দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম এখনো সচল হয়নি। এ পরিস্থিতিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো দেশের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রাস্তা পরিষ্কারের কাজও করছে তারা। আবার কেউ কেউ দেওয়ালে দেওয়ালে নতুন শিল্পকর্মও আঁকছেন। শুধু তাই নয়, ডাকাত আতঙ্কে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সারারাত পাহারা দিতেও দেখা গেছে তাদের। শিক্ষার্থীদের কাজে স্থানীয় ও বিভিন্ন পেশার লোকজনকে সাহায্য করতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ খাবার ও পানি নিয়েও এগিয়ে এসেছেন।
শুক্রবার চতুর্থ দিনের মতো রাজধানীর ধানমন্ডি, কলাবাগান, শাহজাহানপুর, মালিবাগ, শান্তিনগর, মগবাজার, মোহাম্মদপুর, সায়েন্সল্যাব, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, শাহবাগ, আগারগাঁও, মিরপুর ১০ নম্বর, মিরপুর ১২ নম্বরে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। সিগন্যালগুলোতে শিক্ষার্থীরা পালা করে দায়িত্ব পালন করছেন। কয়েক জায়গায় তাদের সঙ্গে আনসার সদস্যও দেখা গেছে। ছুটির দিনে বাসের সংখ্যা অন্য সময়ের চেয়ের কম। তবে ব্যক্তিগত যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, মোটরসাইকেল চলাচল বেশি দেখা গেছে। তবে কোনো যানবাহন সন্দেহজনক মনে হলে শিক্ষার্থীরা গাড়িটি চেক করছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা ঝাড়ু দিয়ে, আবর্জনা সরিয়ে ফেলতে দেখা গেছে।
এদিন নিউ এলিফ্যান্ট রোডে ওষুধ পরিবহণের একটি গাড়ি থেকে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে কেইস ফাইল ও বিচার বিভাগের বিভিন্ন নথি পাওয়া যায়। গাড়িটি সন্দেহজনক মনে হলে তারা থামিয়ে চেক করেন।
এ সময় ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা ইউল্যাব ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী জেসমিন বলেন, আমরা সড়কে নিরাপদ ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে দায়িত্ব পালন করছি। শিফট করে দায়িত্ব ভাগ করে কাজ করছি। এতে মানুষের বেশ সাড়া পাচ্ছি।
ধানমন্ডি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা তারিকুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে সড়কের সৌন্দর্য ফিরিয়ে এনেছে। পাশাপাশি ট্রাফিক ব্যবস্থায় এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন।
মিজানুর রহমান নামে এক অভিভাবক জানান, শিক্ষার্থীরা সড়কে বাসের আলাদা লাইন ও নির্দিষ্ট স্থানে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা, ইমারজেন্সি লাইন ও ব্যক্তিগত পরিবহণের লাইন তৈরি করেছে। এতে সড়কে একটা শৃঙ্খলা বিরাজ করছে। তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার রয়েছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনে ন্যায্যতার দাবিতে সড়কসহ দেওয়ালে দেওয়ালে লেখা বিভিন্ন স্লোগান মুছে ফেলতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি আগামীর বাংলাদেশ সংস্কারের নানা স্লোগান ও বিভিন্ন শিল্পকর্ম আঁকছেন তারা। এসব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আন্দোলন চলাকালে লেখা অশোভন ও রাজনৈতিক স্লোগান সাদা রং দিয়ে মুছে ফেলছেন তারা। আবার সেখানেই নতুন করে আঁকছে বিভিন্ন শিল্পকর্ম। সেই সঙ্গে দেশ সংস্কারের অভিনব সব স্লোগানও লিখছেন তারা। রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী রায়হান বলেন, আমাদের মতো করেই দেশটাকে সাজাতে চাই। তাই দেওয়ালে সংস্কার ও নতুন বাংলাদেশের স্লোগান লিখছি।
এদিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর, বাড্ডা ও উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে। মধ্যরাতে একাধিক আবাসিক এলাকার মসজিদ থেকে সতর্কতা জানিয়ে মাইকিং করা হয়। প্রতিরোধে শিক্ষার্থীরা সারারাত রাস্তা ও গলি পাহারা দেন। এসব এলাকায় কয়েক দিন ধরে সন্ধ্যার পর ছিনতাই, চাঁদাবাজি বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা।
মোহাম্মদপুর আলিয়া মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থী জানান, স্থানীয় বাসিন্দারা দুর্বৃত্ত ও ডাকাত আতঙ্কে রাত পার করেন। তাই আমরা শিফট করে রাস্তা ও বিভিন্ন গলি পাহারা দিচ্ছি। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর থেকে থানাগুলোতে পুলিশ কম। বিভিন্ন জায়গায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি চলছে। বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি, হামলা, লুটপাটের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া বড় বড় মার্কেট ও দোকানপাট খোলেনি। মূলত মুদি দোকান, পাড়ার হোটেল, কাঁচাবাজারসহ গলির বাজারগুলো স্বাভাবিক চলছে।