কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গ্রেফতার ১৭ বছরের শিক্ষার্থী হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে রিমান্ডে নেয়ার ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদের উদ্দেশ্যে বলেন, আজ রোববার (গতকাল) সন্ধ্যার মধ্যে ফাইয়াজের বাবা-মাকে খুঁজে বের করে তার জামিনের বিষয়ে দরখাস্ত দাখিল করতে। আদালত আরো বলেন, বাচ্চা ছেলে। আপনার বাচ্চা হলে কি করতেন?
আদালত অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেটিকে আজকে সন্ধ্যার মধ্যে বাবা-মার কাছে হস্তান্তর করতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেন। আদালত বলেন, সে বাবা-মার কাছে থাকবে।
রোববার দুপুরে আইন লঙ্ঘন করে ফাইয়াজকে দড়ি বেঁধে পুলিশ ভ্যানে তোলা এবং রিমান্ডে নেয়ার বিরুদ্ধে জনস্বার্থে দায়ের করা একটি রিট আবেদন বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকার ও বিচারপতি মো: মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য উপস্থাপন করেন আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ হাইকোর্টকে বলেন, মাই লর্ড, ওই শিশুটিকে রিমান্ডে নেয়া হবে না। তার পরিবার আদালতে জামিন আবেদন নিয়ে গেলে তা বিবেচনা করা হবে। আর এ ক্ষেত্রে শিশু আইন পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এ সময় হাইকোর্ট বলেন, আমরা টিভি চ্যানেলে দেখেছি, তার বাবা সব ডকুমেন্টস দেখিয়েছে যে ছেলেটির বয়স ১৭। কিন্তু তা ম্যাজিস্ট্রেট বিবেচনা (কনসিডার) করেনি! কাজ একটা করে তা হালাল করার জন্য জেদাজেদি করবেন? বিষয়গুলো যেন এমন না হয়।
এ সময় আদালত বলেন, ঠিক আছে অনেক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, কিন্তু এমন দুই-একটা ঘটনার জন্য পুরো বিষয়টিই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। বিচারকের এমন অপকর্মের কারনে বিচারও প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলেও মনে করেন আদালত।
একপর্যায়ে হাইকোর্ট রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে বলেন, বাচ্চাটা আপনার হলে কী করতেন? তাই এ বিষয়ে আজই পদক্ষেপ নিন। আমরা আজ কোনো আদেশ দিচ্ছি না। আগামীকাল বিষয়টি শুনানির জন্য থাকবে।
আদালত থেকে বের হয়ে আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, বিভিন্ন পত্রিকায় ছবি দেখে, যে একজন শিশুকে এভাবে দড়ি বেঁধে পুলিশ ভ্যানে তুলছে, এটি দেখে সকাল বেলাই আমরা বিচারপতিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। তখন আদালত বলেছেন, পিটিশন আকারে নিয়ে যেতে। পিটিশন নিয়ে গেলাম। শিশু আইন ২০১৩ যেটি আছে, এই আইনের কতগুলো স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। কাউকে যদি গ্রেফতার করতে হয় তাহলে পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে তার বয়স ১৮ বছরের বেশি কিনা।
রিমান্ডের বিষয়ে অনেক নিয়ম আছে। আইনে স্পষ্ট করে বলা আছে, কোনো শিশুকে হাতকড়া পরানো যাবে না।
আজকে আদালত মৌখিক আদেশ দিয়েছেন, কালকে রিটটি শুনানির জন্য তালিকায় আসবে।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোর্শেদ বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, আটক ব্যক্তি মাইনোর, তাকে রিমান্ডে নিতে পারে না। হাইকোর্ট বলেছেন, তার রিমান্ড বাতিল করে বাবার মার হেফাজতে দিতে। তাকে রিমান্ডে নেয়ার সুযোগ নেই।
গত শনিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ফাইয়াজের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষাপটে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়।
জন্মনিবন্ধন অনুসারে, হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের জন্ম ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল। ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকার শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে সে। বর্তমানে ঢাকা কলেজের প্রথম বর্ষের এই শিক্ষার্থীকে গত শনিবার ঢাকার নিম্ন আদালতে হাজির করা হয়। মামলার এজাহারে ফাইয়াজের বয়স দেখানো হয়েছে ১৯ বছর। গত ২৪ জুলাই রাতে ফাইয়াজকে মাতুয়াইলের বাসা থেকে সাদা পোশাকে একদল লোকজন এসে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে ধরে নিয়ে যায় বলে জানান তার পরিবার।
রিমান্ডের আদেশের বিষয়ে ফাইয়াজের আইনজীবী ইশতিয়াক হোসেন গত শনিবার গণমাধ্যমকে বলেন, জন্মনিবন্ধন ও এসএসসির সার্টিফিকেট অনুসারে, ফাইয়াজের বয়স ১৭ বছর ৩ মাস ৮ দিন। যাত্রাবাড়ী থানার এ মামলায় আদালতে ফাইয়াজের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আমরা বয়সের কারণে রিমান্ড বাতিলের আবেদন করি এবং মামলাটি শিশু আদালতে প্রেরণের আবেদন করি। তবে আদালত অপারগতা প্রকাশ করে শিশুটিকে সাত দিনের রিমান্ড দিয়েছেন।