আমার ছেলে তুষারের বয়স ২১ হবে। সে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। তাকে রাত ৩টায় ডেমরা থানার পুলিশ এসে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। আমি জানি না আমার ছেলে কি করছে। গত কয়েকদিনের আন্দোলনেও যায়নি। গতকাল শুক্রবার দুপুরে আদালত চত্ত্বরে তুষারের মা মমতাজ বেগম ছেলেকে দেখার জন্য ঢাকার চিফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট চত্বরের অপেক্ষা করেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, শুক্রবার ১২টার দিকে আদালতে ছেলের জন্য এসেছি। সে গাড়ি থেকে আমাকে দেখেই মা মা বলে চিৎকার করছিল। গতকাল আদালত চত্বরে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার ব্যক্তিদের স্বজনদের ভিড়। কারও মা-বাবা, কারও ভাই কারও বোন কিংবা অন্যান্য আত্বীয়রা অপেক্ষা করছেন। তাদের অনেকে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন।
অন্যদিকে পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল আদালতে হাজির করলে ঢাকা মহানগর হাকিম শাকিল আহমেদ এ আদেশ দেন। গত ১৮ জুলাই ঢাকার সেতু ভবনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ডাকসুর সাবেক সহ-সভাপতি নুরুল হক নুরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক আবু সাঈদ মিয়া নুরকে পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করলে ঢাকা মহানগর হাকিম শাকিল আহমেদ এ আদেশ দেন।
ফরোয়ার্ডিং প্রতিবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, রিমান্ডে নুর ঘটনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদনও করেন ডিবির পরিদর্শক। তবে, আসামিপক্ষের আইনজীবী এই ঘটনার সঙ্গে তার মক্কেল জড়িত নয় বলে তার পক্ষে জামিন আবেদন জমা দেন। উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট আসামিপক্ষের আবেদন নামঞ্জুর করে নুরকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠান। পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর গত ২১ জুলাই ঢাকার আরেকটি আদালত নুরের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় জড়িত সন্দেহে আটকদের সিএমএম আদালতে নেয়া হলে গতকাল শুক্রবার আদালত চত্ত্বরে ভিড় করেন আটকদের স্বজনরা। এসময় আটক ব্যক্তিদের নির্দোষ দাবি করে বিনা অপরাধে গ্রেফতারের অভিযোগ করেন তাদের স্বজনরা।
সরেজমিন ঢাকার চিফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্ত্বর ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার ব্যক্তিদের স্বজনদের ভিড়। কারও মা-বাবা, কারও ভাই কারও বোন কিংবা অন্যান্য আত্বীয়রা অপেক্ষা করছেন। তাদের অনেকে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন।
রাজধানীর কাজলা সামাদ নগরের বাসিন্দা মনির হোসেন। বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় দিকে তুলে নিয়ে যায় যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। মনির হোসেনের স্ত্রী ছালমা বলেন, বৃহস্পতিবার আমার স্বামী দোকান বন্ধ করে বাসায় এসে বিশ্রাম নিচ্ছিল। হঠাৎ পুলিশ এসে বাসায় ঢুকে যায়। এরপর কিছু না বলেই হ্যান্ডকাফ পরাতে গেলে আমি জিজ্ঞেস করি, কেন আমার স্বামীকে গ্রেফতার করবেন? কী অপরাধ? এরপর হ্যান্ডকাফ দিয়ে আমার হাতে পুলিশ আঘাত করে। এসময় আমার ছোট্ট ছেলে এসে বাধা দিলে তাকে টেনে সরিয়ে দিয়ে আমার স্বামীকে নিয়ে চলে যায়। এসময় তারা আমাদের বাসার নিচের সব সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে।
এসময় সঙ্গে থাকা আটক মনির হোসেনের মা জানান, ছেলেকে দেখতে এসেছি। এই আন্দোলনে সে কখনো রাস্তায় বের হয়নি। এক সময় বিএনপি সমর্থন করত। এখন সে কোনো দল করে না।
গ্রেফতার হওয়া দ্যা মিরর এশিয়া নিউজের সাংবাদিক সাঈদ খানের স্ত্রী সানজিদা ইতি বলেন, আমার স্বামীকে নিউজ করার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে। মেট্টোরেলে হামলার অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি সাংবাদিক নিউজতো করবেই। আমার স্বামী দেশের জন্য কাজ করছে। এছাড়াও আন্দোলনে তার পায়ে ইট পড়ায় কয়েকদিন ভালোভাবে কাজ করতে পারেনি। আমি কখনো আদালতে আসিনি। আমার অসুস্থ ছেলেটা বাবার জন্য কেঁদে কেঁদে অস্থির। আপনারা প্লিজ আমার ছেলের জন্য তার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।