পুলিশ বাহিনীর নেতৃত্বে থাকা উচ্চাভিলাষী ও অপেশাদার কিছু সদস্য এখনো সক্রিয় রয়েছে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার জন্য। তাদের প্ররোচনায়ই এখনো দাবি আদায়ের নামে নানা ষড়যন্ত্র করছে একটি চক্র। তারা রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স, বিভিন্ন ব্যারাক ও জেলায় নানামুখী উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার করে আসছে। এমনকি তারা ইউনিফর্ম না পরাসহ কর্মবিরতি পালন করছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিতদের মধ্যে পুলিশ কনস্টেল সোয়াইবুর রহমান জয়কে নেতৃত্বে থাকতে দেখা গেছে। সে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের উস্কানি দিয়ে পুলিশের কথিত নেতা হয়ে উঠেছে। পুলিশ থিয়েটারের একজন সামান্য সদস্য হলেও তার ওঠাবসা এবং যোগাযোগ ছিল অনেক উপর মহলে। যাদের নির্দেশেই সে এখনো সক্রিয়ভাবে পুলিশ সদস্যদের নানাভাবে উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে।
জয় সম্পর্কে সাধারণ পুলিশ সদস্যরা জানান, ঢাকা মহানগর পুলিশের ওএসডি হওয়া সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানের প্রেতাত্মা এই জয়। সে হাবীবের গৃহপালিত হিসেবে পরিচিত। এই কনস্টেবল ‘পুলিশ থিয়েটার’এর সদস্য। হাবিবুর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত ‘অভিশপ্ত আগস্ট’ নামের মঞ্চনাটকে ‘শেখ কামাল’-এর চরিত্রে অভিনয় করে জয়। এখনকার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ‘কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি’র নেতা হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেছে সে। পুলিশের বিশৃঙ্খলা তৈরির উদ্যোগ হিসেবে তার নাম দিয়ে উস্কানিমূলক নানা বার্তা পাঠানো হচ্ছে সাধারণ পুলিশ সদস্যদের কাছে। বিভিন্ন জনের হোয়াটসআপ ম্যাসেঞ্জারেও সে এই বার্তা পাঠিয়েছে।
বার্তা পাওয়া রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের একজন এএসআই জানান, একজন পুলিশ কনস্টেবলের পক্ষে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছাকাছি যাওয়া কঠিন। তবে নাট্যদলের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন সময়ে কমিশনারসহ অনেক উচ্চ পদস্থদের কাছাকাছি থাকত জয়। শোয়াইবুরের নাম দিয়ে আওয়ামী পুলিশের প্রভাবশালী কয়েকজন কর্মকর্তা পেছন থেকে এসব করাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অপর এক সাব ইন্সপেক্টর বর্তমান অস্থিরতার জন্য পুলিশের গোপালগঞ্জ বেল্টের কর্মকর্তাদের দায়ী করে বলছেন, ‘হাবিব স্যার অনেক লোক নিয়োগ দিয়ে গেছেন। তিনি নিয়োগ পদোন্নতিতে বেশুমার জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। করেছেন ঘুষবাণিজ্য। পুলিশের শৃঙ্খলা ফিরলে, সংস্কার হলে হাবিব স্যারদের আর আধিপত্য থাকবে না। কাউকে কাউকে জেলেও যেতে হতে পারে। বিচারের মুখোমুখি হতে হবে উচ্চাভিলাষী অনেক অপেশাদার পুলিশ কর্মকর্তার। মাঠপর্যায়ে অতি উৎসাহী অনেকেই বিচারের ভয়ে শঙ্কিত। তাই বিষয়গুলো বুঝতে পেরে তারা পরিস্থিতি ঘোলা করার অপচেষ্টা করছে। তারা জানেন, পুলিশ ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে এই সরকারের পক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব না।
ছাত্র-জনতা খুনের জন্য আওয়ামীপন্থি পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়ী করে এক সাব-ইন্সপেক্টর বলছেন, ‘তারা আমাদের গুলি করতে বাধ্য করেছে। রাবার বুলেটের পরিবর্তে লিথ্যাল (প্রাণঘাতী) অস্ত্র ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের কারণে অনেক ছাত্র-জনতা মারা গেছে। এখন ছাত্র-জনতা হত্যার বিচার করতে হলে তারা সবার আগে ফাঁসবেন। তাই নিজেদের দায়মুক্তি আদায়ের জন্য তারা পুরো ফোর্সকে উস্কানি দিচ্ছেন।
সর্বশেষ ৯ ও ১০ আগস্ট কনস্টেবল শোয়াইবুরের নামে যে নির্দেশনাটি পুলিশ সদস্যদের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়েছে তা শেয়ার করেন এক পুলিশ সদস্য। সেখানে বলা হয়েছে, কর্মবিরতি চলছে, চলবে; কেউ গায়ে ইউনিফর্ম লাগাবেন না; নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে লাইনে সিভিল পোশাকে ডিউটি চলবে; লাইনের বাইরে কেউ ডিউটিতে যাবে না; যে যেখানে আছেন, সে সেখানে অবস্থান করবেন; ঢাকার মধ্যে যারা আছেন, তারা রাজারবাগে উপস্থিত হবেন; ১১ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে; ভয়, হুমকি, গরহাজির একযোগে প্রতিহত করবেন।