৩১ জুলাই ২০২৪, বুধবার

মিথ্যা তথ্য দিয়ে গণগ্রেফতারে নাম দেয়ার অভিযোগ

প্রমাণ পেলে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে : পুলিশ

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে দেশব্যাপী চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গণগ্রেফতার অভিযান। এই সুযোগে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য গণগ্রেফতারের তালিকায় প্রতিপক্ষের নাম ঢুকিয়ে দেয়ার একাধিক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নাটক সাজিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করছেন। পুলিশের সোর্স পরিচয়ে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। থানায় থানায় চলছে ধরপাকড়ের বাণিজ্য। এতে করে অনেক নির্দোষ ব্যক্তি গ্রেফতার হয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আবার অনেকে গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন জায়গায়। সম্প্রতি মহানগর ডিবি কার্যালয়ে আসা স্বজনদের অনেকের কাছ থেকেই এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তবে এ ব্যাপারে জড়িতদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম-কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার।

নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তিনি ছিলেন খাগড়াছড়ি। ৩-৪ দিন পর কারফিউ শিথিল হলে ভেঙে ভেঙে ঢাকা ফিরে জানতে পারেন তিনি ডেমরা থাানায় দায়ের হওয়া অগ্নিসংযোগের মামলার আসামি। অনেকটা অবাক হয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন মোস্তফা নামক তার এক প্রতিবেশী খন্দকার আজমল নামে তার এক ভাড়াটিয়াকে দিয়ে ডেমরা থানায় একটি মিথ্যা মামলা (নং-১৮ তারিখ ২২-৭-২৪) দায়ের করেছেন। ওই মামলায় ২৫ জন আসামির মধ্যে তিনি একজন। মামলায় উল্লেখ করা হয় গত ২০ তারিখ (যদিও ২০ তারিখ ছিল শনিবার) জুমার নামাজের পর দুষ্কৃতকারীরা তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। ইমতিয়াজ আরো বলেন, খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন অবৈধ সুযোগ নিতে গত ২১ তারিখ রোববার নিজেরাই কিছু খড়কুটায় আগুন ধরিয়ে (যার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে) পেছনের তারিখ ২০ তারিখ দিয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। কারণ ওই দিন ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে মোস্তফা কামাল সড়ক ও জনপথের অ্যাকোয়ার করা জমি দখল করে পুরনো স্পিডবোট মেরামতের ব্যবসা করছেন। তার চার পাশের জমির মালিকদের মধ্যে ইমতিয়াজসহ অন্যরা। এই মিথ্যা মামলা দিলে অন্য জমির মালিকরা দূরে সরে যাবে। আর তখন মোস্তফা তাদের জমিও দখল করতে পারবে। এমন ধারণাতে হয়রানি করতে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা দায়ের করিয়েছেন। এ ব্যাপারে আমরা পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। যাতে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার না হন।

মোহাম্মদপুর আজিজ মহল্লার বাসিন্দা রাজিয়া বলেন, মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের মাদক কারবারিরা পুলিশ সোর্সদের দিয়ে তার ভাই তদন্তচিত্র পত্রিকার সম্পাদক তাহের আহমেদ তাহেরী ও তার ভাগনে সাদ্দামকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে। কারণ তাহেরী মোহাম্মদপুর ও জেনেভা ক্যাম্পের মাদক কারবার নিয়ে অনেক রিপোর্ট করেছে। সে কারণে মাদক কারবারিরা ভাগনেসহ তাহেরীকে ফাঁসাতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।

আঁটিবাজারের শারমিন আক্তার বলেন, তার অস্স্থু স্বামী বেকারি ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিনকে নামাজরত অবস্থায় ধরে নিয়ে আসছে ডিবি পুলিশের একটি দল। ধারণা করছি ব্যবসা অথবা জমিসংক্রান্ত কোনো বিরোধের কারণে প্রতিপক্ষের কেউ তাকে ধরিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া নাজিম উদ্দিনকে গ্রেফতারের কোনো কারণ আমরা খুঁজে পাচ্ছি না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিপ্লব কুমার বলেন, এ ধরনের কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ সদস্য হলে তাকে শুধু প্রত্যাহার নয়, তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/852107