন।

আরেক কর্মকর্তা বলেন, যখন দেখা যায় বরাদ্দের পুরো টাকা খরচ করা হয়নি, সরকারকেও ফেরত দেওয়া হয়নি, তখনই বিষয়টি ধরা পড়ে।

এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক ওয়াহিদুল ইসলাম মুরাদের দপ্তরে গিয়ে তাঁর মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তবে তাঁর যাতে বড় কোনো ক্ষতি না হয়, সে ব্যাপারে এ প্রতিবেদকের সহযোগিতা চান।

ঢাকা ওয়াসার এমডি ফজলুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সমকালকে বলেন, ওই ঘটনার পর মেঘনা থেকে পানি সরবরাহ প্রকল্পের সব কাগজপত্র তিনি নিজে যাচাই-বাছাই করবেন বলে প্রকল্প পরিচালককে জানিয়ে দিয়েছেন। অনিয়ম করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, পিডি ওয়াহিদুল ইসলাম মুরাদ ঢাকা ওয়াসার দাপুটে এমডি তাকসিম এ খানের লোক হিসেবে পরিচিত। এ জন্য এক যুগ ধরে তিনি যা খুশি তাই করেছেন। টঙ্গীতে একটি সাততলা বাড়িসহ অঢেল সম্পত্তি বানিয়েছেন তিনি। তাকসিম জমানার অবসান হলেও ওয়াসার তিনি বড় প্রকল্পের পিডি হিসেবে বহাল আছেন।

https://samakal.com/capital/article/265087