২৫ আগস্ট ২০২৪, রবিবার

বাংলাদেশ ঘিরে আঞ্চলিক পানি রাজনীতি

-আলী আহমাদ মাবরুর

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টিতে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১২টি জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যায় আক্রান্ত জেলাগুলো হলো, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ এবং রাঙামাটি। প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বন্যাসৃষ্ট কারণে এখন পর্যন্ত ১১ জেলায় ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৯ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়া বন্যায় এখন অবধি মারা গেছেন ১৮ জন। এর মধ্যে কুমিল্লায় ৪ জন, ফেনীতে একজন, চট্টগ্রামে ৫ জন, নোয়াখালীতে ৩ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন, লক্ষ্মীপুরে একজন এবং কক্সবাজারে তিনজন মারা গেছেন।
সরকারি হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৪৮টি। যদিও ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত সংখ্যা এর তুলনায় আরো অনেক বেশি হবে। কেননা, দূরবর্তী অঞ্চলে যারা থাকেন, কিংবা এখনও পর্যন্ত যেসব প্রান্তিক এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক বা প্রশাসনের প্রতিনিধিরা পৌঁছতে পারেননি, সেখানকার প্রকৃত চিত্র এখনো পাওয়াই যায়নি। বন্যা মোকাবেলায় সরকারের তরফ থেকে ৩ হাজার ৫২৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৮ জন আশ্রয় নিয়েছিলেন। এর বাইরেও বহু সংখ্যক ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ রয়ে গেছেন যাদের পক্ষে আশ্রয় কেন্দ্র পর্যন্তও যাওয়ার সুযোগ হয়নি।

বন্যা অনেকটাই আকস্মিক হওয়ার কারণে পূর্বাঞ্চলের এই জেলাগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগাম কোনো পূর্বাভাস না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা তেমন প্রস্তুতিও নিতে পারেননি। আবার টেলিযোগাযোগসহ সব ধরনের যোগাযোগ থমকে যাওয়ায় বন্যাদুর্গত পরিবার ও স্বজনদের প্রকৃত তথ্যও পাওয়া যায়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকের লেখনি থেকে জানা যায় যে, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেনী জেলা। এই জেলার বাসিন্দাদের স্মৃতিতে এমন বন্যার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। বিশেষ করে ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অনেক এলাকায় ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। পানির ¯্রােত বেশি থাকায় প্রথম দুদিন সেভাবে উদ্ধার অভিযানও পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। ত্রাণ নিয়ে অনেকেই ফেনীতে যাওয়ার পরও শুধুমাত্র নৌযানের অভাবে তারা ত্রাণগুলো বন্যার্ত মানুষগুলোর হাতে তুলেও দিতে পারেননি। দ্বিতীয় দিন থেকে সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার ব্যবহার করে এবং সাধারণ মানুষেরা স্পিডবোট ব্যবহার করে উদ্ধার কাজে গতি আনতে সক্ষম হন।

একই অবস্থা ছিল কুমিল্লার বুড়িচংসহ বেশ কিছু এলাকায়। ঢাকা থেকে ত্রাণ নিয়ে গেলেও নৌকা না থাকায় কুমিল্লার বুড়িচংয়ের দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছিল না বলে জানিয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবকরা। কুমিল্লায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। সেখানকার মানুষ বলছেন, এর আগে গোমতিতে এত তীব্র স্রোত তারা কখনো দেখেননি। তিতাস উপজেলার আসমানিয়া বাজারে স্থানীয়ভাবে কাঠ ও স্টিল দিয়ে করা সেতুটি পর্যন্ত পানির তোড়ে ভেঙে গেছে। এরকম জটিল পরিস্থিতিতে ঢাকা ও আশপাশের জেলা থেকে অনেকেই ঘটনাস্থলে শুকনো খাবার নিয়ে যাওয়ার পরও মানুষের মাঝে বিতরণ করতে পারেননি। কেবলমাত্র ঢাকা বা আশপাশে থেকে যারা নৌকা নিয়ে আসতে পেরেছেন তারাই নিজেদের মত করে দুর্গত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ দিতে পারছেন। এই অবস্থায় অনেককে কলাগাছ এবং টিউব দিয়ে ভেলা বানিয়ে ত্রাণ পৌঁছানোর চেষ্টা করতেও দেখা গেছে। তবে এগুলো বেশ বিপজ্জনক পন্থা।

পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এগুলো জানিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়। বন্যা আক্রান্ত এলাকাগুলোতে অবস্থানরকত মানুষকে নৌকা নিয়ে আসার পরামর্শ দেন। কারণ, নৌকা, ট্রলার বা স্পিডবোট না থাকলে দুর্গত এলাকায় বানভাসি মানুষের কাছে পৌঁছানো যাবে না।

একাধিক বিদেশী সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বন্যায় সেখানে বুধবার পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যুর তথ্যও জানা গেছে। এরকমই একটি পরিস্থিতি ভারত ত্রিপুরাস্থ বাঁধের ‘ডুম্বুর গেট’ খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এভাবে প্লাবিত হয়। ত্রিপুরার এই প্রকল্পটি মূলত হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার প্রজেক্ট। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, ত্রিপুরায় অতিবৃষ্টি হচ্ছে কয়েকদিন ধরেই। আর এ বাঁধটি খুলে না দিলে ভারতেও বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটতো। সে যুক্তি থেকেই ভারত এই বাঁধটি খুলে দিয়েছে। ভারতের দিক থেকে বিষয়টি যৌক্তিক বলে মনে হলেও আন্তর্জাতিক নদীর পানি বণ্টন ও ব্যবস্থাপনার কিছু নিয়ম-কানুন আছে। উজানের দেশ হিসেবে ভারতের এই নিয়মগুলো মেনে চলা উচিত ছিল। তবে নিতান্তই দুঃখজনক বিষয় হলো, ভারত এসব নিয়মকানুন বা বিধি বিধানের কোনো তোয়াক্কাই করে না।

ভারত বছরের পর বছর ধরে পানি নিয়ে যে কৌশল অবলম্বন করে আসছে, তাকে বিশ্লেষকরা ‘পানি রাজনীতি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এরকম নামকরণের বেশ কিছু প্রেক্ষাপট রয়েছে। কেননা, উজানে অবস্থানের সুবিধা নিয়ে ভারত দেশের ভেতরে অনেক অভিন্ন নদীর পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাঁধ দিয়েছে। এতে করে ভারত শুকনো মৌসুমে সুবিধা পায়। তাছাড়া বিভিন্ন রাজ্যের অভ্যন্তরীণ নদীগুলো সচল রেখে মানুষের জীবন-জীবিকা ও ফসল উৎপাদন তারা এই বাঁধে আঁটকানো পানির কারণেই অব্যাহত রাখতে পারে। আবার অতিবৃষ্টি বা বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিলে ভারত এসব বাঁধের গেট খুলে দিয়ে নিজের দেশে বন্যা পরিস্থিতিকে সুকৌশলে ভারতে পাচার করে দিতে পারে। উজানের দেশ হিসেবে ভারত এ সুবিধাগুলো পায়। অন্যদিকে, ভাটির দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ বরাবরই ভারতের এই পানি আঁটকে রাখা এবং বৃষ্টির মৌসুমে পানি ছেড়ে দেওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ফারাক্কা বাঁধের কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদীগুলোয় প্রবাহ কমে গিয়ে সেখানের জীবন-জীবিকায় কী মারাত্মক প্রভাব পড়ছে তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। উত্তরাঞ্চলের অনেকগুলো জেলা এখন মরুভূমি। নদীগুলো শুকিয়ে কাঠ। ফসলী জমিগুলো ফেটে রীতিমতো চৌচির। ভারতের সঙ্গে পদ্মা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের চুক্তি আছে। কিন্তু সেই চুক্তির অনেক শর্তই বাংলাদেশের স্বার্থের পরিপন্থী। তাছাড়া বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী কোনো মৌসুমেই পানি পায় না। মূলত রাজনৈতিক সরকারগুলো কোনো রকমে এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়েও এ ধরনের চুক্তি করে। তারা মূলত এ ধরনের চুক্তি করে সমস্যা সমাধানের ক্রেডিট নেয় কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় সমস্যা যেখানে ছিল সেখানেই রয়ে গিয়েছে। পানি সংক্রান্ত চুক্তিগুলো ভারতের পানি রাজনীতির আরেকটি নিদর্শন।

বাংলাদেশ-ভারতের অন্যতম প্রধান অভিন্ন নদী তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে বছরের পর বছর বা যুগের পর যুগ ধরে যে কী চলছে, তা আমরা দেখে আসছি। শেখ হাসিনার সাথে ভারতের সম্পর্ক ভালো এমনটা প্রতীয়মাণ হলেও খোদ শেখ হাসিনার সরকারও ভারতকে তিস্তা চুক্তিতে সম্মত করতে পারেনি। সার্বিকভাবে বলা যায়, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন ইস্যুতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ন্যূনতম আস্থার সম্পর্কও আসলে নেই। অভিন্ন নদীর পানি ব্যবহারে উজান ও ভাটির দেশের মধ্যে যে ধরনের যৌক্তিক, মানবিক ও বৈজ্ঞানিক ও পরিবেশ বান্ধব ব্যবস্থাপনা থাকার কথা ছিল, এখনো পর্যন্ত তা নিশ্চিত করা যায়নি। আর এক্ষেত্রে ভারতের দায় বেশি। আর আমাদের রাজনৈতিক সরকারগুলোর তোষণ নীতিও পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে।

ছেলেবেলা থেকেই আমরা পড়ে এসেছি, বন্যার পানিতে যে পলি ভেসে আসে তা খুবই উর্বর। বাংলাদেশের মতো ভাটি অঞ্চলে হরহামেশাই বন্যা বা অতিবৃষ্টি হওয়ায় এরকম কিছু ফায়দা আমাদেরও পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এক্ষেত্রেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক সরকারগুলো ষোলআনা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। প্রতিটি সরকারের আমলে তাদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত বিশেষ শ্রেনী নদীগুলো দখল করে সেখানে নানারকম অবকাঠামো গড়ে তুলেছে। ফলে নদীগুলো পলি জমে ভরাট হয়ে গিয়েছে। এখন একটু বেশি বৃষ্টিপাত হলেই বন্যা হয়ে যায়। অথচ আমরা যদি প্রকৃতির সাথে অনাচারগুলো বন্ধ করতে পারতাম তাহলে বন্যাগুলো নিছক দুর্যোগ নয় বরং ক্ষেত্রবিশেষে দেশের কৃষি ও মৎস্য সম্পদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠতো।

আন্তর্জাতিক নদী আইন ও প্রচলিত কনভেনশন অনুযায়ী কোনো একটি অভিন্ন নদী, অর্থাৎ যে নদী একাধিক দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, সেই নদীতে উজান কিংবা ভাটি- দুদেশের কোনোটিই নিজেদের ইচ্ছামতো বাঁধ তৈরি করতে পারে না। নদীকে ভরাট করে অবকাঠামো নির্মাণ বা উন্নয়ন প্রকল্পও বাস্তবায়ন করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে উভয় দেশের সম্মতি থাকতে হয়। উভয় দেশের মানুষের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় নিতে হয়। কিন্তু বারবার অনুরোধ করা স্বত্বেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারত কখনোই এই বাস্তবতাগুলো বিবেচনায় নেয়নি।

এই অসহায় প্রেক্ষাপটে আমাদের সামনে অন্য আরো অনেক ইস্যুর মতো আশার আলো হয়ে এসেছে বাংলাদেশের তরুণ ছাত্র সমাজ। তারা শুধু ফ্যাসিবাদী শাসনকেই অপসারণ করেনি। দেশের প্রতিটি স্পর্শকাতর ইস্যুতেও তারা সরব হচ্ছে। সবচেয়ে বড়ো কথা, তাদের কথাবার্তা বা অভিব্যক্তিতে এটি অনেকটাই স্পষ্ট যে, তারা দেশের সমস্যাগুলোর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত। ফেনীতে যেদিন থেকে বন্যা শুরু হয়, সেদিনই ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ছাত্রছাত্রীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে একটি শিক্ষার্থী সমাবেশে বক্তাদের অনেকে অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানের চলমান বন্যা ভারত রাজনৈতিকভাবে তৈরি করেছে। এ সময় তারা ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নানা স্লোগানও দেন। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমম্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, নদী একটি প্রাকৃতিক সম্পদ। তা নিজস্ব নিয়মে চলবে। সেখানে বাধা দেওয়া অপরাধ। ভরা মৌসুমে পানি না দিয়ে ভারত আমাদের খরায় রাখে। আর এখন বাঁধ ছেড়ে দিয়ে মানুষকে বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছে।’ শুধু তাই নয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের অবস্থানও আমাদের আশাবাদী করে। ক্রীড়া উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনরত আসিফ মাহমুদ একটি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্টতম গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা কে আশ্রয়, নোটিশ ছাড়াই ওয়াটার গেইট খুলে দিয়ে বন্যার সৃষ্টি করা ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতির কারণ হতে পারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণের কাছে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে।’

তিনি যে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু বলেননি তার প্রমাণ হলো, বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকেও একই দৃষ্টিভঙ্গি উঠে এসেছে। শুধু তাই নয়, হঠাৎ বন্যার ক্ষেত্রে কী ধরনের আগাম সতর্কতা পাওয়া যায়, ভবিষ্যতে এই ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে রাষ্ট্রগুলো কীভাবে কাজ করতে পারে, সে বিষয়ে স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠিয়েছেন এবং এ সব বিষয়ে কথা বলেছেন। ভারতীয় হাইকমিশনার তার মতো করে একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তবে পুরোটা প্রক্রিয়ায় যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্র্ণ তাহলো, এই প্রথম নতজানু পররাষ্ট্র নীতির বাইরে এসে সরকার প্রধান প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রতিনিধির সাথে কথা বলেছেন, তাকে জবাবদিহিতার আওতায় এনেছেন। এই ধরনের কার্যক্রম আগামী দিনের বাংলাদেশের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির বার্তা দেয়।

একথা ঠিক যে, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে বড় ও শক্তিশালী রাষ্ট্রের দায়িত্ব অনেক বেশি। বড়ো দেশের কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের আধিপত্যবাদী মানসিকতার বিরুদ্ধে শুধু বাংলাদেশ নয়, নেপাল, মালদ্বীপ বা শ্রীলংকাতেও জনমত গড়ে উঠেছে। এমনকি বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতের মাটিতেও নানা ইস্যুতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে ভারতেরও এখন পূর্বের দলকেন্দ্রিক বন্ধুত্ব থেকে বেরিয়ে এসে জনগণের সাথে বন্ধুত্ব তৈরিতে সচেষ্ট হওয়া দরকার। কারণ, প্রতিবেশী ছোট রাষ্ট্রগুলো ভালো না থাকলে কিংবা প্রতিবেশী দেশগুলোর জনগণের ভেতর ভারতবিরোধী মনোভাব বেড়ে গেলে ভারতের নীতি নির্ধারকদের পক্ষেও আস্থার সাথে দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে যায়।

বাংলাদেশ-ভারত অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নীতিতে ভারত নিজের স্বার্থে যতটা সোচ্চার থেকেছে, বাংলাদেশের স্বার্থ কখনোই সেভাবে দেখেনি। তাই আগামীতে বাংলাদেশের মানুষের জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য ভারতের জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ করা প্রয়োজন। একটি হলো, সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা বন্ধ করা। আর দ্বিতীয়ত সমঝোতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে অভিন্ন নদীর পানি বন্টনে চুক্তি করা। তিস্তাসহ সবগুলো অভিন্ন নদীর ব্যাপারেই ভারতের উদার হওয়া উচিত। নতুবা ছাত্র-জনতার যে গণজোয়ার বাংলাদেশে হয়েছে এবং যেভাবে ভারত বিরোধী মনোভাব চাঙা হয়েছে, তা সামাল দেওয়া সত্যিই কঠিন হবে।

https://www.dailysangram.com/post/564772