মাত্র এক মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্স কমেছে ২৫ দশমিক ২০ শতাংশ। গত জুন মসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার। এক মাসের ব্যবধানে জুলাইতে তা কমে নেমেছে ১৯০ কোটি ডলারে। সে হিসেবে এক মাসেই কমেছে ৬৪ কোটি ডলার, যা টাকার অঙ্কে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরের পর ১০ মাসের মধ্যে এত কম রেমিট্যান্স আর কোনো মাসে আসেনি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।
রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশজুড়ে কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সৃষ্ট উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। এ দিকে দীর্ঘ দিন ধরে প্রতি মাসের প্রথম কার্যদিবসে আগের মাসের রেমিট্যান্সের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা প্রকাশ করেনি। বিকেলে সাংবাদিকরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো: মেজবাউল হকের কাছে রেমিট্যান্সের তথ্য জানতে চাইলে বলেন, এখনো প্রতিবেদন কমপ্লিট হয়নি। কাজ চলছে, কমপ্লিট হলে জানানো হবে। পরে বিকেল ৫টার দিকে প্রতিবেদন প্রকাশ না করে সংক্ষিপ্তভাবে শুধু জুলাই মাসে কত ডলার এসেছে, তা হোয়াটসঅ্যাপে দেন।
রেমিট্যান্স প্রবাহের বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসভিত্তিক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গেল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস (২০২৩ সালের) জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ, সেপ্টেম্বর মাসে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ। এর পর থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তেই থাকে। যেমন- অক্টোবরে রেমিট্যান্স আসে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ, নভেম্বর ১৯৩ কোটি, ডিসেম্বরে ১৯৯ কোটি ১২ লাখ, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ, মার্চ মাসে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, এপ্রিলে এসেছে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মে মাসে এসেছে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ এবং সর্বশেষ জুন মাসে রেমিট্যান্স আসে ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার। গত ১০ মাস পর রেমিট্যান্স প্রবাহ আবারো কমে নেমেছে ১৯৭ কোটি ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, কেউ বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় দেশে পাঠিয়ে থাকলে ব্যাংকগুলো তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিতরণ করতে বাধ্য। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশের প্রবাসী আয় প্রেরণকারী রেমিট্যান্স হাউজগুলো যদি এ আয় ধরে রাখে, তা হলে তা দেশে আসতে কিছুটা সময় লাগে। তবে এ ক্ষেত্রে সাধারণত দুই-তিন দিনের বেশি সময় লাগে না। এ দিকে প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ১২ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ডেকে প্রবাসী আয় বাড়াতে জোর দেয়ার তাগিদ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয় সংগ্রহে প্রতি ডলার ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায় সংগ্রহ করে আসছিল। প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার তাদের কিছুটা বাড়তি দাম দিয়ে হলেও বৈধ পথে আয় বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়। ফলে প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম ১২০ টাকায় উঠেছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, রেমিট্যান্সের ডলারের দাম বেড়ে গেলে সাধারণ রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু গত মাসে কমে যাওয়ায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বৈধ পথে অর্থাৎ ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হলে হুন্ডি প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রাবাজার তদারকি বাড়াতে হবে। এতে রেমিট্যান্স প্রবাহের নিম্নগতির ধারা ফেরানো যাবে বলে মনে করছেন তারা।