২৪ মে ২০১৭, বুধবার, ৮:১৯

ভারত ফেনী নদীতে মৈত্রী সেতু নির্মাণ শুরু করতে যাচ্ছে

পার্বত্য এলাকা খাগড়াছড়ির রামগড় সাব্রুম স্থল বন্দর চালুর লক্ষ্যে সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর ওপর বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ নির্মাণ কাজের নিমিত্তে আগরওয়াল কনস্ট্রাকশন নামে গুজরাটের একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছে ভারত। সেদেশের ন্যাশনাল হাইওয়েজ এন্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল) নামে সংস্থাটি গত জানুয়ারি মাসে এ মৈত্রি সেতু নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। জানা যায়, এক্সটা ডোজড, ক্যাবল স্টেইড আরসিসি সেতুটি নির্মাণের দরপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল গত ১৮ ফেব্রুয়ারি। নির্মাণকাজের জন্য নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ৪১২মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪ দশমিক ৮ মিটার প্রস্থের বালাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ খুই শিগগিরই শুরু করতে যাচ্ছে। সীমান্তের ওপারের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানাযায়। সূত্র আরো জানায়, প্রায় ১১০ কোটি ভারতীয় রুপি ব্যয়ের মধ্যদিয়ে সেতুটি নির্মাণ করবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। আন্তর্জাতিক মানের দুই লেনের এ সেতুতে থাকবে ফুটওয়ে এবং এপ্রোচ রোড। রামগড় পৌর সভার সীমান্তবর্তী মহামুনি এবং ওপারের আনন্দপাড়া এলাকায় ফেনী নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণের স্থান ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। ৪১২ মিটার দীর্ঘ সেতুটি রামগড়-বারৈয়ারহাট-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত হবে। ওপারে সেতু থেকে প্রায় ১২শ মিটার এপ্রোচ রাস্তা নবীনপাড়া-ঠাকুরপল্লিহয়ে সাব্রুম-আগরতলা জাতীয় সড়কে যুক্ত হবে। দুই বছর পাঁচ মাসর মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ন্যাশনাল হাইওয়েজ এন্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল) এর ডিজিএম প্রদীপ ভুইয়ার বরাত দিয়ে ত্রিপুরার আগরতলার ডেইলি দেশের কথা পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, সাব্রুমের ছোটখীল রাস্তা হতে ফেনীনদী পর্যন্ত এক একর ৫৭ শতক জায়গা অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। ত্রিপুরার আগরতলা থেকে প্রকাশিত ডেইলি দেশের কথা পত্রিকায় ১৫ জানুয়ারি ফেনী সেতুর অনুলাইন টেন্ডার ডাকা হলো। শিরোনামে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, ফেনীর নদীর উপর প্রস্তাবিত এই আন্তর্জাতিক সেতুটি নির্মিত হলে শুধু ভারতের পূর্বাঞ্চলই নয়, খুলে যাবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যিক সম্ভাবনার দ্বার। সেতুটি হলে বাংলাদেশের যে সুবিধা হবে তা হচ্ছে এ দেশের সাথে সড়কপথে ত্রিপুরাসহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর বাণিজ্যিক সুবিধা আদান প্রদানের সম্ভাবনা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু তাই নয়, কাছে এসে যাবে চট্টগ্রাম নৌবন্দর। সমুদ্র পথে পণ্য পরিবহনের সুযোগ মিলবে। দুই পাড়ের মানুষ বাংলাভাষা-ভাষী। তাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, পরিবেশেগত দারুণ সাদৃশ্য রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় এ দেশের শরণার্থীরা রামগড় সীমান্ত দিয়ে ত্রিপুরায় আশ্রয় নিয়েছিল। মুক্তিবাহিনী সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে যুদ্ধ করেছে। বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরা রাজ্যে গিয়ে স্থায়ী ভাবে বসবাস করছে এবং এখনো বাংলাদেশে তাদের ভিটে মাটি আছে এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। আইনি জটিলতার কারণে তারা এপাড়-ওপাড় হতে পারেনা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বারুনীপ্লানের দিন প্রতি বছর ফেনী নদীতে পুলিশ, বিজিবি, বিএসএফ এর সকল বাধা অতিক্রম করে দুই পাড়ের লাখো বাংলা ভাষাভাষী মানুষ এক মহামিলন মেলায় মিলিত হয়। দুই পাড়ে বসে বিশাল মেলা। এদিকে, ফেনীনদীর ওপর মৈত্রী সেতু নির্মাণ প্রকল্পে বাংলাদেশ অংশের অগ্রগতি স¤পর্কে রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ. আল মামুন মিয়া বলেন, ইতিমধ্যে দুদেশের যৌথ সার্ভের মাধ্যমের সেতু নির্মাণের এলাইমেন্ট চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেতু ও সংযোগ রাস্তার জন্য দুই একর ৮৬ শতক জমি অধিগ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ডঃ. মোঃ. গোরফান ফারুকীসহ তিনি ঐ জমি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। জমিগুলো অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। এদিকে, সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, রামগড় সাব্রুম স্থলবন্দরের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের সংযোগ সড়ক হিসেবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বারৈয়ারহাট হতে রামগড় পর্যন্ত সড়কটি চার লেনে রুপান্তরিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে জাইকা কাজটি করবে। ইতোমধ্যে সড়কে অবস্থিত ব্রিজ ও কালভার্টগুলো পুনঃনির্মাণের জন্য জাইকার প্রকৌশল বিভাগ সরেজমিনে পরিদর্শন করেছে। তারা মাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় প্রাথমিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে। জাইকার এক কর্মকর্তা জানান, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে তারা রামগড়-বারৈয়ারহাট সড়কে ১৫টি ব্রিজ ও কালভার্টের নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। অন্যদিকে চট্টগ্রামের নাজিরহাট হতে রামগড় স্থলবন্দর পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের। সীমান্তের ওপারের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, রামগড় সাব্রুম স্থলবন্দর চালুর দু’দেশের সিদ্ধান্তকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ভারত আগরতলার থেকে সাব্রুম পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপনের কাজ শুরু করে দিয়েছে। এছাড়া জাতীয় সড়কের উন্নয়নসহ বিভিন্ন স্থাপনার নির্মাণ কাজও চলছে। ভারত-বাংলাদেশ এই মৈত্রী সেতু নির্মিত হলে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে পণ্যসামগ্রী ও ভারী যন্ত্রপাতি সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে আনা-নেয়া এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে। এতে ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশই আর্থিকভাবে লাভবান হবে। তবে এ সেতুটি ব্যবহারের মাধ্যমে ভারতই বেশি আর্থিক লাভবান হবে। প্রকৃতপক্ষে চট্টগ্রাম বন্দরের ট্রানজিট সুবিধা নিতে প্রতিবেশি দেশ ভারত এ সেতু নির্মাণে যথেষ্ট আগ্রহী। প্রসংগত উল্লেখ্য যে, বিগত ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরকালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর সাথে বৈঠকে রামগড় স্থলবন্দর চালু করতে যৌথ সিদ্ধান্ত হয়। পরে ২০১৫ সালের ৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী সেতু-১ নামে ফেনীনদীর ওপর প্রস্তাবিত সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উন্মোচন করেন।

http://www.dailysangram.com/post/285086-