২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শনিবার, ৩:০২

বিক্রির চাপ থাকলেও কেনার দৃষ্টি ব্যাংকের শেয়ারে

ডিএসইর বাজারমূলধন কমেছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা

সামষ্টিক অর্থনৈতিক কিছু বিষয়ের পাশাপাশি বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ার ‘জেড’ শ্রেণীতে স্থানান্তরিত হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রয়ের মনোভাব দেখা যায়। তবে সার্বিকভাবে এ থেকে জেড সব শ্রেণীর শেয়ারই ছিল বিক্রির চাপে। বাজারে ৬৪ শতাংশ বিক্রির চাপের বিপরীতে কেনার আগ্রহ ছিল ৩৬ শতাংশ। উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পয়েন্ট হারিয়েছে দুই বাজারের সূচকগুলো। ডিএসইতে ৮৮.১৩ শতাংশ কোম্পানি দর হারিয়েছে। কোনোভাবেই পুঁজিবাজার পতনের কবল থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। বাজারের এই আচরণে শঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা। ডিএসইর বাজারমূলধন থেকে গেলো সপ্তাহে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বের হয়ে গেছে। এ থেকে জেড সব শ্রেণীর শেয়ার বিক্রির চাপে ছিল। তবে কেনার প্রতি চাপ ছিল ব্যাংকের শেয়ারে। শেয়ারপ্রতি আয় বা পিই কমেছে ০.২ শতাংশ।
সাপ্তাহিক লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, পুরো সপ্তাহটাই টালমাটাল ছিল দেশের পুঁজিবাজার। বিশেষ করে সপ্তাহের শেষদিকে দর ধরনের দরপতনের শিকার বেশির ভাগ কোম্পানি। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯৬.১৪ পয়েন্ট হারিয়ে এখন ৫ হাজার ৬৩৯.১৩ পয়েন্ট, ডিএসই-৩০ সূচক ৪১.৫১ পয়েন্ট হারিয়ে এখন ২ হাজার ৬৪.৯৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে। তবে শরিয়াহ সূচক ৪.১৩ পয়েন্ট ফিরে পেয়ে এখন এক হাজার ২৬১.৯৪ পয়েন্টে এবং এসএমই সূচক ১৬.৫০ পয়েন্ট ফিরে পেয়েছে এখন এক হাজার ২৩১.৩০ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯৬টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৪০টির, কমেছে ৩৪৯টির বা ৮৮.১৩ শতাংশের এবং দর অপরিবর্তিত ছিল ১৭টির।

ডিএসইতে পুরো সপ্তাহে গড় লেনদেন আগের সপ্তাহের তুলনায় ১০.৮০ শতাংশ বেশি হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে গড় লেনদেনে ছিল ৬১৩ কোটি ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা, সেখানে সদ্য বিদায়ী সপ্তাহে ৬৭৯ কোটি ৩০ লাখ ৮০ হাজার টাকার বেচাকেনা হয়েছে। আর মোট লেনদেন ৯৪৪ কোটি ২০ লাখ টাকা বেড়েছে। বিদায়ী সপ্তাহে মোট তিন হাজার ৩৯৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকার বেচাকেনা হয়েছে। যেখানে তার আগের সপ্তাহে হয়েছিল ২ হাজার ৪৫২ কোটি ৩৪ লাখ টাকার। অন্য দিকে শেয়ার বেচাকেনাও আগের সপ্তাহের তুলনায় গেলো সপ্তাহে ৪৩ কোটি ৫৮ লাখ বেশি হয়েছে। গেলো সপ্তাহে ১১২ কোটি ৬৭ লাখ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে। যা তার আগের সপ্তাহে ছিল ৬৯ কোটি ৮ লাখ ৯০ হাজারটি। ব্লক মার্কেটে গত সপ্তাহে মোট ১৩৭ কোটি ৭৬ লাখ ৪০ হাজার টাকার বেচাকেনা হয়েছে। আর এসএমই খাতে ৪৯ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার বেচাকেনা হয়েছে বলে ডিএসইর সাপ্তাহিক লেনদেনের বিশ্লেষণ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। সার্বিকভাবে ডিএসইর বাজার মূলধন থেকে ১.৪৩ শতাংশ তারল্য বা ৯ হাজার ৯৫০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা চলে গেছে। বর্তমানে বাজারমূলধন হলো ছয় লাখ ৮৫ হাজার ৬২১ কোটি ২৪ লাখ টাকায় নেমেছে।

সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধিতে শীর্ষ কোম্পানি : সপ্তাহটিতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৩০.৩৬ শতাংশ বলে ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এই তথ্য জানা গেছে। সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ২৬.২১ শতাংশ, ইসলামিক ফাইন্যান্সের ১৭.৯৯ শতাংশ, গ্রামীণ ওয়ান : স্কিম টুর ১৩.৪৩ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১৩.২৪ শতাংশ, রহিম টেক্সটাইলের ১১.৮১ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ১০.৭৭ শতাংশ, ইউনিয়ন ব্যাংকের ৯.৩৮ শতাংশ, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ৮.৮২ শতাংশ এবং ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ৭.৭৬ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে।

সাপ্তাহিক দর পতনে শীর্ষ কোম্পানি : সবচেয়ে বেশি দর কমেছে নিউ লাইন ক্লোথিংস লিমিটেডের। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ২৫.০৮ শতাংশ কমেছে বলে ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এই তথ্য জানা গেছে। দর পতনের শীর্ষ তালিকায় স্থান পাওয়া অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে খুলনা পাওয়ারের ২৩.৭৮ শতাংশ, শাইনপুকুর সিরামিকসের ২৩.৫৬ শতাংশ, বিবিএস ক্যাবলসের ২২.৮৬ শতাংশ, নাভানা ফার্মার ২২.৮৫ শতাংশ, খান ব্রাদার্সের ২১.৯১ শতাংশ, মেট্রো স্পিনিংয়ের ২১.৭৪ শতাংশ, খুলনা প্রিন্টিংয়ের ২১.০৯ শতাংশ, অলিম্পিক এক্সেসরিজের ২০.৮৩ শতাংশ এবং ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেডের ২০.৭৯ শতাংশ শেয়ার দর কমেছে।

লেনদেনে শীর্ষে থাকা কোম্পানি : বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের নেতৃত্বে উঠে এসেছে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ৪৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৭.১২ শতাংশ। লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে গ্রামীণফোন লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ৩৮ কোটি ৬৯ লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৫.৭০ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। সপ্তাহজুড়ে ব্যাংকটির প্রতিদিন গড়ে ৩১ কোটি ১৯ লাখ ২০ হাজার হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৪.৫৯ শতাংশ। এ ছাড়া প্রতিদিন গড় লেনদেনে সাপ্তাহিক শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে সোনালি আঁশের ২১ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার টাকা, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ২০ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ইবনে সিনা ফার্মার ১৮ কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকা, লিনডে বাংলাদেশের ১৬ কোটি ৯১ লাখ ৯০ হাজার টাকা, লাভেলো আইসক্রিমের ১৪ কোটি ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, অগ্নি সিস্টেমসের ১৩ কোটি ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসির ৯ কোটি ২৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

চট্টগ্রাম স্টকে সব সূচকই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পয়েন্ট হারিয়েছে। তিনটি সূচক দেড় শতাধিক হারে পয়েন্ট হারিয়েছে। সিএএসপিআই ৩৯৮.৫৭ পয়েন্ট, সিএসই-৩০-সূচক ১৬১.০২ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স ১৮৯.১০ পয়েন্ট এবং এসএমই সূচক ৪৩.৫৫ পয়েন্ট। দুই কোটি ২২ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৭২ কোটি ৬০ লাখ ২২ হাজার ৭৩৮ টাকা বাজারমূল্যে। ৩২৭টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিলেও দর বৃদ্ধিতে লাভবান ৫৯টি, দর পতনে ক্ষতিগ্রস্ত ২৫৫টি এবং ১৩টির দর অপরিবর্তিত ছিল। বাজারমূলধনে অংশীদারিত্ব এন শ্রেণীর কোম্পানির সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এদের হার হলো ২২.৭৩ শতাংশ। এ ছাড়া এ শ্রেণীর ৬০.৪৪ শতাংশ, বি শ্রেণীর ১৬.০৪ শতাংশ এবং জেড শ্রেণীর ০.৭৩ শতাংশ।

হাউজগুলোকে প্রতিদিন গ্রাহককে অ্যাকাউন্ট রিপোর্ট পাঠাতে হবে : দেশের শেয়ারবাজারের ট্রেকহোল্ডারদের বা ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে প্রতিদিন সমন্বিত গ্রাহক হিসাব (সিসিএ) জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা আসছে। বর্তমানে তাদের প্রতি মাসে একবার এই হিসাব জমা দিতে হয়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কাছে এই বিষয়ে মতামত জানতে চিঠি দিয়েছে বিএসইসি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) মতামত জানাতে নির্দেশনা দিয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মার্কেট অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিস অ্যাফেয়ার্স ডিভিশনে (এমআইএডি) সহকারী পরিচালক আব্দুল বাতেন ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/19653409