যতদূর মনে পড়ে এই স্তম্ভে পাঠকরা ইতোপূর্বে একজন ক্লান্ত পরিশ্রান্ত ও পিপাসার্ত কৃষকের গল্প পড়ে থাকবেন। চৈত্র মাসের কাঠ ফাটা রোদে জমিতে হাল চষে বলদ জোড়া নিয়ে লাঙ্গল কাঁধে বাড়ি ফিরে তিনি এতই পরিশ্রান্ত ছিলেন যে, পিপাসায় তার মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছিল না। ভেতর বাড়িতে ঢুকতেই দেখলেন তার বড় ছেলে ঘরের দাওয়ায় বসে আছে। তিনি তাকে দেখেই বললেন, দাও তো ভাই তাড়াতাড়ি এক গ্লাস পানি। কথাটি তার স্ত্রীর কানে গেল। তিনি তাৎক্ষণিক বলে উঠলেন, মান্সের কি হুঁশ ঘুশ চলে গেছে যে, ছেলেকে বলে ভাই। কথাটি শুনে কৃষক জবাবে বললেন, “কাঠ ফাটা রোদে হাল চাষ করে পরিশ্রান্ত ও পিপাসার্ত হলে কারই বা হুঁশ থাকে বলো মা!”
গল্পটা মনে পড়লো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যে পদত্যাগ ও পলায়নোত্তর অবস্থায় ভারতের সরকারি দল বিজেপির কিছু নেতা নেত্রী ও গণমাধ্যমের মিথ্যাচার ও অপতথ্য ছড়ানোর সীমাহীন প্রবণতা দেখে। বলাবাহুল্য, শেখ হাসিনার এই অপ্রত্যাশিত পতনে ভারত হতচকিত, হতভম্ভ। ভারত ও তার গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ অনেক বছর ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোকে শেখ হাসিনার জন্য তদবির করে তাকে ক্ষমতায় রাখার ব্যাপারে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা এবং বিরোধী দলসমূহের দাবির মুখে তার উপর চাপ সৃষ্টি না করার অনুরোধ করে আসছিল। তা সত্ত্বেও হাসিনার পলায়ন ও তার সরকারের পতন তাকে স্তম্ভিত করে তোলে। বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রশাসনের প্রত্যেকটি স্তর এবং এমনকি সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ বিভাগসমূহকে তাদের গোয়েন্দা জালের অন্তর্ভুক্ত করার পরও হাসিনা সরকারের পতন সম্পর্কে ন্যূনতম পূর্বাভাস তারা পাননি। এটা বিজেপি এবং ‘র’-এর ব্যর্থতা বলে তারা মনে করছেন। তথ্য যাচাইকারী একটি সংস্থা তথা রিউমার স্ক্যানার ভারতীয় গণমাধ্যমের ৫০টি রিপোর্ট যাচাই করে জানিয়েছে এগুলো সম্পূর্ণ ভুয়া; ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানকে ভারতীয় গণমাধ্যমসমূহ ধর্মীয় উন্মাদনা প্রসূত বলে প্রচার করছে এবং বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পতনের পর দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও সংখ্যালঘুদের উপর ব্যাপক হামলাও তাদের ব্যবসায় বাণিজ্য ও সম্পত্তি ধ্বংসের ঘটনা ঘটছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা বারবার বলার চেষ্টা করছে যে, বালাদেশের ভারত বিদ্বেষী ধর্মান্ধ কিছু দল শেখ হাসিনার পতনের জন্য দায়ী। শেখ হাসিনার বিগত ১৫ বছরের দুঃশাসন তার জুলুম নির্যাতন, মৌলিক অধিকার হরণ, গণহত্যা, গুম, আয়না ঘরের বীভৎসতা, ভারতীয় সহযোগিতায় বলে কথিত মানুষের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিতকরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, কোর্টকাচারীসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ দলীয়করণ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, অর্থ আত্মসাৎ, অর্থপাচার প্রভৃতি তার মারাত্মক ফৌজদারি ও মানবতা বিরোধী অপরাধসমূহকে তারা শুধু অবজ্ঞাই করছেন না বরং ছাত্র জনতার বিপ্লবকেও অপমান করছেন। বলা নিষ্প্রয়োজন যে, তাদের এই অপপ্রচার দেশ বিদেশের নিরপেক্ষ বিশ্লেষক এবং সংবাদ সংস্থাগুলোর কাছে নগ্নভাবে ধরা পড়েছে এবং ইতোমধ্যে বিবিসি, রয়টার্স, আল জাজিরা, এপিপি, এএফপিসহ খ্যাতনামা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়া তাদের প্রকাশিত ও প্রচারিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে ভারতীয় সংস্থাগুলোর মিথ্যাচার ও তাদের অভিযোগের অন্তঃসারশূন্যতা প্রমাণ করেছেন। প্রতিবেশী দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এবং সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর প্রধান টার্গেট বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপিসহ বাংলাদেশের ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো। বিশ্লেষকদের মতে বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবেশী দেশ ভারতের জনগণকে কখনো তাদের শত্রু মনে করেনা, তবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার তাদের আচরণের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে, তারা বাংলাদেশের বন্ধু নয়, আধিপত্যবাদী একটি শক্তি। এই শক্তিটি চরম ইসলাম বিদ্বেষী এবং যেসব দল বাংলাদেশে ইসলামের অনুশাসন ভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বিশ^াসী তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে বদ্ধপরিকর। তাদের আচরণের সবচেয়ে বড় অসংগতি হচ্ছে নিজ দেশের সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর নির্যাতনের জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহার, তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ, জমিজমা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল, মসজিদ মাদরাসা ধ্বংস করে প্রতিবেশী বাংলাদেশের উপর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আরোপ। তাদের আক্ষেপ, বাংলাদেশে তাদের পোষা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জনরোষে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। ইসলামপন্থীদের ঠেঙ্গানোর জন্য তাকে তারা বিশেষ সহযোগিতা দিয়ে টিকিয়ে রেখেছিলেন এবং এখনো ভারতে ভিআইপি মর্যাদায় তাকে মেহমান করে রেখেছেন। শেখ হাসিনা ও তার পিতামাতাসহ অন্যান্য মূর্তি ভাঙা নিয়েও ভারত সরকার অপপ্রচারে লিপ্ত আছেন। তারা স্বীকার করতে চান না যে বাংলাদেশ হিন্দু রাষ্ট্র নয় একটি মুসলিম রাষ্ট্র। এ দেশে হিন্দুরাই শুধু মূর্তি পূজা করতে পারে মুসলমানরা নয়। মুসলিম কোনো ব্যক্তি, হিন্দু বা গ্রীক পুরানের কোনো দেবদেবীর উলঙ্গ মূর্তি এই দেশে প্রকাশ্য স্থানে গ্রহণযোগ্য নয়। ভারতীয় প্রচারমাধ্যম তাদের দেশে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন, এর সাথে জামায়াতে ইসলামীর ন্যায় ইসলামপন্থী দলগুলোর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতেও। তাদের আক্ষেপ, বাংলাদেশে ভারতপ্রেমি তথা তাদের তাঁবেদার সরকার না থাকলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ভারতের সাথে থাকবে কিনা এ ব্যাপারেও সন্দেহ রয়েছে। আসাম, বিহার, ওড়িশ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের মালদহ-মুর্শিদাবাদ এলাকায় তাদের ধারণা অনুযায়ী অত্যন্ত দ্রুতগতিতে, এমনকি ১০০-১২৫% হারে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধর্মান্তরকরণ, অভিবাসন, মুসলিম দম্পতিদের জন্ম নিয়ন্ত্রণসামগ্রীর বিরোধিতা প্রভৃতিকে তারা এজন্য দায়ী বলে মনে করেন। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি দলীয় একজন জনপ্রতিনিধি পার্লামেন্টে (লোকসভা) এ নিয়ে সম্প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন বলেও জানা যায়। পশ্চিমবঙ্গের বহুল প্রচারিত ‘বর্তমান’ পত্রিকা সম্প্রতি একটি ‘সাহসী রিপোর্ট’ করেছে বলে জান যায়। রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলাম ইসলামী-বাংলাস্তান নামক নতুন একটি দেশ সৃষ্টির ব্লু প্রিন্টও তৈরি করেছে। এই ব্লু প্রিন্ট অনুযায়ী নেপালের ঝাপা, বিহার, ঝাড়খ-, ওড়িশ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, মনিপুর, ত্রিপুরা, মায়ানমারের আরাকান রাজ্য, আসাম ও আন্দামান নিকোবর নিয়ে ইসলামী বাংলাস্তান নামক নতুন দেশটি গঠিত হবে। প্রস্তাবিত দেশটির একটি মানচিত্রও প্রকাশ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের আরামবাগ টেলিভিশন তাদের এক সাম্প্রতিক সম্প্রচারে এই তথ্য প্রকাশ করেছে (আরামবাগ টিভি)। ৯৮৩০৩১৩৮০১; arambaghtv@gmail.com )। গাঁজার নৌকা পাহাড়ের উপর দিয়ে চলার একটি প্রবচন আছে। বলা হয়েছে নতুন দেশটির সরকারি ভাষা হবে আরবী এবং উর্দু। ঢাকার দেয়ালে দেয়ালে আরবী ক্যালিওগ্রাফিকে তারা এমন প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। চমৎকার তথ্য। হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক দল নয়, জামায়াতই একাধারে রাজনৈতিক দল ও ইসলামী আন্দোলন। তারা কখনো কোনো দেশ প্রতিষ্ঠা করেছে এই ইতিহাস বা ঐতিহ্য তাদের নেই, সবাই জানে তারা নীতি ও নিয়মনিষ্ঠ খোদাভীরু আইনানুগ একটি দল। সততা তাদের সম্বল, দলটি সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির ঊর্ধ্বে এবং জনকল্যাণে নিবেদিত। তাদের বাংলাস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথিত উদ্যোক্তা ভারত, নেপাল ও মায়ানমার বিভক্ত করার দায়ে দেশগুলোর শত্রু বানাতে চান তাদের বুদ্ধিমত্তা সম্ভবত হাঁটুর নীচে। এই অপপ্রচারটি এই দেশগুলোর কেউ আমলে নিবেন বলে আমার মনে হয় না। এর বিপরীতে ভারতীয় জনতা পার্টির সাধারণ সম্পাদক শ্রীরাম মাধবের একটি ঘোষণার কথা পাঠকদের স্মরণ করার জন্য আমি অনুরোধ করছি। ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর তিনি এই মর্মে তার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেছিলেন যে, ‘একদিন ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ পুনরায় একীভূত হবেই।’ তার মতে ভারতীয় গণরাজ্যে অখ- ভারত নিছক কোনো রাজনৈতিক স্লোগান নয়, বরং এটি হচ্ছে হিন্দুদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিশ্বাস। ১৯৮৯ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) অখণ্ড ভারতকে তার আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছিল। ভারতীয় প্রজাতন্ত্রে আরএসএস, অখন্ড হিন্দুস্তান মোর্চা, হিন্দু মহাসভা, বিশ্ব হিন্দু পরিষদসহ আরো হাজারো সংস্থা রয়েছে যারা অখ- ভারতের প্রবক্তা। কিছুকাল, আগে The News International নামক একটি পত্রিকায়, “Is India Restaging Sikkim Saga in Bangladesh” শীর্ষক একটি নিবন্ধ পড়েছিলাম। নিবন্ধটির লেখক ভারতীয় বংশোদ্ভূত পাকিস্তানী নাগরিক ড. ফররুখ সেলিম।
ড. ফররুখ ভারতের অন্যতম পণ্ডিত ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত ঐতিহাসিক রবি রিখাইয়ের উদ্ধৃতিও এখানে টেনে এনেছেন। শ্রী রবি রিখাই অখন্ড ভারতের একজন ঘোর সমর্থক। তার ভাষায়- ‘My belief is that India should at the earliest incorporate Pakistan into the Republic’ অর্থাৎ আমার বিশ্বাস হচ্ছে এই যে, ভারতের উচিত যত শীগগির সম্ভব পাকিস্তানকে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত করা।
পক্ষান্তরে India Doctrine-এর গ্রন্থকার এমবিআই মুন্সি লিখেছেন- ‘There is a third course of action other than peaceful or aggressive reintegration.... that would be to foment subversion within the country to be reintegrated. This method would gradually wear away the control of government authority and paralysis the state machines which would force the country to seek accommodation with India.’ অর্থাৎ ‘শান্তি পূর্ণভাকে অথবা জবরদস্তি পুনরেকত্রিকরণ ছাড়াও তৃতীয় একটি পথ খোলা রয়েছে এবং তা হচ্ছে যে দেশটি পুনরেকত্রিকরণ করা হবে সেই দেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ইন্ধন যোগানো। এতে সরকারি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ শিথিল হলে যাবে এবং রাষ্ট্রযন্ত্র পঙ্গু হয়ে পড়বে। ফলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হবে যে, বাধ্য হয়ে সংশ্লিষ্ট দেশ ভারতভুক্তি প্রার্থনা জানাবে।’
ভিন দেশে ভারতের অন্তর্ঘাতমূলক কাজ এবং তার মাধ্যমে প্রতিবেশী স্বাধীন সার্বভৌম দেশ বা দেশগুলোকে ভারতের সাথে পুনরেকত্রিকরণে বাধ্য করার এই পন্থার অনুকূলে ভারত সরকারের আভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র নীতির কতটুকু মিল রয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে দেশটির থিংট্যাঙ্ক ও গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের এ সম্পর্কে সময়ে সময়ে প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধ এবং প্রকাশ্য বিবৃতি অনেককেই ভাবিয়ে তোলে।
ভাবিয়ে তোলার আরো কারণ আছে। যদিও ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অকৃত্রিম বন্ধুত্বের পরিচয় দিয়েছে তথাপি এদেশের ব্যাপারে ভারতের কিছু কিছু দল, গোয়েন্দা সংস্থা ও গণমাধ্যমের আচরণ ও মন্তব্য এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আগ্রাসী তৎপরতা সীমান্ত হত্যা ও বৈরী মনোভাব আমাদের বিচলিত করে।
‘ভারতের রাজনীতিক বুদ্ধিজীবী ও গণমাধ্যমগুলো একদিকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্ব মুছে ফেলে ভারতের বুকে লীন করার কসরত ও প্রচার প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। অপরদিকে হিন্দু ধর্মকে মুসলমানদের জন্য গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে একে সুগারকোটেড করে কখনো শান্তিবাদী, মানবতাবাদী আবার কখনো সর্বরোগের ওষুধ হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষবাদী করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতিহাস পাল্টে দেয়া হচ্ছে এবং ইতিহাসের চরম সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিদের মানবতাবাদী রূপ দিয়ে সামনে আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তারা একদিকে ভারত বিভাগকে ভুল বলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ভারত রাষ্ট্রের বুকে লীন করার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে দ্বিজাতিতত্ত্বকে অবাস্তব অবাঞ্ছিত অভিহিত করে মুসলমানদের ইসলাম থেকে সরিয়ে এনে ধর্মনিরপেক্ষ, মানবতাবাদী, শান্তিবাদী বানিয়ে হিন্দু ধর্মের সাথে লীন করার একাগ্র প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের ধারণা অনুযায়ী এটাই হচ্ছে Final Solution বা শেষ সমাধান। বিশ্লেষকদের মতে, এই শেষ সমাধানে পৌঁছার জন্য তারা শেষ যুদ্ধও শুরু করেছেন। এই শেষ যুদ্ধের একটা অংশ হচ্ছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকা- পরিচালনা করে সরকারি প্রশাসন যন্ত্রকে অকার্যকর করে দিয়ে উদ্দেশ্য হাসিল করা যা মুন্সি রাখ ঢাক না করেই পরিষ্কার বলে ফেলেছেন এবং বাংলাদেশের মানুষ হাড়ে হাড়ে যা টের পাচ্ছেন। আরেকটি অংশ হচ্ছে, বাংলাদেশকে দু’টুকরা করে হিন্দুদের জন্য স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন এবং এর বিকল্প হিসেবে নাশকতা সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশের সরকারকে অকার্যকর করে ভারতভুক্তির প্রচেষ্টা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই উভয় প্রচেষ্টাই তারা অব্যাহত রেখেছে। এক্ষেত্রে কোন কোন মহল সন্দেহ করছেন যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তারা কিছু সহযোগীও সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন যারা নাশকতা সৃষ্টিতে তাদের সহযোগিতা করছেন এবং দেশপ্রেমিক নাগরিকদের উপর নির্যাতন চালানোর ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। বলাবাহুল্য, গত ১৫ বছরে হাজার হাজার দেশপ্রেমিক নারী-পুরুষ ও ছাত্র জনতা পারিবারিক বৈঠক, বিয়ের অনুষ্ঠান, কুরআন ক্লাস, দোয়ার মাহফিল, কোচিং ক্লাস ও ইফতারের অনুষ্ঠানে যোগদানের অপরাধে গ্রেফতার হয়ে নির্যাতিত হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ- তারা সরকারের বিরুদ্ধে নাশকতার ছক তৈরির জন্য গোপন বৈঠক করছিলেন যা সম্পূর্ণভাবে অসত্য। ইন্ডিয়া ডকট্রিনের প্রণেতা ও ‘র’-এর শীর্ষ কর্মকর্তা এবং ভারতীয় থিংট্যাঙ্ক-এর অন্যতম নীতি-নির্ধারক এমবিআই মুন্সি প্রতিবেশী দেশগুলোতে নাশকতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা ও তার মাধ্যমে ভারতভুক্তির যে নকশা বাতলিয়েছেন তাকে হালকা করে দেখার কোনও উপায় নেই। কোলকাতার দৈনিক আজকাল ১৯৮৯ সালের ২২, ২৩ ও ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ৬টি জেলা নিয়ে হিন্দুদের আলাদা বাসভূমি ‘স্বাধীন বঙ্গভূমি’ প্রতিষ্ঠার ভারতীয় চক্রান্তের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে তিনটি ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। এই রিপোর্টগুলো থেকে ষড়যন্ত্রের প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। এই অবস্থায় ড. ফররুখ সেলিম বাংলাদেশের সিকিম নাটকের পুনরাবৃত্তির যে আশঙ্কা করছেন তা কি উড়িয়ে দেয়া যায়?
আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না। বাংলাদেশে ভারতের গোলামরা পরাজিত হয়েছে। ভারত এই গোলামদের যতবারই বাংলাদেশের ক্ষমতায় বসিয়েছেন ততোবারই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ চরমভাবে ভারত বিদ্বেষী হয়েছে। এর কারণ শেখ হাসিনারা দেশের মানুষের ওপর যে শোষণ, নির্যাতন ও অত্যাচার চালিয়েছে তার জন্য মানুষ ভারতকেই দায়ী করেছে। গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ভারতে পলায়ন, সেই দেশে তাকে আশ্রয় প্রদান এবং নতুন বিপ্লব ও বিপ্লবী সরকারের বিরুদ্ধে দেশটির সরকার ও গণমাধ্যমের অপপ্রচার বাংলাদেশের মানুষের উপরোক্ত ধারণাকেই সংহত করছে যা কাম্য হওয়া উচিত। আমরা সৎ প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের ভাইবোনদের সাথে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ব নিয়ে বসবাসে বিশ্বাসী। বিজেপি সরকার এই সহজ সত্যটুকু উপলব্ধি করতে পারবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। তথাপি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতীয় মিথ্যাচারসমূহের যথাযথ জবাব দেয়া জরুরি বলে আমরা মনে করে।