২১ জুন ২০২৪, শুক্রবার, ৮:০১

জেলায় জেলায় রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক

সারাদেশে ক্রমেই যেন রাজত্ব গেড়ে বসতে শুরু করেছে বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপার। কিছুদিন আগে এই সাপের বিচরণ শুধু চরাঞ্চলে থাকলেও এখন লোকালয়েও দেখা মিলছে। ফলে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বরেন্দ্র এলাকা ছেড়ে ভোলা, মুন্সিগঞ্জ এমনকি ঢাকার আশপাশেও খোঁজ মিলছে সাপটির। অস্তিত্ব মিলেছে ২৫ জেলায়। ভোলার দৌলতখানে বসতঘর থেকে বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপার উদ্ধার হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের লৌহজং বিষধর রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া নামে পরিচিত সাপ ধরা হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকার ধামরাইয়ের আমতা ইউনিয়নের আগজেঠাই কাঁচা রাজাপুর গ্রামের তহিরন নেছা নামে এক নারী সাপের ছোবলে মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বরিশাল, পটুয়াখালী, চাঁদপুর, দিনাজপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর; এমনকি ঢাকার আশপাশেও খোঁজ মিলছে সাপটির। অস্তিত্ব মিলেছে ২৫ জেলায়। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যের প্রতিবেদনে-

দৌলতখান (ভোলা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ভোলার দৌলতখানে বসতঘর থেকে বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপার উদ্ধার হয়েছে। এঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গত মঙ্গলবার রাতে ভবানীপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের জালু মাঝির বসতঘরে কিলিংমেশিন খ্যাত ১টি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখতে পাওয়া যায়। জালু মাঝি জানায়, তার বসতঘরের খাটের নিচে তিনটি বিড়াল মৃত অবস্থায় দেখতে পান। পরে ঘরের লোকজন খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপারকে ঘর থেকে বের হতে দেখেন। তখন সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। উপস্থিত লোকজন সাপটিকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মেরে ফেলেন।

২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর ওই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে একটি বিষধর রাসেল ভাইপার সাপ উদ্ধার হয়েছিল; যা বনবিভাগের মাধ্যমে তজুমদ্দিন উপজেলার শশিগঞ্জ বিটের বনে অবমুক্ত করা হয়। ভোলার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, রাসেলস ভাইপার সাপ সাধারণত লোকালয়ে খুব কমই আসে। বাচ্চা দেওয়ার কারণে হয়তো সাপটি লোকলয়ে চলে আসতে পারে। তবে সবাই এবিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার একটি বিষধর রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া নামে পরিচিত সাপ ধরা হয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে সাপটিকে তৎক্ষণাৎ পিটিয়ে মেরে ফেলেন লোকজন। গত বুধবার বিকেলে উপজেলার গাঁওদিয়া ইউনিয়নের শামুরবাড়ি গ্রামে পদ্মা নদীর পাড়ে সাপটি পাওয়া যায়। স্থানীয় মেম্বার রাশেদুল ইসলাম জানান, একটি রাসেলস ভাইপার সাপ পদ্মা নদী থেকে সাঁতার কেটে তীরে উঠলে এলাকাবাসী সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। সাপটিকে পিটিয়ে মেরে মাটিচাপা দেন। স্থানীয়রা জানান, কয়েক দিনের ব্যবধানে উপজেলায় একাধিক রাসেল ভাইপার সাপের দেখা মেলায় এসব এলাকায় এ সাপের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

ধামরাই (ঢাকা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ঢাকার ধামরাইয়ের আমতা ইউনিয়নের আগজেঠাই কাঁচা রাজাপুর গ্রামের তহিরন নেছা নামে এক নারী সাপের কামড়ে মারা গেছেন। গতকাল ভোরে এ ঘটনা ঘটে। সাপের কামড়ে মারা যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে এলাকা জুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, সারা দেশের মধ্যে কয়েকটি জেলায় অতি বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপারের বিস্তার ছড়িয়ে পড়েছে। এসব জেলাগুলোর মধ্যে ঢাকার ধামরাইয়ের সীমান্তবর্তী মানিকগঞ্জের জেলা রয়েছে। এ জেলার সাটুরিয়ায় রাসেলস ভাইপারের দেখা মিলেছে। এতে সচেতন হতে থাকে পাশের ধামরাইবাসী। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে আমতা ইউনিয়নের আগজেঠাইল কাচা রাজাপুর গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের স্ত্রী তহিরন নেছাকে বাড়ির পাশ থেকে সাপে কামড় দেয়। এতে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে এলাকাবাসী দ্রুত তাকে নিয়ে পাশের সাটুরিয়া সদর হাসপাতালে রওনা দেন। এতে রাস্তায় তার মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা জানান, রাসেল ভাইপার সাপ আতঙ্ক সারা দেশেই প্রায় ছড়িয়ে পড়েছে। আমরাও তার বাইরে নই। তাই তা দ্রুত প্রতিহত করতে সরকারি ভাবে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। সকল উপজেলা স্বস্থ্য কমপ্লেক্স সাপের কামড়ের রোগীদের এন্টিভেনম রাখার অতি প্রয়োজন।

হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের দুর্গম চরাঞ্চল পেরিয়ে এবার লোকালয়ে প্রবেশ করেছে ভয়ংকর বিষধর রাসেলস ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) সাপ। ফলে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত বুধবার দুপুরে উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ে হাঁটার সময় স্থানীয় লোকজনের চোখে পড়ে দুটি রাসেলস ভাইপার সাপের। একটি নদী শাসনের কাজে ব্যবহৃত জিও ব্যাগের ওপর দিয়ে নদীর তীরে উঠছিল। অপরটি নদীর পানিতে ভাসমান ছিলো। এ নিয়ে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। ওপরের সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেও আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় লোকজন। তবে পানিতে ভাসমান সাপটি স্রোতের সাথে ভেসে চলে যাওয়ায় সেটিকে মারতে পারেনি।

এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী গোপালপুর এলাকার সাগর সাহা জানান, বিভিন্ন সময় ফেসবুকে রাসেলস ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) সাপ দেখেছি। কিন্তু এবার বাস্তবে এ সাপের দেখা মিলল। দুপুরে নদীর পাড়ে হাটতে গিয়ে দুটি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখলাম। একটি নদী থেকে এলাকায় প্রবেশ করছে অপরটি নদীর পাড়ে ভেসে রয়েছে। সাপটিকে তৎক্ষণাৎ পিটিয়ে মেরে ফেলেন লোকজন। কিন্তু পানিতে থাকা সাপটি স্রোতের সাথে ভেসে চলে যায়।

গোপীনাথপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর এলাকার যুবক মেহেদী হাসান বলেন, গত বুধবার দুপুরে আমাদের পাশ্ববর্তী এলাকা রামকৃষ্ণপুর পদ্মারপাড়ে রাসেলস ভাইপার সাপের দেখা মিলেছে। পরে উপস্থিত লোকজন একটা সাপকে পিটিয়ে মারলেও অপর সাপটি পানির সাথে অন্যত্র ভেসে গেছে। এতে আমরা নদীর পাড়ের লোকজন খুব আতঙ্কে রয়েছি। তাই আমি নিজ উদ্যোগে আমার বাড়ির আঙিনা ভালো করে পরিষ্কারের চিন্তা করছি। পাশাপাশি প্রতিবেশীদের ও আঙিনা পরিষ্কারের জন্য উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করবো।

এবিষয়ে হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মেহেরুবা পান্না বলেন, রাসেলস ভাইপার সাপের উৎপাত বেড়েছে বলে শুনেছি। মাঝেমধ্যে আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও সাপ দেখা যায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী সাপে কাটা রোগীদের অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন সীমিত। তবে জেলা মিটিংয়ে চাহিদার কথা উপস্থাপন করা হয়েছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি আমাদের চাহিদা অনুযায়ী অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন পাব। তিনি আরো বলেন, যদি কাউকে সাপে কামড়ায় তাহলে দেরি না করে ১০০ মিনিটের মধ্যে সরাসরি হাসপাতালে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে অ্যান্টিভেনম ইনজেকশনের কার্যকরী উপকার পাওয়া যাবে। উল্লেখ্য, গত তিন মাসে এ উপজেলার চরাঞ্চলে বিষধর এ সাপের কামড়ে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে চরাঞ্চলের কৃষকের কৃষিকাজে অনেকটাই আতঙ্কিত হয়ে পরেছেন।

https://dailyinqilab.com/national/article/666166