৩১ আগস্ট ২০২৪, শনিবার

শতাধিক গুলির চিহ্ন আনিসের শরীরে

নেপথ্যে আ.লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল

হাটহাজারী উপজেলার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আনিসকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়। তার শরীরে শতাধিক গুলির চিহ্ন রয়েছে। তার কোমরের নিচে ঝাঁজরা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দুর্বৃত্তরা গুলি করে ক্ষান্ত হয়নি, মৃত্যু নিশ্চিত করতে ৪০ মিনিট ঘটনাস্থল পাহারা দিয়ে রেখেছিল। তারপর গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আনিস কিছুক্ষণ জীবিত ছিলেন। তিনি বারবার অনুরোধ করছিলেন-তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ভর্তি করাতে। কিন্তু পাশে থাকা লোকজন হাসপাতালে না নিয়ে তার পরিচয় জানতে চান, তাকে ভিডিও করতে থাকেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে কথাগুলো বলছিলেন নির্মম খুনের শিকার আনিসের মামাতো ভাই মোহাম্মদ হাসান। পুলিশ বলছে, হাটহাজারী এলাকায় তাদের সঙ্গে কিছু মানুষের বিরোধ ছিল। পূর্বশত্রুতার জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কের নাহার কমিউনিটি সেন্টার ও এভারকেয়ার হাসপাতালসংলগ্ন এলাকায় জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে।

গুলিবিদ্ধ হয়ে মাসুদ কায়সার (৩২) ও মোহাম্মদ আনিস (৩৮) নামে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ওই নেতা নিহত হন। মাসুদ হাটহাজারী উপজেলার ১৪ নম্বর শিকারপুর ইউনিয়নের পশ্চিম কুয়াইশ এলাকার মৃত মো. ইসহাকের ছেলে। আনিস একই এলাকার মৃত মোহাম্মদ রফিকের ছেলে। কি কারণে তাদের হত্যা করা হয়েছে তা পরিবারের সদস্যরাও কিছু বলতে পারছেন না। আনিস হাটহাজারী উপজেলার ১৪ নম্বর শিকারপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

নিহত দুজনই স্থানীয় রাজনীতিতে হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুস গণি চৌধুরীর অনুসারী হিসাবে পরিচিত। আনিসের এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়ক দিয়ে মোটরচালিত অটোরিকশা নিয়ে যাচ্ছিলেন আনিস ও মাসুদ। অনন্যা আবাসিক এলাকাসংলগ্ন অক্সিজেন কুয়াইশ সড়কের নাহার কমিউনিটি সেন্টারের কাছাকাছি পৌঁছানোর পর তিনটি মোটরসাইকেলে আসা ঘাতকরা তাদের দিকে একযোগে গুলি ছুড়তে শুরু করে।

মাসুদ ও আনিস দুজনই গুলিবিদ্ধ হন। আনিস গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে পড়ে যান। মাসুদ দৌড়ে বাঁচার চেষ্টা করেন। মাসুদ গুলিবিদ্ধ হয়ে হাটহাজারীর মুরগিপাড়া এলাকায় গেলে সেখানে গিয়ে তাকে গুলি করা হয়। পরে পার্শ্ববর্তী এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকেও মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ছিল। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই স্থানীয় দুগ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

আনিসের মামাতো ভাই মোহাম্মদ হাসান যুগান্তরকে বলেন, তার কোমরের নিচে ঝাঁজরা করে দেওয়া হয়েছে। আনিসের শরীরে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর কিছুক্ষণ বেঁচে ছিলেন। তিনি স্থানীয় লোকজনকে বারবার অনুরোধ করছিলেন তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ভর্তি করাতে। কিন্তু পাশে থাকা লোকজন হাসপাতালে না নিয়ে তার পরিচয় জানতে চান, তাকে ভিডিও করতে থাকেন। তারা ১০-১২ মিনিট দেরি করে ফেলেন। এর ফলে তার শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। এ কারণে হয়তো তাকে বাঁচানো যায়নি। আনিস স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কারও সঙ্গে তার কোনো ধরনের বিরোধ ছিল না।

চমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, খুব কাছ থেকে গুলি করা হয় আনিসকে। পুলিশের ধারণা, তাকে বাম পায়ে কোমরের নিচে শটগান দিয়ে গুলি করা হয়েছে। একসঙ্গে ৩০-৪০টি গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে গেছে। একইভাবে ডান পাশে কোমরের কাছাকাছি স্থানেও গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে গেছে।

আনিসের ছোট ভাই মো. আজিজ ২৬ আগস্ট ছুটি শেষে দুবাই চলে যান। ভাইকে হত্যার পর শুক্রবার দেশে চলে আসেন। তিনি শুক্রবার সকালে চমেক হাসপাতাল মর্গের সামনে যুগান্তরকে বলেন, কারা কেন আমার ভাইকে হত্যা করেছে আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে এখন কিছু বলতে চাচ্ছি না। দাফন শেষে সব বলব।’

ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ আটক হয়নি। হাটহাজারী মডেল থানা ও বায়েজিদ থানায় পৃথক দুটি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান মদুনাঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. মহিউদ্দিন সুমন। বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি সঞ্জয় কুমার সিনহা জানান, আনিস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হবে বায়েজিদ বোস্তামী থানায়। আর মাসুদ হত্যাকাণ্ডে মামলা হবে হাটহাজারী থানায়।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/844975