দেশজুড়ে আলোচনায় থাকা পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের অবৈধ সম্পদের খবর এখন অনেকটা চাপা পড়ে গেছে। কারণ; এরই মধ্যে বেরিয়ে আসছে আরও কয়েকজন দুর্নীতিবাজের নাম। যারা সরকারের বিভিন্ন স্তরে চাকরি করে নানা কায়দায় অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। গণমাধ্যমে খবর আসার পর এই নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও দুদক। এরমধ্যে কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছেন এবং গা-ঢাকা দিয়েছেন কয়েকজন। দেশ ছাড়ার খবর পাওয়া গেছে কয়েকজন রাঘব বোয়ালের। তবে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়া এসব ব্যক্তির মামলা তদন্ত করতে এখন অনেকটা হিমশিম খাচ্ছে দুদক-সিআইডি। যারা দেশ ছেড়েছেন তাদের ফেরাতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে আদৌ তা সম্ভব কিনা তা দেখা বিষয়।
জানা গেছে, সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়ি চালক সৈয়দ আবেদ আলীর ৫০ কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে সিআইডি। এছাড়াও পিএসসির অফিস সহায়ক ডেসপাস রাইডার খলিলুর রহমানও গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। এর আগে ছাগলকান্ডে আলোচনায় আসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যের নাম। এরপর এনবিআর কর্মকর্তা ফয়সালের হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদদের খবর চাউড় হয়। এরই মধ্যে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এনবিআর কর্মকর্তা এনামুলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। এছাড়া পুলিশের এডিসি কামরুল হাসান ও তার স্ত্রীর নামে ১১ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তদন্ত শুরু হয়। অন্যদিকে পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এডিশনাল আইজিপি) ড. শামসুদ্দোহা খন্দকার অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলে জানা যায়। আর আলোচনায় থাকা পুলিশের সাবেক মহাপদির্শক (আইজিপি) বেনজীর ও তার পরিবারের এখন পর্যন্ত ৪৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক।
৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ আবেদ আলীর : প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়ি চালক সৈয়দ আবেদ আলীর ৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছেন সিআইডি কর্মকর্তারা। তদন্তের সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তা বলেন, এর মধ্যে রয়েছে মিরপুরের পাইকপাড়া এলাকায় একটি ছয়তলা ভবন, পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় তিনটি ফ্ল্যাট, একটি হ্যারিয়ার এসইউভি, একটি টয়োটা প্রিমিও গাড়ি এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নগদ টাকা। সিআইডি ইতোমধ্যে গাড়িগুলো জব্দ করেছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, আবেদ আলী সম্প্রতি পশ্চিম শেওড়াপাড়ার একটি ভবনে থাকা আরও দুটি ফ্ল্যাট বিক্রি করেছেন। আমরা সন্দেহ করেছি যে তার আরও সম্পত্তি রয়েছে এবং এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। চ্যানেল ২৪ পিএসসির পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা শুরু হয় আবেদ আলীকে নিয়ে। সরকারি চাকরির পরীক্ষা, এমনকি বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে আবেদ আলী, তার ছেলে ঢাকা উত্তর মহানগর ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক (বহিষ্কৃত) সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম এবং পিএসসির ছয় কর্মকর্তাসহ অন্তত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। সিআইডি কর্মকর্তা জানান, ২০১৫ সালে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে আবেদ আলী পিএসসির চাকরি হারান। বর্তমানে তিনিসহ অন্যরা পুলিশ হেফাজতে এবং কয়েকজন কারাগারে আছেন। এদিকে বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে পিএসসির ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদের মধ্যে পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীও রয়েছেন। তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) একটি সূত্র। বিএফআইইউ সূত্র জানায়, ব্যাংক হিসাব জব্দ সংক্রান্ত চিঠি বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো হয়েছে। এ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংক হিসাব জব্দ থাকবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ রযেছে।
খলিলুর রহমানের কত সম্পদ: বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) অফিস সহায়ক ডেসপাস রাইডার খলিলুর রহমান। বিভিন্ন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সময় পিএসসি থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বিপুল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। অথচ তার চলাফেরা বা গ্রামের বাড়ি দেখে কারও বোঝার উপায় ছিল না তার রাজধানীর মিরপুরের ষাটফিট এলাকায় আলিশান বাড়ি, ব্যাংক হিসাবেও কয়েক কোটি টাকা রয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তার এসব অবৈধ সম্পদের সন্ধান পেয়েছে। সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে খলিলুর জানান, গত ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রশ্ন ফাঁস করে অনৈতিক পন্থায় নিয়োগ দিয়ে অন্তত ৫০-৬০ কোটি টাকা কামিয়েছেন। সিআইডি সূত্রে জানা যায়, খলিলুরের সম্পদের মধ্যে রয়েছে রাজধানীর মিরপুরের মধ্যপীরেরবাগের আলিশান ফ্ল্যাট, যার দাম অন্তত তিন কোটি টাকা। কয়েক মাস আগে নতুন এই ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি। বাসার ইন্টেরিয়র ডিজাইনও ঝাঁ চকচকে। এর বাইরে ঢাকায় আরেকটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পেয়েছে সিআইডি। তবে সম্প্রতি মধ্য পীরেরবাগের বাসায় উঠায় পুরনো ফ্ল্যাটটিতে আর থাকছেন না তিনি। মিরপুর ৬০ ফিটের পাকা মসজিদের সামনে পরমাগলির এই আধুনিক বাসা থেকেই গ্রেপ্তার হন খলিলুর। সিআইডি সূত্রে জানা যায়, খলিলুরের বাড়ি যশোরের কেশবপুরের মঙ্গলকোট ইউনিয়নের পাচরাই ঘাগা গ্রামে। তার বাবা নিজাম গাজীও পিএসসির খুলনা শাখায় অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি করতেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে খলিলুর বড়। বাবার কোটায় খলিলুর রহমান ও তার ভাই হাফিজুর রহমান চাকরি পান পিএসসিতে। এর আগে ২০১২ সালে ৩৩তম বিসিএসের সময় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে খলিলুরের বিরুদ্ধে ঢাকার শাহবাগ থানায় মামলা হয়। ওই সময় তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তারও করে র্যাব। পরে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। একই সময় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়।
পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা শামসুদ্দোহার অবৈধ সম্পদ : পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এডিশনাল আইজিপি) ড. শামসুদ্দোহা খন্দকার অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। শুধু শামসুদ্দোহা একা নন, তার স্ত্রী ফেরদৌসী সুলতানারও রয়েছে বিপুল পরিমাণ সম্পদ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলছে, এ দম্পতি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল সম্পদের মালিক। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ১ হাজার ২৭ শতক জমি আছে তাদের নামে। দলিলে এসব জমির দাম ৭০ কোটি টাকা দেখানো হলেও আদতে বাজারদর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি হবে। গত ১৮ মার্চ আদালত তার এসব সম্পত্তি জব্দ করার আদেশ দেয়। পরদিন তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করলে ঐ আদেশ স্থগিত হয়ে যায়।
এডিসি কামরুল ও স্ত্রীর ১১ কোটি টাকার সম্পদ: দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক এমরান হোসেন সাংবাদিকদের জানান, দুদক অনুসন্ধান করে পুলিশ কর্মকর্তা কামরুল হাসান ও তার স্ত্রীর নামে ১১ কোটি ৩৪ লাখ টাকার স্থাবর-অস্থাবর অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে। গত মাসে দুদক প্রধান কার্যালয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ যাতে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হস্তান্তর করতে না পারেন, সে জন্য দুদকের পক্ষ থেকে সম্পত্তি ক্রোকের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। পরে আদালত তা মঞ্জুর করে। ওই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) কামরুল হাসান। তার স্ত্রীর নাম সায়মা বেগম। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ বেগম জেবুননেছা গত মঙ্গলবার সম্পদ ক্রোকের এ আদেশ দেন।
এনবিআরের এনামুলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা : দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা নয় কোটি ৭৬ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় সিলেটের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হকের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের উপ-পরিচালক ফারজানা ইয়াসমিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন গত সোমবার এ আদেশ দেন। গত ৫ জুন এ মামলায় কমিশনারেট অব কাস্টমস ভ্যালুয়েশন অ্যান্ড ইন্টারনাল অডিটের সাবেক কমিশনার এনামুলের সব স্থাবর সম্পত্তি জব্দ করার নির্দেশ দেন আদালত। এর আগে এনামুলের মালিকানায় থাকা রাজধানীর কাকরাইল, মোহাম্মদপুর ও গুলশান এলাকার ১১টি ফ্ল্যাট এবং গাজীপুরে পাঁচ কাঠা ও ঢাকার বাড্ডায় আট কাঠা জমি জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। গত বছরের ৩১ জুলাই এনামুলের বিরুদ্ধে ৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা অবৈধ আয়ের অভিযোগে মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম।
এনবিআর কর্মকর্তা ফয়সালের হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ : ঘুস ও দুর্নীতির মাধ্যমে ১ হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের বিরুদ্ধে। দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানে এ পর্যন্ত ১৬ কোটি ৪১ লাখ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। বাকি সম্পদ খুঁজে বের করতে অনুসন্ধান চলছে। দুদক সূত্র জানায়, ঢাকায় এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে ট্যাক্সেস লিগ্যাল অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট শাখায় প্রথম সচিবের (অতিরিক্ত কর কমিশনার) দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তিনি ঘুস ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লুটেছেন দুই হাতে। সম্প্রতি তাকে বগুড়ায় বদলি করা হয়েছে। এর আগে তিনি বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জে যুগ্ম কর কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রথম অভিযোগ দুদকে আসে গত বছর। ওই সময় কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম অনুসন্ধান শুরু করে। চলতি বছরের শুরুতে ফয়সালের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। এতে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে ১ হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়।
মতিউরের সম্পদের পাহাড়: ছাগলকান্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যের নামে থাকা আরও ২৩.৬৭ একর জমি, ব্যাংকে থাকা প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা ও ৪টি ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য সম্পত্তি জব্দের (ক্রোক) আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন। দুদকের আদালত পরিদর্শক আমির হোসেন জানান, দুর্নীতি দমন কমিশন এসব সম্পত্তি জব্দের আবেদন করে। এ বিষয়ে শুনানি শেষে আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন আদালত। এর আগে গত ৪ জুলাই মতিউর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ১০.৩৫ একর জমি ও চারটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। এ নিয়ে দুই দফায় মোট ৩৪.০২ একর জমি ও রাজধানীতে থাকা ৮টি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেওয়া হলো। দ্বিতীয় দফায় জব্দের আদেশ দেওয়া স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে ২ হাজার ৩৬৭ শতক বা ২৩.৬৭ একর জমি এবং রাজধানীর মিরপুরে থাকা ৪টি ফ্লাট। এসব জমি সাভার, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নরসিংদী ও নাটোরের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে বলে নথি সূত্রে জানা গেছে।
বেনজীর ও তার পরিবারের অবৈধ সম্পদ: পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের সাড়ে ৪৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের তদন্তকারীরা বলেছেন, তাদের প্রাথমিক তদন্তে এসব সম্পদের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। অবৈধ সম্পদের মধ্যে রয়েছে ঢাকার বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট এবং বিভিন্ন ব্যাংকে জমা রাখা বিপুল পরিমাণ অর্থ। বেনজীরের পরিবারের মালিকানাধীন এসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির দালিলিক প্রমাণও পেয়েছে দুদক। তদন্ত দল প্রাথমিকভাবে বেনজীরের নামে প্রায় ৯ কোটি ২৬ লাখ টাকার সম্পদ শনাক্ত করেছে; তার স্ত্রী জিসান মির্জার নামে ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা; তাদের বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীরের নামে ৮ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে প্রায় ৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের বিবরণী চেয়ে ইতোমধ্যে আলাদা নোটিশ জারি করেছে দুদক। গত ২ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৬(১) ধারা অনুযায়ী সম্পদ বিবরণীর নোটিশও দেওয়া হয়। দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, 'আদালতের নির্দেশে বেনজীর আহমেদের স্থাবর-অস্থাবর প্রায় এক হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ বা ফ্রিজ করা হয়েছে। প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল এই সম্পদগুলো যাতে আত্মসাৎ বা চোরাচালান না হয় তা নিশ্চিত করা। বর্তমানে প্রতিটি সম্পদ পৃথকভাবে যাচাই করা হচ্ছে। অনেকগুলোই তার আয়কর নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। আপাতত এসব সম্পদ বিবেচনাধীন এবং দুদকের মামলায় দালিলিক প্রমাণ প্রয়োজন হওয়ায় অবৈধ সম্পদের হিসাব-নিকাশ চলছে। বেনজির আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানরা মামলা তদন্ত শুরুর আগেই দেশ ত্যাগ করেছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে।