২৮ জুলাই ২০২৪, রবিবার

১ বছরে রিজার্ভ থেকে বিক্রি ১২.৬৯ বিলিয়ন ডলার

বিলাসজাত পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য পণ্য আমদানিতেও ব্যাংকগুলোকে সতর্ক হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এরপরও ডলার সঙ্কট মেটাতে বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বিক্রি করেছে ১ হাজার ২৬৯ কোটি বা ১২ দশমিকি ৬৯ বিলিয়ন ডলার। এর ফলে কমে গেছে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ডলার সঙ্কটের কারণে গত অর্থবছরে নানাভাবে আমদানির হ্রাস টেনে ধরার চেষ্টা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ করে বিলাসজাতপণ্যসহ নানা অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করা হয়। এর ফলে গত অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) পণ্য আমদানির প্রবৃদ্ধি হয় ঋণাত্মক ১৩ শতাংশের ওপরে। ১১ মাসে পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয় ৬ হাজার ৭৩ কোটি ডলার, যেখানে আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল প্রায় ৭ হাজার কোটি ডলার। আবার একক মাস হিসেবে গত মে মাসে পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ৫৫২ কোটি ডলার, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ৬৪৬ কোটি ডলার। গত মে মাসে পণ্য আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১৫.৬০ শতাংশ। ব্যাপকভিত্তিতে আমদানি কমলেও পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি ২ হাজার ২২ কোটি ডলারে পৌঁচেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ১১ মাসে পণ্য রফতানির মাধ্যমে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৭৩৪ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩ হাজার ৯৬৮ কোটি ডলার। অর্থাৎ ১১ মাসে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক প্রায় ৬ শতাংশ। ফলে ১১ মাস শেষে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ২ হাজার ২২ কোটি ডলার।

আমদানি ব্যয় নানাভাবে কমানোর পরেও পণ্যবাণিজ্য ঘাটতি ২ হাজার বা ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে চলে যায়। বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কটের কারণে ডলারের দামও বেড়ে যায়। গত বছরের ১০ জুলাই যেখানে প্রতি ডলার পেতে ব্যয় করতে হতো ১০৮ টাকা, সেখানে চলতি বছরের একই সময়ে তা বেড়ে হয়েছে ১১৮ টাকা। যদিও এ দরে কেউ ডলার ক্রয় করতে পারছে না। ক্ষেত্রবিশেষ প্রতি ডলার পেতে ১২৩ টাকা থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হচ্ছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, গেল অর্থবছরজুড়েই বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিসিআইসির সার, বিপিসির জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য সরকারি অতি প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য সরকারি ব্যাংকগুলোকে বৈদেশিক মুদ্রার সহায়তা দিয়েছে। এর পরও গত অর্থবছর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করতে হয়েছে। আগের বছরে ছিল ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার।

এদিকে ব্যয়ের তুলনায় সামগ্রিক বৈদেশিক মুদ্রার আয় না হওয়ায় সামগ্রিক লেনদেনে ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) সামগ্রিক লেনদেনের ঋণাত্মক পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮৮ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৮৮০ কোটি ডলার। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সামগ্রিক লেনদেন ঘাটতি বেড়ে যাওয়া মানেই হলো দেশে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসছে, তার চেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিশোধ ঝুঁকি এড়াতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। ফলে এটি রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ থেকে উত্তরণের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার আন্তঃপ্রবাহ বাড়ানোর বিকল্প নেই। এ জন্য রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একই সাথে বিদেে দেশীয় পণ্যের নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করতে হবে। রফতানি পণ্যের বাজার বহুমুখীকরণ করতে হবে। এতে বেড়ে যাবে রফতানি আয়। এর ফলে রিজার্ভের ওপর চাপ কমে যাবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/851412