১২ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার

সিলেটে এত পানি, নামার জায়গা নেই

বুধবার বিকাল থেকে সিলেটে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামে। এতে করে শেষ রাতের দিকে ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে সারি, গোয়াইন নদী দিয়ে ঢল নামা শুরু হয়েছিল। এ কারণে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক নেমে এসেছিল। কিন্তু সকাল থেকে বৃষ্টি কমে যাওয়ায় ঢল আসা কমে যায়। তবে; উজানের ঢলে গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে পানি বেড়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। সিলেট এখন পানিতে টুইটুম্বুর। টানা তিনদফা বন্যার পানিতে পাহাড়ি এলাকা ছাড়া সব এলাকাতেই পানি। বিশেষ করে নিচের এলাকা ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জের অবস্থা করুণ। টানা দুই মাস ধরে এ দু’উপজেলার লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। বুধবার রাতের বৃষ্টি শঙ্কা বাড়িয়েছিল।

আবহাওয়া বার্তায় সুখবর নেই। আগামী দু’দিন সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টির পূর্ভাভাস রয়েছে। প্রথমদিনে বৃষ্টি হয়েছে। এমনিতেই তলিয়ে আছে জেলার অর্ধেক এলাকা। এখন বৃষ্টি হলে পানি বাড়বে। আর সেই পানি নামারও কোনো সুযোগ নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন নতুন করে পানি বাড়লে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। সিলেটের কানাইঘাট, জকিগঞ্জের অমলসিদ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় নদীর পানি বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশের মতে- সিলেটে এখন শঙ্কার যে বিষয়টি হচ্ছে তা হলো পানি নামার জায়গা নেই। সিলেট বিভাগে পানি নামে সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের হাওর দিয়ে। এই দুই হাওরের পানি মেঘনা হয়ে অপসারিত হয়। কিন্তু হাওরগুলো পানিতে টুইটুম্বুর। ফলে সিলেটের পানি নামতে পারছে না। ধীরে ধীরে নদী দিয়ে পানি নামছে। বৃষ্টি হলে আবার পানি বেড়ে যায়। তিনি জানান, বৃষ্টি হলেও সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। ঢল না এলে ধীরে ধীরে পানি নামতে পারে। সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলার ৯২টি ইউনিয়ন ও ৩টি পৌরসভার ১০৪১টি গ্রাম এখনো পানির নিচে। পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা সাড়ে ৫ লাখ। এদিকে, কয়েকটি এলাকা থেকে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়লেও এখন ২১৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বসবাস করছেন। এর মধ্যে ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জের আশ্রয়কেন্দ্রে বানভাসি মানুষের সংখ্যা বেশি। গত ৫-৬ বছর ধরে সিলেটে উজানের ঢল আঘাত হানছে। এতে করে নগরও ডুবছে। জেলার অর্ধেক এলাকা ডুবে যায়। ২০২২ সালে হয়েছিল ভয়াবহ বন্যা। এ বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার তৃতীয় দফা বন্যা। এবং রাতারাতি উজানের ঢলে সিলেট তলিয়ে যায়। হাহাকার শুরু হয়। এত পানি কেবল সিলেটের বৃষ্টিপাতে না। বৃষ্টি না হলেও সিলেটে পানি বাড়ে। এর কারণ হচ্ছে ভারতের মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টিপাত হলে সিলেট দিয়ে ঢল নামে। এই ঢল নামার কারণে এবার ২৬শে মে থেকে সিলেটে বন্যা দেখা দেয়। এরপর ১৭ই জুন থেকে ঢলে আরেক দফা তলিয়ে যায়। সর্বশেষ গত ১লা জুলাই যে ঢল নেমেছিল সেটিতে আরেক দফা বন্যা হয়। দুই মাসের ব্যবধানে পরপর তিনদফা বন্যার কারণে সিলেট বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উজানের ঢলের তোড়ে কয়েক হাজার বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। গৃহহারা হয়েছেন অনেক মানুষ। আর এখন বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে দুর্ভোগ ছড়িয়ে পড়ছে। জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, বন্যা দীর্ঘ হওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে রান্নাকরা খাবার সংকট চলছে। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন তাদেরকে রান্নাকরা খাবার দেয়া হচ্ছে। কিন্তু যারা বাড়িঘরে রয়েছেন তারা সংকটে রয়েছেন। তাদের মধ্যে ত্রাণ দেয়া হলেও অনেকেরই রান্নার ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া বিশুদ্ধ পানির সংকটও আছে। পানি দ্রুত নেমে গেলে দুর্ভোগ কম হতো। কিন্তু পানি না নামার কারণে দুর্ভোগ বাড়ছে। প্রায় ২শ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো পানির কারণে খোলা সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে শিক্ষার ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানান তারা।

https://mzamin.com/news.php?news=118259