১২ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার, ১২:০৩

১১ দিন ধরে অচল দেশের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

সর্বজনীন প্রত্যয় পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে ১১ দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ১ জুলাই থেকে এ কর্মবিরতি পালন করে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সর্বজনীন পেনশনসংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্তিকরণ ও স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা এ আন্দোলন পালন করছে। শিক্ষকরা পাঠদান ও সবরকম প্রশাসনিক কাজ থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়ে এ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রত্যয় স্কিমের পক্ষে যুক্তি নেই : ঢাবি শিক্ষক সমিতি

ঢাবি প্রতিনিধি জানায়, শিক্ষকদের ঘাড়ের ওপর চাপানো প্রত্যয় স্কিমের পক্ষে সরকারের কোনো যুক্তি নেই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা। তিনি বলেন, আমরা বারবার সংলাপের আহ্বান করেছি। সংলাপে বসে প্রত্যয় স্কিমের পক্ষে আপনাদের যুক্তি দেন। যদি আপনাদের যুক্তি খণ্ডন না করতে পারি তাহলে প্রত্যয় স্কিম আমরা মেনে নেব। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলাভবনের মূল ফটকে শিক্ষক সমিতি আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে এ কথা বলেন তিনি।
অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, আমরা নায্য অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করছি। দেশের ৪০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সর্বাত্মক কর্মবিরতি করছে। যুগে যুগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসমাজ নায্য দাবি আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। প্রত্যয় নামক বৈষম্যমূলক স্কিম শিক্ষকদের ঘাড়ের ওপর অযৌক্তিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থার সুযোগ-সুবিধা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হয়েছে। প্রত্যয় নামক স্কিমের যে ব্যখা দিয়েছে পেনশন কর্তৃপক্ষ সেটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসমাজ প্রত্যাখ্যান করেছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা বারবার সংলাপের আহ্বান করেছি। টেবিল টক, গ্রুপ ডিসকাশনের আমন্ত্রণ জানিয়েছি, তারা সাড়া দেয়নি। দেবে কিভাবে; তাদের কাছে প্রত্যয় স্কিমের কোনো যুক্তি কি আদৌ আছে? তারা বিভিন্ন টকশো, পেপারে আমাদের নিন্দা করছেন। তারা বলছেন, আমরা নাকি ক্লাস ঠিকমতো না নিয়ে বেতন নিই। তাহলে ক্লাসটি কি তারা নিয়ে যায়। আমি বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষককের নামে হাজার কোটি টাকার লুটপাটের অভিযোগ আছে- তারা জাতির বিবেক। ভবিষৎ প্রজন্মের প্রতি নিজেদের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এটা কি তাদের অপরাধ? তারা কি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় এসে অপরাধ করে ফেলেছে? তারা দিনরাত পরিশ্রম করে, ক্লাস, পরীক্ষা, গবেষণা, অ্যাকাডেমিক, প্রশাসনিক কার্যক্রম সচল রেখে জাতির ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করছে। আর সরকার তাদের প্রত্যয় স্কিম অন্তর্ভুক্ত করে সুযোগ সবিধা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছে। এভাবে চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকাঙ্গন মেধাশূন্য হয়ে যাবে। জাতির বিবেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসমাজ সেটির বাস্তবায়ন কখনোই হতে দেবে না। যতই আমাদের চরিত্র হননের চেষ্টা করা হোক, বাধা প্রদান করুক আমরা কিছুতেই পিছু হটবো না।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি আখতারুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসমাজ ন্যায়ের পক্ষে আন্দোলন সংগ্রাম করছে। পেনশন কর্তৃপক্ষ আমাদের আন্দোলনকে কটাক্ষ করে বিভিন্ন ধরনের কথা বলছে। তাদের সৎ সাহস থাকলে আমাদের সাথে বসুন। আপনাদের যুক্তি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বুঝিয়ে দেবে প্রত্যয় স্কিম কতটা অযৌক্তিক।

নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, জাতিকে মেধাশূন্য করার পাঁয়তারা করছে একদল কুচক্রী গোষ্ঠী। আমরা প্রত্যয় স্কিম-সহ তিনটি যৌক্তিক দাবির পক্ষে আন্দোলন করছি। প্রায় ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ষোল হাজার শিক্ষক আন্দোলন করছে। আপনারা প্রকাশ্যে সংলাপ করুন। টকশোতে আপনারা যেভাবে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বলছেন দেখে মনে হচ্ছে সমাজনীতি, অর্থনীতি আপনারাই শুধু বোঝেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কিছুই বোঝে না। আমরা এখনো সংলাপের আহ্বান জানাই। সংলাপে আসুন শিক্ষকদের তিন দফা দাবি মেনে নিন। নতুবা শিক্ষকরা এ আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

বাকৃবি প্রতিনিধি জানান, প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) আন্দোলন এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে কর্মচারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি, প্রশাসনিক ভবনে এরই মধ্যে তালা দিয়েছেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন শাখা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা বিরাজ করছে।

বৃহস্পতিবার বেলা ১২ থেকে ১টা পর্যন্ত প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনসংলগ্ন করিডোরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বাকৃবি শিক্ষকরা। কর্মকর্তারা বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।

আন্দোলনরত শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সরকার আমাদের দাবি মেনে নিলে বিশ্ববিদ্যালয় আবার স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করা হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/848966