শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার খবরে লক্ষ জনতার সাথে রিয়াজুলও রাস্তায় নেমেছিলেন বিজয় মিছিলে। কিন্তু কে জানত ওটাই রিয়াজুলের শেষ মিছিল। কে বুঝতে পেরেছে, পতনের পরেও আওয়ামী পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের গুণ্ডারা প্রকাশ্যে তাকে গুলি করে হত্যা করবে? কিন্তু তাই ঘটেছে। গুলিবিদ্ধ রিয়াজুলকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে হাসপাতালের মর্গ থেকে ২৮ ঘণ্টা পরে স্বজনরা তার লাশ শনাক্ত করেন। রিয়াজুলকে হারিয়ে তার পরিবার এখন দিশেহারা। বাবাকে হারিয়ে একমাত্র কন্যা পাগলপ্রায়। কোনোভাবেই ছেলের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠতে পারছেন না বৃদ্ধা মা।
সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় প্রীতি গ্রুপের সোয়েটার ডিজাইনার হিসেবে চাকরি করতেন রিয়াজুল। থাকতেন জামগড়া এলাকার একটি মেসে। গ্রামের বাড়ি বরগুনার উরবুনিয়া গ্রামে। বাবার নাম হাতেম আলী হাওলাদার। রিয়াজুলের এক স্বজন জানান, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দেশজুড়ে ছাত্র-জনতা উল্লাসে ফেটে পড়ে। আনন্দ মিছিল নিয়ে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় বের হয়। সেই মিছিলে শামিল হয়েছিলেন রিয়াজুলও। আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় তাকে বিজয় মিছিল করতে দেখা যায়। বেলা সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ওই এলাকায় বিজয় মিছিলে হামলা চালায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও পুলিশ। হামলায় নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাজু আহমেদ এবং মেহেদী হাসান তুষারকে। তাদেরকে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে বিজয় মিছিলে গুলি চালাতে দেখা যায়। পুলিশও তাদের সাথে বিজয় মিছিলে গুলি চালায়। ওখানে আহত হয় অনেকেই। আহতদেরকে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আহতদের মধ্যে হাসপাতালে নেয়ার পর বেশ কয়েকজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তাদেরই একজন হলেন রিয়াজুল। ওই দিন তার কোনো খোঁজ পায়নি পরিবার এবং সহকর্মীরা। তারা বিভিন্ন হাসপাতাল ও হাসপাতালের মর্গে খুঁজতে থাকেন। ২৮ ঘণ্টা পরে তার লাশ শনাক্ত হয় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গ থেকে। রিয়াজুলের ভাই লাশটি শনাক্ত করে নিয়ে যান।
রিয়াজুলের পরিবার জানায়, একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা। রিয়াজুল সাভারে থাকলেও তার স্ত্রী, বৃদ্ধা মা ও মেয়েকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতেই থাকতেন। সামনের দিনগুলো কিভাবে কাটবে সেই দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।