২৩ জুন ২০২৪, রবিবার, ৫:৪৫

পানি কমে উত্তরাঞ্চলে নদীভাঙন শুরু

সাহায্যকর্মীরা খাদ্য নিয়ে এলে এগিয়ে আসছে বানভাসি মানুষ। গতকাল মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুরে।ছবি : কালের কণ্ঠ
দেশের অভ্যন্তরে ও উজানে বৃষ্টিপাত অনেকটাই কমেছে গতকাল শনিবার। এতে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীর পানিও কমেছে। উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি কমার প্রবণতা আজ রবিবার সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। তবে এরপর আবার এই অঞ্চলে বৃষ্টি কিছুটা বাড়তে পারে।

এতে আজ সকাল থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত আবার উত্তরের নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

সিলেট, সুনামগঞ্জ ও উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল বন্ধ থাকায় পানি কমছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বানভাসি লোকজন আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে নিজ নিজ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে।
তবে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমে যাওয়ার পর বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বসতবাড়ি ও বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে। কালের কণ্ঠ’র নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

গতকাল সিলেট-সুনামগঞ্জের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার নিচে নেমে গেছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত ক্রমাগত উন্নতির দিকে যাবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

সুনামগঞ্জে নদীতীরবর্তী এলাকার পানি দ্রুত নামলেও হাওর টইটম্বুর থাকায় হাওর তীরবর্তী এলাকার পানি নামছে ধীরে। শহরের দেখার হাওরের তীরে গড়ে ওঠা আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে এখনো পানি রয়ে গেছে।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৮১টি ইউনিয়নে বন্যাকবলিত হয়েছিল প্রায় আট লাখ ৫৫ হাজার মানুষ। ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২৩ হাজার ৮৪৯ জন আশ্রয় নিয়েছিল। শুক্রবার থেকে পানি কমায় মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, শনিবার বিকেল ৩টায় সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমার পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময় ছাতক পয়েন্টে পানি কিছু কমলেও এখনো ৭০ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।

মৌলভীবাজারে নদীর পানি কমেছে। লোকালয় থেকে নেমে যাচ্ছে পানি। তবে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ক্ষতের চিহ্নও বেরিয়ে আসছে।

বড়লেখা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন, জুড়ীর ছয়টি, কুলাউড়ার ৯টি, সদর উপজেলার সাতটি, শ্রীমঙ্গলের পাঁচটি এবং কমলগঞ্জ উপজেলার চারটি ইউনিয়ন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে নদীভাঙন
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় তিস্তার চরাঞ্চলের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি ডুবে এখনো দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি আছে বলে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙনে তোষা পাটসহ নানা ধরনের ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। গত ১৫ দিনে উপজেলার কাপাশিয়া, হরিপুর, শ্রীপুর ও চণ্ডিপুর ইউনিয়নে তিন শতাধিক বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে চরাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাশিদুল কবির জানান, কয়েকটি চরে তিস্তার ভাঙনে ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। ডুবে গেছে ফসলি জমি। তবে চলতি বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমার, তিস্তাসহ প্রধান নদ-নদীর পানি কমে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। গত এক সপ্তাহে সদর, রাজারহাট, উলিপুর, নাগেশ্বরী ও রৌমারী উপজেলায় নদীভাঙনে শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে স্কুল, বাজার, বাঁধসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় দেড় হাজার হেক্টর জমির পাট, বাদাম, ভুট্টা ও সবজির ক্ষেত নিমজ্জিত রয়েছে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কালমাটি ও আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকার অনেক ফসলি জমি এখনো পানিতে ডুবে রয়েছে। ধানের পাশাপাশি ভুট্টা ও বাদাম ক্ষেত পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবারের স্বল্পমেয়াদি বন্যায় কৃষি বিভাগের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কাজ চলছে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2024/06/23/1399601