বিসিবি থেকে টিভি স্বত্ব কিনলেই লাভ! বিশাল অঙ্কে সম্প্রচার স্বত্ব কিনে পুরো টাকা না দিয়েও পার পাওয়া যায়। গোপন আঁতাতে ছাড় তো মেলেই, ছাড়ের পর টাকা না দিলেও কিছু হয় না। গত ১০ বছরে টিভি সম্প্রচার স্বত্ব কেনা বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান ছাড় পেয়েছে কোটি কোটি টাকা। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের আশীর্বাদপুষ্ট পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিক এই নয়ছয়ে জড়িত বলে অভিযোগ।
বিসিবির আর্থিক লাভের কথা না ভেবে গাজী টিভি, বেনটেক ও সেম গ্লোবাল অ্যান্ড ওয়ার্ক স্পেস টেকনোলজিকে ছাড় দেওয়া হয়েছে বিশাল অঙ্কের টাকা। এ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে মল্লিকের গোপন সম্পৃক্ততার অভিযোগও রয়েছে। বিসিবির একাধিক কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে জানান, সেম গ্লোবাল অ্যান্ড ওয়ার্ক স্পেস টেকনোলজিকে বিশাল ছাড় দেওয়ার পরও ২০২২ সালের বিপিএল সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রির ৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা বকেয়া আছে। অথচ বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল গত দুই বছর বকেয়া আদায়ে চেষ্টা করেনি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন এবং বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শেখ সোহেল ও সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক পলাতক থাকায় সাহস করে সেম গ্লোবাল অ্যান্ড ওয়ার্ক স্পেস টেকনোলজির কাছে বকেয়া টাকা চেয়ে চিঠি দিয়েছে বিসিবি।
অভিযোগ আছে, ওয়ার্ক স্পেস টেকনোলজির সিইও মাকসুদুর রহমান মূলত মল্লিকের সঙ্গে যোগসাজশে সেম গ্লোবালকে নিয়ে কনসোর্টিয়াম গড়েছিলেন। প্রতিবছর ৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে ২০২২ থেকে ২০২৫ সালের বিপিএলের টিভি স্বত্ব দেওয়া হয়েছিল তাদের। চুক্তির টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ২০২২ সালেই কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হয়। বিসিবির মোট টাকার ২৫ শতাংশ ছাড় চেয়ে আবেদন করে ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ছাড়ও পেয়েছে তারা। বাকি ২৯ কোটির মধ্যে পরিশোধ করেছে ২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। কোনো এক রহস্যজনক কারণে এই কনসোর্টিয়ামের কাছে বকেয়া পরিশোধের জন্য চিঠিও দেওয়া হয়নি।
বিসিবির একদল কর্মকর্তা মনে করেন, শেখ সোহেল ও মল্লিক বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বিসিবির এ দুই কর্মকর্তা পলাতক থাকায় অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। দেরিতে হলেও বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বকেয়া চেয়ে ২৪ আগস্ট সেম গ্লোবাল অ্যান্ড ওয়ার্ক স্পেস টেকনোলজিকে ৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে চিঠি দিয়েছে বিসিবি। সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে ১৫ দিন। ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপের লোকাল অর্গানাইজিং কমিটির মার্কেটিং ম্যানেজার ছিলেন ওয়ার্ক স্পেস টেকনোলজির সিইও মাকসুদুর রহমান। মল্লিকের যোগসাজশে সেম গ্লোবালের গ্রুপ প্রেসিডেন্ট মেহেরুন এন. ইসলামের সঙ্গে কনসোর্টিয়াম গড়েন মাকসুদ। এ দুই প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। মাকসুদকে ফোনে পাওয়া যায়নি, হোওয়াটসঅ্যাপ বার্তা দিয়েও উত্তর মেলেনি। মেহেরুনের প্রতিষ্ঠানের নম্বরে ফোন করে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে বিসিবির সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরীর বলেন, ‘বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল চুক্তিগুলো করে থাকে। মার্কেটিং ও অ্যাকাউন্টস বিভাগ বাকি প্রক্রিয়া দেখে। আমরা এই কোম্পানিকে চিঠি দিয়েছি বকেয়া চেয়ে।’
সেম গ্লোবাল অ্যান্ড ওয়ার্ক স্পেস টেকনোলজিকে টাকা ছাড় দেওয়ার কারণ হিসেবে মল্লিক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে ১০ কোটি টাকা ছাড় দিয়েছেন। অথচ টিভি স্বত্ব বিক্রির বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চুক্তিপত্রেও শর্ত দেওয়া থাকে তামাক ও কোনো ধরনের জুয়ার বিজ্ঞাপন চালাতে পারবে না খেলা চলাকালে। এর ব্যত্যয় ঘটলে চুক্তি বাতিল করার ক্ষমতা রাখে বিসিবি। অথচ চুক্তি বাতিল না করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে উল্টো সুবিধা দেওয়া হয় টাকা ছাড়ের মাধ্যমে।