৩১ আগস্ট ২০২৪, শনিবার

নোয়াখালীতে ২০ লাখ লোক এখনো পানিবন্দী

ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুরসহ দেশের বন্যাকবলিত ১১ জেলার সঙ্কট কাটছে না। ভারত থেকে ঢলের পানি আসা অব্যাহত থাকায় দুর্গত এলাকায় পানি কমছে ধীরগতিতে। শুধু নোয়াখালীতে এখনো পানিবন্দী রয়েছেন প্রায় ২০ লাখ মানুষ। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে এখনো চারটি গ্রাম পনির নিচে তলিয়ে আছে। বন্যায় গতকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৫৪ জনে পৌঁছেছে। এখনো একজন নিখোঁজ রয়েছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৫ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা ও চিকিৎসা টিমের কার্যক্রম তুলনামূলক বেড়েছে।

নোয়াখালীতে এখনো ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দী
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালীতে দুই দিন থেকে বৃষ্টি না হলেও বন্যাপরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খালের বাঁধ কেটে দিলেও পানি নামছে খুবই ধীরগতিতে। এখনো প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দা পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। বেশির ভাগ মানুষের ঘরবাড়ি ডুবে আছে। তাদের মধ্যে আতঙ্কের রয়েছেন অনেকে। আশ্রয় কেন্দ্রেগুলোতে এখনো দুই লাখের বেশি মানুষ ঠাঁই নিয়ে আছেন।
নোয়াখালী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো: জাহিদ হাসান খান জানান, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত জেলার আট উপজেলার আট পৌরসভা ও ৮৭ ইউনিয়নে ২০ লাখ ২০ হাজার ৩০০ জন পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন।

আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও বানবাসি মানুষের ভিড় বেড়েই চলছে। সেখানে এখন তিল ধারনের জায়গা নেই। সব মিলিয়ে পানিবন্দী ও আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষের দুঃখ-কষ্ট আর দুর্ভোগের শেষ নেই।

গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত জেলার এক হাজার ৩৮৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে দুই লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৩ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বলে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহিদ হাসান খান জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘সরকারি ত্রাণসহায়তা হিসেবে এ পর্যন্ত ৭৯৮ মেট্রিক টন চাল, ৩০ লাখ ৯৪ হাজার টাকা এবং এক হাজার ১০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।’

নাঙ্গলকোটে এখনো ৪ গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত
নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, নাঙ্গলকোটে গত ৯ দিনেও ভয়াবহ বন্যাপরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। এখনো বিভিন্ন স্থানে বাড়িঘর পানির নিচে তলিয়ে রযেছে। বিভিন্ন সড়ক ও গ্রামীণ রাস্তাঘাটে পানি রয়েছে। বিভিন্ন বাড়িঘর থেকেও সম্পূর্ণ পানি নামেনি। উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের চারটি গ্রাম এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বন্যাদুর্গতরা বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। এ ছাড়া বক্সগঞ্জ-সাতবাড়িয়া-গুণবতী সড়কের সাতবাড়িয়া দক্ষিণপাড়া অংশটি এখনো কোমর পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। অন্য দিকে উপজেলা রায়কোট উত্তর, দক্ষিণ, মৌকরা, ঢালুয়া, বক্সগঞ্জ পূর্ব, পশ্চিম, বটতলী, দৌলখাঁর, আদ্রা উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর আশ্রয়কেন্দ্র এবং পানিবন্দী মানুষকে এখনো বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, প্রবাসী, বিভিন্ন গ্রামবাসীর উদ্যোগে রান্না করা এবং শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখনো বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তি বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যাদুর্গতদের মধ্যে খাবার বিতরণ করছেন।

বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৪
চলমান বন্যায় এ পর্যন্ত ১১ জেলায় ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বন্যাপরিস্থিতি সম্পর্কিত হালনাগাদ তথ্যাদির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এতে বলা হয়, বন্যায় মৃত লোকসংখ্যা ৫৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪১ জন, নারী ছয়জন ও শিশুর সংখ্যা সাত। বন্যায় কুমিল্লায় ১৪, ফেনীতে ১৯, চট্টগ্রামে ছয়, খাগড়াছড়িতে এক, নোয়াখালীতে আট, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক, লক্ষ্মীপুরে এক, কক্সবাজার তিন ও মৌলভীবাজারে একজন মারা গেছেন।

তাদের বেশিসংখ্যক
পানিতে ডুবে, সাপের কামড়ে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। মৌলভীবাজারে এখনো একজন নিখোঁজ রয়েছেন।
সিলেট, হবিগঞ্জ ও চট্টগ্রাম জেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে গতকাল জানানো হয়, বন্যাপরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়েছে, ৬৪ উপজেলা বন্যা প্লাবিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন/পৌরসভা ৪৮৬টি। ১১ জেলায় মোট ১০ লাখ ৯ হাজার ৫২২ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৪ লাখ ৬৪ হাজার ১৬৭ জন।

তিন হাজার ২৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো চার লাখ ৬৯ হাজার ৬৮৭ জন মানুষ এবং ৩৮ হাজার ১৯২টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। ১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য মোট ৫৬৭টি মেডিক্যাল টিম চালু রয়েছে।

ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, সশস্ত্র বাহিনী বন্যাদুর্গত এলাকায় এক লাখ ৯৪ হাজার ২৮৫ প্যাকেট ত্রাণ, ১৯ হাজার ২৬০ প্যাকেট রান্না করা খাবার বিতরণ করেছে। মোট ৪২ হাজার ৭৬৬ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং ১৮ হাজার ৩৮৯ জনকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ১৫৩ জনকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর পরিচালিত মোট ২৪টি ক্যাম্প এবং ১৮টি মেডিক্যাল টিম বন্যা উপদ্রুত এলাকায় চিকিৎসাসেবা প্রদান করছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/859844