গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৪৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার। এ বৃষ্টিতেই তলিয়ে গেছে নগরের অলিগলি ও মূলসড়ক। কোথাও কোমরসমান আবার কোথাও হাঁটুসমান পানি জমেছে। এতে বিফলে যাচ্ছে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ। নিম্নাঞ্চলের বাসা-বাড়ি ও দোকানপাট পানিতে একাকার। শ্রমিকসহ কর্মস্থলগামী এবং খেটে খাওয়া মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। বেশি ভাড়ায় রিকশা ও ভ্যানে চড়ে অনেকে পানি পার হতে দেখা গেছে। এসময় গাড়ি চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী।
চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আলী আকবর বলেন, দুপুর ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস ১৪৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে। সকাল ৯টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় যা ছিল ১১২ মিলিমিটার। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে নগরের পাঁচলাইশ, বহদ্দারহাট, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, মুরাদপুর, শোলকবহর, ২ নম্বর গেট, জিইসি, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, হালিশহর, আগ্রাবাদ ও সল্টগোলাসহ বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
সরেজমিনে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুরাদপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কোমর পানি মাড়িয়েই কর্মস্থলে ছুটছেন কর্মজীবী মানুষজন। জলাবদ্ধতার কারণে খানিক দূরত্বেও যেতে চাইছিলেন না রিকশাওয়ালা। আর কেউ যেতে রাজি হলেও ৫ মিনিটের পায়ে হাঁটা দূরত্বে ভাড়া হাঁকাচ্ছিলেন ৫০ টাকা। আশেপাশের দোকানপাটও ছিল পানিতে টইটম্বুর।
খাতুনগঞ্জের ডাল ব্যবসায়ী পরিতোষ দে জানান, ভারী বৃষ্টিতে নিচু এলাকার আড়ত ও দোকানে পানি ঢুকেছে। তবে যারা আড়ত ও গুদামের মেঝে উঁচু করতে পেরেছেন, সামনের ও পেছনের অংশে পানিরোধক দেয়াল দিতে পেরেছেন তারা রক্ষা পেয়েছেন। নতুন যেসব ভবন তৈরি করা হয়েছে সেগুলো ভরা জোয়ারের পানিতেও যাতে অসুবিধা না হয় সেভাবে উঁচু করা হয়েছে।
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা সৃষ্টি হওয়ায় চট্টগ্রামে বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এ অবস্থায় পাহাড়ধসের সতর্কবার্তা থাকলেও পাহাড় ছেড়ে কেউ যায়নি আশ্রয়কেন্দ্রে। আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করেছে। সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
একইসাথে উত্তর বঙ্গোপসাগর, উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে। কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
এদিকে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় নগরের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোতে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির তথ্যমতে, নগরের ২৬টি পাহাড়ে ৬ হাজার ৫৫৮টি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি আছে আকবরশাহ থানাধীন ১, ২ ও ৩ নম্বর ঝিলসংলগ্ন পাহাড়গুলোতে। পাহাড়ধসের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই পরিবারগুলো সেখানে বসবাস করছে। নগরের লালখান বাজার টাংকির পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা বাসা ছেড়ে কিছু বাসিন্দা লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে চলে এসেছে বলে জানা গেছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনরায় খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন শীর্ষক সিডিএ’র প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী। বাকি তিন প্রকল্পের মধ্যে ১ হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে নগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
দুই হাজার ৭৪৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকার কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাকতাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। এ ছাড়া এক হাজার ৩৭৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বহদ্দারহাটের বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সিটি করপোরেশন। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন হচ্ছে না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।