৬ জুলাই ২০২৪, শনিবার, ৯:৪৪

ভরা মওসুমেও খুলনার বাজারে ইলিশের আকাল

ভরা মওসুমেও খুলনার বাজারে ইলিশ মাছের আকাল। যার কারণে দাম আকাশ ছোঁয়া। বাজারে যে পরিমাণ মাছ উঠছে সেগুলো প্রতি কেজি রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এ সময় ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হতো ৮০০-৯০০ টাকা কেজি দরে। যা এবার বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা দরে। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের মাছ বিক্রি হতো ১০০০-১১০০ টাকা কেজিতে। এবার সেই মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০-১৬০০ টাকা দরে। আর এক কেজি ওজনের মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১৩০০-১৪০০ টাকা পর্যন্ত। যা এবার রেকর্ড ভেঙে হয়েছে ১৮০০-১৮৫০ টাকা।

খুলনা মহানগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই মাছ কেনার আশা নিয়ে বাজারে আসছেন ঠিকই কিন্তু দাম শুনে চলে যাচ্ছেন।

খুলনা নিউমার্কেট মাছের বাজারের ক্রেতা মোবারক হোসেন বলেন, ইলিশের দাম আকাশ ছোঁয়া। সরকারি বড় বড় কর্মকর্তা ও তথাকথিত রাজনৈতিক নেতারা ছাড়া এত দামে সাধারণ মানুষের পক্ষে ইলিশ খাওয়া সম্ভব নয়।

মিস্ত্রীপাড়া বাজারের ক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা কেজি ইলিশের। কেনা তো দূরের কথা দাম শোনারও সাহস পাই না। শেষ কবে যে কিনেছি মনেও নেই। একটা ইলিশ মাছের যে দাম তা দিয়ে অন্য মাছ কিনে অনেক দিন খেতে পারবো। ইলিশ মাছ এখন আর মধ্যবৃত্তের সাধ্যের মধ্যে নেই। ভরা মওসুমেও ছেলে মেয়েদের ইলিশ মাছ খেতে দিতে পারছি না। এমন অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন অনেকে।

কেসিসি রূপসা পাইকারি মৎস্য আড়তের মেসার্স মদিনা ফিস ট্রেডার্সের পরিচালক মো. আবু মুছা বলেন, শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় ইলিশ মাছের আরেক দফা দাম বেড়েছে। ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১৫০০-১৬০০ টাকা, ৯০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ইলিশের দাম ১৮০০ -১৮৫০ টাকা। ১ কেজি ২০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ৩০০ গ্রাম ইলিশের কেজি ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা, ১ কেজি ৫০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ৬০০ গ্রাম ইলিশের কেজি ২৫০০ থেকে ২৭০০ টাকা ও ২ কেজি ওজনের ইলিশের কেজি ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুলনার বাজারে যেসব ইলিশ আসছে তার অধিকাংশ মেঘনা নদীর মাছ।

ভোলার চরফ্যাশান থেকে কেসিসি রূপসা পাইকারি মৎস্য আড়তে ইলিশ মাছ বিক্রি করতে আসা মাকসুদুর রহমান বলেন, এবার জেলেদের জালে কাক্সিক্ষত ইলিশের দেখা মিলছে না। কিন্তু মাছে চাহিদা বেশি। বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশের সরবরাহ না থাকায় এবার ইলিশের দাম বেশি।

ময়লাপোতা মোড়স্থ কেসিসি সন্ধ্যা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ইলিশ ব্যবসায়ী মোজাফফর হোসেন আশেক বলেন, ইলিশের ভরা মওসুম আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাস। এ বছর নদীতে মাছ কম। এক একটা জালে এখন প্রায় ৫ থেকে ৭ মন মাছ পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে আগে পাওয়া যেতে ৫০ থেকে ১০০মন। যে কারণে বাজারে ইলিশের ঘাটতি রয়েছে। ফলে দাম বেশি। তবে ইলিশের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কেউ কেউ বলছেন, বর্তমানে সাগরে ইলিশ ধরা বন্ধ। একইভাবে সুন্দরবনের নদ-নদীতেও মাছ শিকার বন্ধ রয়েছে। আগে নদীতে অনেক ইলিশ পাওয়া যেত। এসব ইলিশ স্থানীয় বাজারে প্রান্তিক জেলেরা সরাসরি বিক্রি করতেন। ফলে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ছিল না। এখন জেলেরা যে ইলিশ পান তা বিক্রি করতে হয় পাইকারি বাজারে। এই বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত বদল হলেই দাম বেড়ে যায়।

https://www.dailysangram.com/post/560521