নতুন সরকারের প্রথম দিনেই বাজারে স্বস্তিভাব বিরাজ করছে। রাস্তায় চাঁদাবাজি নেই। দীর্ঘদিন ধরে দামের দিক থেকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছিল সব ধরনের সবজি। বলতে গেলে বাজারে ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজিই ছিল না। বিক্রেতারা অভিযোগ জানিয়ে আসছিল রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজি বিষয়ে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে কোথাও নেই কোনো চাঁদাবাজি। সে কারণে বাজারে আগের চেয়ে কমতে শুরু করেছে সবজির দাম। রাজধানীর বাজারগুলোতে সপ্তাহ ব্যবধানে সব ধরনের সবজি ও মাছের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ৩০ টাকা কমে ১৬৫ টাকা থেকে ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে এখনও যেসব সবজির দাম বেশি সেটির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কিছু কিছু সবজির এখন মৌসুম নেই, সে কারণে সেগুলোর দাম কিছুটা বেশি। এদিকে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন কাজ করছেন বাজার নিয়ন্ত্রণেও। দোকানে পণ্যের মূল্যতালিকা লাগানো, ট্রেড লাইসেন্স চেক করা, যৌক্তিক দামে পণ্য বিক্রি করা, নিজ দোকানের সামনে পরিচ্ছন্ন রাখা ও নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কি না, সব বিষয়ে নজরদারির কাজ করছেন তারা।
বাজারে শিক্ষার্থীদের এমন উপস্থিতিতে প্রশংসা জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষ। তবে কোনও কোনও বিক্রেতা জানিয়েছেন, কাঁচাবাজারে মূল্য নির্ধারণ করা কঠিন। তারা দোকানে দোকানে গিয়ে যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন, বলছেন মূল্যতালিকা লাগানোর জন্যও। মুদি, মাছ, গোশতের দোকানে মূল্যতালিকা লাগানোর কথা বলছেন।
তবে মাছ বিক্রেতারা বলছেন, মাছের দোকানে সবার মূল্যতালিকা লাগানো যৌক্তিক নয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সময় দেওয়া শিক্ষার্থীদের একজন আবু নাইম জানান, ‘আমরা চাই দেশের সঙ্গে বাজারেও পরিবর্তন আসুক। আমরা চেষ্টা করছি তারা যাতে যৌক্তিক দামে পণ্য বিক্রি করে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, গ্রীষ্মকালীন সবজি কচুরমুখীর কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপের কেজি ৫০ টাকা, ধুন্দল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা এবং শসার কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা। ফুলকপি প্রতিটি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাকা টমেটোর কেজি প্রকারভেদে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা এবং গাজরের কেজি ২০০ টাকা। লেবুর হালি ১৫ থেকে ৩০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, কলার হালি ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
এ ছাড়া বাজারগুলোতে লাল শাক ১৫ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ১৫ টাকা, পালং শাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, কলমি শাক ১০টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বাজারগুলোতে দেশী পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১২৫ টাকা এবং আলু ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কেজিতে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা বেড়ে কাঁচামরিচ ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছিল ১৬০ টাকা দরে।
সবজির দামের বিষয়ে রাজধানীর মগবাজার এলাকার সবজি বিক্রেতা আব্দুর রহমান বলেন, আগের চেয়ে সবজির দাম কমেছে। আগে থেকেই সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছিল তবে কয়েকদিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, কারফিউ নানা কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সবজি পরিবহন করা যাচ্ছিল না। সে সময় আরও বেড়ে গিয়েছিল সব ধরনের সবজির দাম। সেই তুলনায় কমে আসতে শুরু করেছে সবজির দাম। এছাড়া আরও একটি বড় কারণ হলো আগে রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজি হতো, দোকান বসলে টাকা দিতে হতো, পিকআপে করে সবজি আনার সময় ট্রাফিকসহ বিভিন্ন জায়গায় খরচ হতো। বর্তমানে সেই খরচটি নেই সে কারণে আগের চেয়ে তুলনামূলক কম দামে আমরা সবজি বিক্রি করতে পারছি।
রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজির বিষয়টি উল্লেখ করে সবজি ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, একটি ট্রাক যেখান থেকে প্রথমে সবজি নিয়ে আসে সেখান থেকে চাঁদা দেওয়া শুরু হতো, এরপর রাস্তায় রাস্তায় ট্রাফিকসহ বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা নিতো। এরপর কারওয়ান বাজার ঢোকার পরে বিভিন্নভাবে আলাদা আলাদা জায়গায় টাকা দিতে হতো। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এসব মাল কেনার পর ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় যেতে তাদেরও বিভিন্নভাবে চাঁদা দিতে হতো। এরপর যেখানে সবজির ভ্যান গাড়ি অথবা দোকান বসে সেসব জায়গাতেও স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রতিদিন রাস্তা খরচ, লাইন ম্যান বাবদ টাকা নিতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে কিছুদিন ধরে এসব কোনো টাকা দিতে হচ্ছে না, কেউ কোনো ধরনের চাঁদাবাজিও করছে না। ফলে সব ধরনের সবজির দাম আগের তুলনায় কমে আসতে শুরু করেছে।
সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ৩০ টাকা কমে ব্রয়লার মুরগি ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ব্রয়লার ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। সোনালি মুরগিও কেজিতে ১০ টাকা কমে ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি হাইব্রিডের কেজি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩৩০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে গরুর গোশতের কেজি প্রতি ৬৫০ থেকে ৭৮০ টাকা, গরুর কলিজা ৭৮০ টাকা, গরুর মাথার গোশত ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির গোশতের কেজি প্রতি ১ হাজার ১৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়, হাঁসের ডিমের ডজন ১৯০ টাকায়। দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
মাছের বাজারে দেখা যায়, ৫০০ গ্রামের ইলিশ মাছের কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা এবং ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশের কেজি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাষের শিংয়ের (আকারভেদে) কেজি ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, রুই (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা, মৃগেল ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৯০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পোয়া মাছ ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাবদার কেজি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২১০ থেকে ২২০ টাকা, মলা ৬০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১ হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকা, পাঁচমিশালি ২২০ টাকায়, রূপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকা, বাইম মাছ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, দেশি কই ১ হাজার ২০০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, আইড় ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে ৮০০ টাকা এবং কাইক্ক্যা ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুদি দোকানের পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। প্যাকেট পোলাওর চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাওর চাল মানভেদে ১১০ থেকে ১৪০, ছোট মুসরডাল ১৩৫, মোটা মুসরডাল ১১০, বড় মুগডাল ১৬০, ছোট মুগডাল ১৮০, খেসারি ডাল ১০০, বুটের ডাল ১৩০, ডাবলি ৮০, ছোলা ১১৫ ও মাষকলাই ডাল ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৭, কৌটাজাত ঘি ১৩৫০, খোলা ঘি ১২৫০, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫, খোলা চিনি ১৩০, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রিহচ্ছে। এ ছাড়া এলাচি ৪৫০০ টাকা, দারুচিনি ১৫০, লবঙ্গ ১৬০০, সাদা গোল মরিচ ১৬০০ ও কালো গোলমরিচ ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
