১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার

রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারি ব্যাংকের পরিচালক হওয়ারা এখনো বহাল তবিয়তে

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে জায়েদ বখতের বিশ্বরেকর্ড!

রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া সরকারি ব্যাংকের পরিচালকরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এসব পরিচালকের অধিকাংশই বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে। পরিচালকদের রাজনৈতিক পরিচয় আড়াল করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পক্ষ থেকে চেষ্টাও করা হচ্ছে। যেমন রাষ্ট্রীয় খাতের বৃহত্তম ব্যাংক সোনালী তাদের ওয়েবসাইট থেকে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে কারা রয়েছেন তাদেরকে নাম ‘হাওয়া’ করে দিয়েছে। তাই সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে কারা রয়েছেন তা এখন আর ওয়েবসাইট দেখে জানা সম্ভব নয়। সোনালী ব্যাংকের সিইও ও ব্যবস্থানা পরিচালকের নির্দেশে এই কাজ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ অবস্থায় অবিলম্বে সরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করার দাবি উঠেছে।

অগ্রণী ব্যাংকে জায়েদ বখতের রেকর্ড
বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইতিহাস তো বটেই বিশ্বের কোনো ব্যাংকে মনে হয় এ ধরনের কোনো নজির আছে কি না সন্দেহ যে, কোনো ব্যক্তি একটানা ১৪ বছর একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে আছেন। এ রকম এক ব্যক্তি হচ্ছেন ড. জাহেদ বখত। ২০১২ সালের ১৯ ডিসেম্বর সোনালী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান ড. জায়েদ বখ্থত। এরপর ২০১৪ সালের ১৮ নভেম্বর তিন বছরের জন্য অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর দ্বিতীয় মেয়াদেও তিন বছরের জন্য তাকে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর তার মেয়াদ আরো তিন বছরের জন্য বাড়ানো হয়। এর পর চতুর্থ মেয়াদে এক বছরের জন্য ড. জায়েদ বখ্তকে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান করা হলো। তার পর আবারও পঞ্চম মেয়াদেও তাকে একই ব্যাংকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়া হয়। সেই থেকে তিনি বহাল তবিয়তে এই ব্যাংকেই চেয়ারম্যান পদে আছেন। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যান থাকার কারণে তিনি হয়তো বিশ্ব রেকর্ড করেছেন।

সংশ্লিষ্ট এক সূত্রে জানা গেছে, বোর্ডে জায়েদ বখতের স্বেচ্চাচারিতায় পর্ষদের অন্য সদস্যদের কথা বলার সুযোগ ছিল না বললেই চলে। তিনি বিভিন্ন সময় বড় বড় ঋণ মঞ্জুরের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছেন। তার দুর্ব্যবহারে পরিচালনা পর্ষদে থাকা একজন নারী সদস্য পর্ষদ থেকে সরে দাঁড়ান। জাহেদ বখতের সময়ে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে।

এই ব্যাংকের আরেক সদস্য হচ্ছে কাশেম হুমায়ন। আওয়ামী সাংবাদিক কোটায় তিনি অগ্রণী ব্যাংক ছাড়াও সোনালী ব্যাংকে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। সোনালী ব্যাংকে থাকার সময়ই এই ব্যাংকের ‘হলমার্ক’ কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা ঘটে। এই কেলেঙ্কারিতে তার সংশ্লিষ্টরা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি আবার অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে তিনি ঋণ বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের হস্তক্ষেপ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অগ্রণী ব্যাংকের আরেক পরিচালক হচ্ছেন কে এম এন মঞ্জুরুল হক লাবলু। গোপালগঞ্জ নিবাসীয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য এই ব্যক্তি ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকা সত্ত্বেও শুধু দলীয় বিবেচনায় অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য করা হয়েছে।

অগ্রণী ব্যাংকের বোর্ডের আরেক সদস্য হচ্ছেন- মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী। কুমিল্লা নিবাসী মাসুদ রানা বর্তমানে ইআরডির যুগ্ম সচিব পদে রয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের আরেক সদস্য হচ্ছে নাফিউল হাসান। অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দফরের মহাপরিচালক-১ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/855496