১২ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার, ১১:৫৭

অস্থিরতার মুখোমুখি অর্থনীতি বাড়তে পারে ডলারের দাম

বিদায়ী অর্থবছরে দেশের বৈদেশিক খাতে সবচেয়ে বেশি অস্থিরতার মুখোমুখি হয়েছে। অর্থনীতির বৈদেশিক খাতের সব সূচকই অবনতি হয়েছে। এর ধারাবাহিকতা চলতি অর্থবছররসহ সামনেও থাকতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রা বিশেষ করে ডলারের দাম আরো বাড়তে পারে। সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে ও মূল্যস্ফীতি কমাতে আসন্ন মুদ্রানীতি আরো কঠোর করা হতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ‘মুদ্রানীতি পর্যালোচনা ২০২৩-২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতি বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। বিদায়ী অর্থবছরের মুদ্রানীতির বিভিন্ন সূচকের লক্ষ্যমাত্রা ও অর্জনের তথ্যও এতে তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদায়ী অর্থবছরে সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়েছিল। এতে কঠোর করা হয়েছিল মুদ্রানীতি। কিন্তু কঠোর মুদ্রানীতি অনুসরণের পরও বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে। আর এ মূল্যস্ফীতি বাড়ার অন্যতম চারটি প্রধান কারণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, ডলারের বিপরীতে টাকার মান অবমূল্যায়ন করা, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা এবং একই সাথে খাদ্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়া। আর এসব কারণে কঠোর মুদ্রানীতির পরও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলির নীতি সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা। অনেক দেশ এটা করে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিবেশ বর্তমানে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। একই সাথে অর্থনীতিতে অনেক সম্ভাবনার দুয়ারও খুলেছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক টেকসই সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নীতি কৌশল গ্রহণ করছে। ফলে চলতি অর্থবছরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরো শক্তিশালী হবে বলে মনে করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে বাংলাদেশের বৈদেশিক খাতে অস্থিরতা শুরু হয়। এ অস্থিরতা পরবর্তীতে দেশের পুরো অর্থনীতিকে আক্রান্ত করে। এর ক্ষত অর্থনীতিতে এখনো চলমান রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে ঘাটতি কমে এখন আবার উদ্বৃত্ত হয়েছে।

সূত্র মতে, রফতানি আয়ের বাড়তি তথ্য বাদ দেয়ার ফলে চলতি হিসাব আবার ঘাটতিতে চলে গেছে। একই সাথে আর্থিক হিসাব ও সার্বিক বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবে ঘাটতি আরো বেড়ে গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিপত্রের ঘাটতিও কমেছে। তবে আর্থিক হিসাব ও সার্বিক বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবে ঘাটতি থাকায় ডলারের বিনিময় হারে চাপ অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে টাকার মান কমাতে হচ্ছে, যা মূল্যস্ফীতিতে চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। ডলার সঙ্কটের কারণে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় এ খাতের শিল্প উৎপাদন কমেছে। বিদায়ী অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে এ খাতে প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। কৃষিতেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে ধীর।

এতে বলা হয়, বাজারে বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। এতে রিজার্ভ কমেছে। বাজারে ডলারের ওপর চাপও কিছুটা কমেছে। ডলারের বিনিময় হারে যে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। তা অব্যাহত রাখবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে প্রয়োজন অনুসারে এর দামে সমন্বয় সাধন করবে। অর্থাৎ প্রয়োজন হলে ডলারের দাম আরো বাড়াবে।

আর এসব কারণে চলতি অর্থবছরের জন্য যে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে তা আরো কঠোর করা ছাড়া বিকল্প নেই বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন মুদ্রানীতিতে বিভিন্ন খাতের লাগাম টানা হবে। তবে বিনিয়োগ যেন না কমে তার জন্য উৎপাদন খাতে টাকার সরবরাহ ঠিক রাখা হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/848967