৮ জুলাই ২০২৪, সোমবার, ১১:৫৬

বিএসইসি’র নিয়োগ পদোন্নতি পদায়ন

বেপরোয়া জালিয়াতি স্বেচ্ছাচারিতা

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) জনবল নিয়োগে ভয়ংকর জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। ১২৭ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিশালসংখ্যক এই নিয়োগে বিদ্যমান আইন, বিধিমালা ও সরকারি আদেশের তোয়াক্কা করা হয়নি। মহামারি করোনার কারণে সরকারি নির্দেশে যখন দেশব্যাপী লকডাউন চলছিল, তখন তড়িঘড়ি করে এই নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়। এক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনাও আমলে নেয়নি কমিশন। বিএসইসির চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ এবং বিভিন্নভাবে শেয়ারবাজার থেকে সুবিধাভোগী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টির দুজন অধ্যাপকের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয় এই নিয়োগ প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্রও কমিশনে আসেনি। পরবর্তী সময়ে এই দুজন শিক্ষককে শেয়ারবাজারসংক্রান্ত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর মধ্যে একজন হলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বর্তমান পরিচালক ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। বেআইনিভাবে শেয়ার লেনদেনের কারণে যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশের পর সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এছাড়া কমিশনে পদোন্নতি, পদায়ন এবং দায়িত্ব বণ্টনেও চাকরি বিধিমালা ও সরকারি নির্দেশনা মানা হয়নি। এক বছর ২ মাসের ব্যবধানে চেয়ারম্যানের পিএসকে দেওয়া হয় দুটি পদোন্নতি। যুগান্তরের দীর্ঘ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। তবে বিএসইসি কর্তৃপক্ষের দাবি-এসব অনিয়ম হয়নি।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এ রকম কিছু ঘটে থাকলে তা দুঃখজনক। কারণ বিএসইসির নিয়োগ ও পদোন্নতির জন্য আলাদা বিধিমালা আছে। তাদের অবশ্যই সেটা মানতে হবে। তার মতে, একটি প্রতিষ্ঠান কতটা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করবে, তা অনেকটা নির্ভর করছে অভ্যন্তরীণ সুশাসন ও শৃঙ্খলার ওপর। বিএসইসির মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি আরও প্রযোজ্য। তার মতে, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

জানা গেছে, ১৯৯৩ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, আইন দ্বারা সৃষ্টি শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এর জনবল কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) সরকারের রাজস্ব খাতের আওতায়। তবে প্রতিষ্ঠানটিতে জনবল সংকটের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত রিপোর্টেও জনবল বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। পুরো শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য বিএসইসির জনবল ছিল ১৬৪ জন। তবে ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কমিশনের জনবল কাঠামোতে ২০৫টি নতুন পদের সৃষ্টির অনুমোদন দেয়। ফলে কমিশনের কাঠামোতে জনবলের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬৯। গত ৩ বছরে এই ২০৫টি পদে নিয়োগ দেয় কমিশন।
নতুন সাংগঠনিক কাঠামো অনুসারে ১০ ক্যাটাগরির পদের বিপরীতে ১২৭ জন জনবল নিয়োগের জন্য ২০২১ সালের ২৫ মার্চ পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় বিএসইসি। এর মধ্যে সহকারী পরিচালক (সাধারণ) পদে ৫৭ জন, সহকারী পরিচালক লিগ্যাল সার্ভিস ৪ জন, সহকারী পরিচালক (এমআইএস) ৪, জনসংযোগ কর্মকর্তা ২, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ১, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ২১, লাইব্রেরিয়ান ১, সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ৪, ক্যাশিয়ার ১, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ১, অভ্যর্থনাকারী ১, গাড়িচালক ৩ এবং অফিস সহায়ক পদে ২৭ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। আগ্রহীদের ২০২১ সালের ১ থেকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ওই প্রজ্ঞাপনে ১৪ এপ্রিল থেকে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এ সময় অতিজরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃত্যুদেহ দাফন এবং করোনার টিকা গ্রহণ) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। এজন্য সাধারণ মানুষের বাইরে যাওয়া রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কড়া নির্দেশনা দিয়ে নামানো হয় রাস্তায়। এর ধারাবাহিকতায় ১৬ মে জারি করা আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ২৩ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয় লকডাউন। কিন্তু এই লকডাউনের মধ্যেই ২০২১ সালের ১৯ মে সহকারী পরিচালক পদে অনুষ্ঠিত হয় নিয়োগ পরীক্ষা। অর্থাৎ লকডাউনের ভেতরে সরকারের সব কার্যক্রম যখন বন্ধ ছিল, তখন পরীক্ষা নেয় বিএসইসি। এক্ষেত্রে লকডাউনসংক্রান্ত সরকারের নির্দেশনা লঙ্ঘন হয়েছে। এর মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ সীমিত করা হয়।

এছাড়া পরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টিকে। পুরো বিষয়টির দায়িত্ব পান বিজনেস ফ্যাকাল্টির দুজন অধ্যাপক-ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এবং ড. মোহাম্মদ তারেক। এই নিয়োগের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ এবং উত্তরপত্র মূল্যায়নসহ যাবতীয় কাজ এই দুজনই করেছেন। নিয়ম অনুসারে লিখিত পরীক্ষায় যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের উত্তরপত্র কমিশনে আসার কথা। কিন্তু পরীক্ষার কোনো উত্তরপত্র কমিশনে পাঠানো হয়নি। শুধু উত্তীর্ণদের একটি তালিকা কমিশনে পাঠানো হয়। এই তালিকার ভিত্তিতে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ১২৭ জনকে চাকরির জন্য চূড়ান্ত করা হয়।

মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদাদলের প্রভাবশালী শিক্ষক প্রফেসর ড. মাহমুদ ওসমান ইমামকে। নতুন নিয়োগ পাওয়া ১২৭ জনের এই সংখ্যা ছিল ওই সময়ে বিএসইসিতে কর্মরত মোট জনবলের ৭৮ শতাংশের সমান। অর্থাৎ বিএসইসির ইতিহাসে সর্বোচ্চসংখ্যক এই জনবল নিয়োগের পুরোটাই রহস্যে ঘেরা। অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। প্রকাশ্যে কেউ কথা বলতে রাজি নন। এরপরও আরও কয়েক দফায় জনবল নিয়োগ দেয় কমিশন।

অন্যদিকে লিখিত পরীক্ষার দায়িত্ব পাওয়া এই দুজন শিক্ষক ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও ড. মোহাম্মদ তারেক বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের অনুগত হিসাবে ব্যাপক পরিচিত। কমিশনে যোগদানের আগে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম নিজেও বিজনেস ফ্যাকাল্টির ডিন ছিলেন। ফলে এখানে কনফ্লিক্ট অব ইনটেরেস্ট্রের (স্বার্থের দ্বন্দ্ব) বিষয় জড়িত।
নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়ার পর ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে ডিএসইর পরিচালক এবং ড. মোহাম্মদ তারেককে শেয়ারবাজারের আরেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনস্টিটিউটের (বিআইসিএম) নির্বাহী প্রেসিডেন্ট করা হয়। বর্তমানে ড. তারেক বিআইসিএমের ওই পদে কাজ করছেন। এছাড়া তাকে সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল) এবং বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট স্টাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদও ডিএসইর বর্তমান পরিচালক। তবে তার অবৈধ শেয়ার লেনদেন নিয়ে গত ৬ জুন সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক যুগান্তর। এর ওপর ভিত্তি করে গত ২৫ জুন বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। কিন্তু তদন্ত কমিটি গঠন না করেই, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে রিপোর্ট জমা দেয় বিএসইসি। জানতে চাইলে বিএসইসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. শেখ শামসুদ্দীন আহমেদ রোববার যুগান্তরকে বলেন, বিএসইসির ছোট কোনো নিয়োগ হলে আমরাই করতে পারি। কিন্তু সংখ্যায় বড় নিয়োগের ক্ষেত্রে বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠানকে সংযুক্ত করতে হয়। কারণ আমাদের সক্ষমতা কম। তাই এক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। অন্য প্রতিষ্ঠানও তাদের অথবা আইবিএ’কে দায়িত্ব দিয়ে থাকে। এটা বিজনেস ফ্যাকাল্টির আয়েরও একটি উৎস। কিন্তু তাদের নিয়োগ পরীক্ষায় কোনো দুর্নীতি হয়েছে, তা এখন পর্যন্ত আমি শুনিনি।

এদিকে বিএসইসির প্রশাসনিক ব্যবস্থা, পদোন্নতি, পদায়ন ও দায়িত্ব বণ্টন প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন থেকে সুশৃঙ্খল এবং অন্য প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয় ছিল। কিন্তু বর্তমানে চরম স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। সরকার অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী কমিশনের প্রশাসন ও অর্থ বিভাগ একজন কমিশনারের অধীনে ন্যস্ত হবে। এই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রশাসন ও অর্থ বিভাগ চেয়ারম্যান তার নিজের অধীনে রেখেছেন। এই বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন নির্বাহী পরিচালক মো. মাহবুবুল আলম। নিয়ম অনুসারে কমিশনের প্রতিটি বিভাগের দায়িত্বে থাকেন একজন নির্বাহী পরিচালক। তিনি নিজ বিভাগের নথি একজন কমিশনারের কাছে উপস্থাপন করেন। কমিশনার তা অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করেন চেয়ারম্যানের কাছে। কিন্তু প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের নথি এই বিভাগের নির্বাহী পরিচালক সরাসরি চেয়ারম্যানের কাছে উপস্থাপন করেন। এতে প্রশাসনিক ও আর্থিক বিষয়গুলো স্বাভাবিক শৃঙ্খলার মধ্যে থাকছে না। ফলে আইন লঙ্ঘন করে কমিশনের প্রায় ১শ কোটি টাকা আইসিবিতে এফডিআর করা হয়।

পদোন্নতির ক্ষেত্রেও সরকারি নির্দেশনা মানেনি কমিশন। ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবরের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জিওতে (সরকারি আদেশ) ‘সরকার প্রচলিত বিধিবিধান ও আনুষ্ঠানিকতা পরিপালনের (চাকরি বিধিতে সংযোজন)’ নির্দেশনা ছিল। কিন্তু পরের বছর ২০২০ সালের ১২ জুলাই মন্ত্রণালয় থেকে চাকরি বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ ও পদোন্নতি না দেওয়ার নির্দেশনা দেয়। তবে এই নির্দেশনা কাগজের মধ্যে সীমাবদ্ধ। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসাবে আসমা-উল-হুসনা ও কমিশনার ড. শামসুদ্দীন আহমেদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসাবে মুহাম্মদ মুশফিকুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। অন্যদিকে সরকারের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে ২০২১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি মো. কামরুল আনাম খান নির্বাহী পরিচালক হিসাবে পদোন্নতি দেয় কমিশন। এছাড়া একইদিনে মো. ফখরুল ইসলাম মজুমদারকে পরিচালক পদে এবং এএসএম মাহমুদুল হাসানকে কমিশন সচিব পদে পদোন্নতি দেয়। একই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ২ জন কর্মকর্তাকে এবং ওই বছরের ২১ মার্চ ৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয় কমিশন।

বিধিমালা অনুসারে কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিতে হয়। ২০২১ সালের জুনে অনুষ্ঠিত এই পরীক্ষারও দায়িত্ব দেওয়া হয় ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এবং ড. মোহাম্মদ তারেককে। একই সঙ্গে ভাইভা বোর্ডে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদাদলের সদস্য ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম। তবে ওই সময়ে যারা পদোন্নতি যোগ্য হয়নি, তাদেরও পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরে সেই পরীক্ষার ভিত্তিতেই তাদের পদোন্নতি দেয় কমিশন।

২০২১ সালের ২২ মার্চ বিএসইসির কর্মচারী চাকরি বিধিমালার গেজেট প্রকাশিত হয়। ফলে নিয়োগ ও পদোন্নতি না দেওয়াসংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের আগের নির্দেশনা রহিত হয়ে যায়। পরে ২০২১ সালের ২৯ জুন কমিশনের প্রায় ৬৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এরপর কয়েকটি পদে পরিবর্তন আনা হয়। আর এই পদ পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও বিধিমালার শর্ত লঙ্ঘন করেছে কমিশন। নতুন চাকরি বিধিমালা অনুসারে চিফ অ্যাকাউন্ট্যান্ট পদ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। কিন্তু তা অমান্য করে নির্বাহী পরিচালক পদে কর্মরত মো. কামরুল আনাম খানকে ওই পদে পদায়ন করা হয়। এর আগে তাকে সরকারি নির্দেশনা লঙ্ঘন করে নির্বাহী পরিচালক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। বিধিমালার তফশিল অনুসারে পরিচালক (লিগ্যাল সার্ভিস) পদটি পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। এর বাইরে দ্বিতীয় কোনো অপশন নেই। কিন্তু এই নিয়মের তোয়াক্কা না করে কমিশন সচিব পদে কর্মরত এএসএম মাহমুদুল হাসানকে পরিচালক (লিগ্যাল সার্ভিস) পদে পদায়ন করা হয়। এর আগে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে তাকে কমিশন সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল।

এছাড়া চাকরি বিধিমালা অনুসারে ‘কমিশন সচিব’ পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা প্রেষণে নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। কিন্তু ওই তফশিল লঙ্ঘন করে ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর অফিস আদেশের মাধ্যমে মো. মাহমুদুল হককে কমিশন সচিবালয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আগে মো. মাহমুদুল হক, বিএসইসির ছুটি এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া কানাডায় চলে যায়। এ কারণে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। দীর্ঘদিন পর কানাডা থেকে দেশে ফিরে কমিশনের চাকরিতে পুনর্বহালের আবেদন করেন তিনি। এই আবেদন বিবেচনায় নিয়ে শর্ত সাপেক্ষে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করে কমিশন। কিন্তু চাকরিতে পুনর্বহালের পর অধিকাংশ শতর্ই পূরণ করেননি তিনি। বর্তমানে তার স্ত্রী ও সন্তানরা স্থায়ীভাবে কানাডায় বসবাস করেন।

চাকরি বিধিমালা অনুসারে চেয়ারমানের পিএস (ব্যক্তিগত সচিব) মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার কাউকে প্রেষণে নিযুক্ত করতে হবে। কিন্তু তা আমলে নেয়নি কমিশন। চেয়ারম্যানের বর্তমান পিএস মো. রাশিদুল আলম ১৪ বছর ধরে একই স্থানে (চেয়ারম্যানের পিএস) কাজ করছেন। এছাড়া বিধিমালা অনুসারে উপপরিচালক থেকে যুগ্ম পরিচালক হতে সময় লাগে ন্যূনতম ৫ বছর। কিন্তু চেয়ারম্যানের পিএসের ক্ষেত্রে তা কার্যকর হয়নি। আইনকানুনসহ কোনো কিছুই তাকে আটকাতে পারেনি। ২০২১ সালের ২৯ জুন রাশিদুল আলম উপপরিচালক হিসাবে পদোন্নতি পান। কিন্তু মাত্র ১ বছর ২ মাস পর ২০২২ সালের ৩০ আগস্ট অলৌকিকভাবে তাকে যুগ্ম পরিচালক হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পাশাপাশি তিনি চেয়ারম্যানের পিএস হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন বলে কমিশনের অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়। একইভাবে বিধিমালা লঙ্ঘন করে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট ৩ জন কর্মকর্তাকে এবং ৩১ অক্টোবর আরও এক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয় কমিশন।

এদিকে চলতি বছরের ১৪ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে ‘কমিশন সচিব’ এবং ‘চেয়ারম্যানের পিএস’ পদে নিয়োগের অনুরোধ করে। বিষয়টির ওপর ২ জুন সংবাদ প্রকাশ করে যুগান্তর। এরপর এ ধরনের কোনো জনবল দরকার নেই উল্লেখ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে না জানিয়ে ৪ জুন জনপ্রশাসনকে পালটা চিঠি দেয় বিএসইসি। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এভাবে সরাসরি জনবল দেওয়া হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক আইওএসকোর ‘এ’ ক্যাটাগরিতে বিএসইসি থাকতে পারবে না।

অন্যদিকে কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদায়ন বা দায়িত্বের পরিবর্তন একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। কমিশনের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সময়ে সময়ে পদায়ন হয়। কিন্তু শীর্ষ কর্মকর্তা ঘনিষ্ঠ কমিশনের বর্তমান অতিরিক্ত পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম চাকরিতে যোগদানের পর থেকে টানা ১২ বছর একই বিভাগে একই দায়িত্ব পালন করছেন। কখনো তার পদায়ন বা দায়িত্ব পরিবর্তন হয় না। বিএসইসির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ এটি। এই বিভাগের আওতায় রয়েছে শেয়ার হস্তান্তর, কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন, ট্রেক ইস্যু, এসএমই মার্কেট, অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড, জেড ক্যাটাগরির কোম্পানির কমপ্লায়েন্স, ক্যাপিটাল মার্কেট স্টাবিলাইজেশন তহবিল এবং পুঁজিবাজারসংক্রান্ত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

এ ব্যাপারে জানতে ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তাতে সাড়া মেলেনি। তবে ড. মোহাম্মদ তারেক রোববার যুগান্তরকে বলেন, ওই পরীক্ষায় আমি কোন দায়িত্ব পালন করেছি, তা মনে করতে পারছি না। তবে পরীক্ষা কোন তারিখে অনুষ্ঠিত হবে, এটি আমার বিষয় নয়। তারিখের ব্যাপারে আমাদের কোনো করণীয় থাকে না। এটি বিএসইসি কিংবা যে প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব নিয়েছে, তারা যেভাবে বলে সেভাবেই হয়ে থাকে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/825421