২১ জুন ২০২৪, শুক্রবার, ৬:২৮

সেন্ট মার্টিন ঘিরে কি নিরাপত্তা–হুমকি তৈরি হচ্ছে

-আলী রীয়াজ

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত ও আরাকান রাজ্যে যা ঘটছে, তার কিছু কিছু খবর প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। এরই মধ্যে গত সপ্তাহে বিরাজমান পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে—বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের খুব কাছেই মিয়ানমারের যুদ্ধজাহাজ দেখা গেছে, মিয়ানমার থেকে উপর্যুপরি গোলাবর্ষণের কারণে নাফ নদীতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপমুখী নৌপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখতে হয়েছে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছিল এবং নদীতে জেলেরা মাছ ধরতে যেতে সাহস পাচ্ছেন না। এগুলো সহজেই দৃশ্যমান বিষয় এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে এগুলোকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা কূটনৈতিকভাবে এর সমাধানের চেষ্টা করছে। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘যুদ্ধকে পরিহার করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে এবং চলবে। তবে আমাদের কেউ আক্রান্ত হলে সেই আক্রমণের জবাব দেওয়া হবে’ (প্রথম আলো, ১৫ জুন ২০২৪)। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘মিয়ানমারের সীমান্তে চলা সহিংসতার দিকে নজর রাখছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও এ ব্যাপারে প্রস্তুত আছে। পরিস্থিতি খারাপ হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে তারা (আমাদের সময়, ১৫ জুন ২০২৪)।

কিন্তু দৃশ্যমান এসব বিষয়ের অন্তরালে কি আরও কিছু আছে? সেন্ট মার্টিনের এ পরিস্থিতি আরও কিছুর দিকে ইঙ্গিত দেয় কি না, সে প্রশ্নও তোলা দরকার।

সেন্ট মার্টিন কেন আলোচনায়
সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে কেন্দ্র করে এসব ঘটনা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করছে দুটি কারণে। এর একটি হচ্ছে আরাকান রাজ্যে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির ক্রমাগত সাফল্য। অন্যটি হচ্ছে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কতিপয় রাজনীতিবিদের কথাবার্তা।

গত কয়েক মাসে বিদ্রোহীরা আরাকান রাজ্যের এক বিশাল এলাকা দখল করে নিয়েছে এবং তাদের এ সাফল্য অব্যাহত থাকলে তারা অচিরেই রাজ্যের রাজধানী সিত্তে নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হবে বলে মনে হচ্ছে। এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে তাদের নিশ্চিত করা দরকার যে নাফ নদী দিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী যেন অগ্রসর হতে না পারে। আরাকান আর্মির পক্ষ থেকে নেওয়া পদক্ষেপ থেকে অনুমান করা যায়, তারা রোহিঙ্গাদের তাদের সমর্থক বলে মনে করছে না। তারা চাইছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যকার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নাফ নদী অতিক্রম করে আরাকানে প্রবেশ করে যেন তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান না নেয়। ফলে নাফ নদীতে চলাচলকারী যেকোনো ধরনের নৌযানের ওপর তারা বিভিন্ন রকম হামলা চালিয়ে তাদের উপস্থিতির জানান দিচ্ছে।

অন্যদিকে মিয়ানমার নৌবাহিনী নাফ নদীতে একই সঙ্গে আরকান আর্মির উপস্থিতি এবং বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য প্রবেশ—দুটিই সম্ভবত মোকাবিলা করতে চাইছে। যে কারণে গত সপ্তাহগুলোয় মিয়ানমারের যুদ্ধজাহাজগুলোর উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। মিয়ানমারের নৌবাহিনীর এই উপস্থিতি কেবল তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই উপস্থিত হচ্ছে—এটা ভেবে নিশ্চিন্ত হওয়ার সুযোগ নেই, কারণ অতীতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে মিয়ানমারের একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি ও আগ্রহ লক্ষ করা গেছে।

সেন্ট মার্টিন ঘিরে আসলে কী হচ্ছে

সেন্ট মার্টিন নিয়ে মিয়ানমারের দৃষ্টিভঙ্গি কী
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বিষয়ে মিয়ানমারের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার জন্য আমরা একটু পেছনে যেতে পারি। ২০১৮ সালে মিয়ানমার এই দ্বীপ তাদের বলে দাবি করেছিল। ওই বছরের অক্টোবর মাসে মিয়ানমারের জনসংখ্যাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট এবং মিয়ানমার ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট ইউনিট বলে আরেকটি সরকারি ওয়েবসাইটে এ দ্বীপকে মিয়ানমারের মানচিত্রের রঙ্গে চিত্রিত করা হয়। শুধু তা–ই নয়, মিয়ানমারের জনসংখ্যাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অধিবাসীদের একটি সংখ্যা দেওয়া হয়েছিল এবং তাদের মিয়ানমারের জনসংখ্যার অংশ বলে হিসাব করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে আপত্তি জানানোর পর এই তথ্যগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে মিয়ানমারের মানচিত্রের রঙেই চিহ্নিত করা হচ্ছিল (দ্য ওয়ার, ১৪ অক্টোবর ২০১৮)। এ চেষ্টা করা হয়েছিল ২০১১ সালে ইটলসের রায়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধের নিষ্পত্তির সাত বছর পরে। যার একটা অর্থ হচ্ছে, সমুদ্রসীমা বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় মেনে নিয়েও সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বিষয়ে তাদের আকাঙ্ক্ষার অবসান হয়নি।
এর আরেকটি ব্যাখ্যা হতে পারে এই যে সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে কেন্দ্র করে একটি অজুহাত সৃষ্টি করা, যাতে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সামরিক বিরোধের সূচনা হয়। এ ধরনের একটি পরিস্থিতির সূচনা হয়েছিল ২০০৮ সালের নভেম্বরে। সেই সময় মিয়ানমার দক্ষিণ কোরীয় কোম্পানি দাউইকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে ৫০ নটিক্যাল মাইল অঞ্চলে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য পাঠিয়েছিল এবং একে কেন্দ্র করে দুই দেশের নৌবাহিনী পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে পড়ে। কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ অবস্থার অবসান ঘটে। এ ঘটনা সমুদ্রসীমা নির্ধারণে ইটলসের সিদ্ধান্তের আগের। কিন্তু সমুদ্রসীমা নির্ধারণের আগে ও পরের ঘটনার মধ্যে পার্থক্য না থাকায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ব্যাপারে মিয়ানমারের দৃষ্টিভঙ্গির ফারাক ঘটেনি বলেই বলা যায়।

মিয়ানমার কি এ ধরনের অজুহাত তৈরি করতে পারে, যাতে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়ে? এ প্রশ্ন উত্থাপন করা যায় এই কারণে যে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে র‍্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেছিলেন, মিয়ানমার অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাচ্ছে (প্রথম আলো, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)। খুরশীদ হোসেনের ভাষায়, ‘পায়ে পাড়া দিয়ে উসকানি দিচ্ছে মিয়ানমার।’

কোনো কোনো নিরাপত্তাবিষয়ক বিশ্লেষক মিয়ানমারের অভ্যন্তরে, বিশেষত আরাকান রাজ্যের গৃহযুদ্ধ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের ভেতরে বিস্তার লাভ করবে না বলেই মন্তব্য করেছিলেন (ভয়েস অব আমেরিকা, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)। কিন্তু গত অক্টোবরে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সম্মিলিত অভিযান ‘অপারেশন ১০২৭’ শুরু হওয়ার পর বিভিন্নভাবেই তা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তা–হুমকি তৈরি করছে।
সেন্ট মার্টিন উপলক্ষ, না লক্ষ্য?

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে মনোযোগের দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে রাজনীতিবিদদের কথাবার্তা। এ পর্বের সূচনা হয় গত বছরের জুন মাসে। জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরিক জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন অভিযোগ করেন, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চাপ আসলে নির্বাচন নিয়ে নয়, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ঘাঁটি বানানোর জন্য। মেনন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চায় সেন্ট মার্টিন’ (বণিক বার্তা, ১৫ জুন ২০২৩)। ইনু বলেন, ‘হঠাৎ আমেরিকার এত উৎসাহ কেন? তারা কি গণতন্ত্র চায়? না সেন্ট মার্টিন চায়?’ (কালের কণ্ঠ, ১৯ জুন ২০২৩)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপ কাউকে লিজ দিলে ক্ষমতায় থাকতে কোনো অসুবিধা নেই’ (প্রথম আলো, ২১ জুন ২০২৩)।

নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের কথা না বলা হলেও দেশটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছিল বলেই বোঝা যাচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বিরোধী দল বিএনপি সেন্ট মার্টিন বিক্রি করে বা লিজ দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়। এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, যার মধ্যে সেন্ট মার্টিনও আছে। একই ধরনের বক্তব্য দেন ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার সাংবাদিক মুশফিক ফজল আনসারির করা এক প্রশ্নের উত্তরে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কখনোই সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করেনি (প্রথম আলো, ২৮ জুন ২০২৩)।

যুক্তরাষ্ট্র সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ঘাঁটি বানাতে চায়—এ ধরনের কথাবার্তা ১৯৮০-এর দশক থেকে বিভিন্ন রাজনীতিবিদ বললেও যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই তা নাকচ করে এসেছে। ২০০৩ সালের ২ জুলাই ঢাকায় তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মেরি অ্যান পিটার্স বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিস) এক আলোচনা সভায় বলেছিলেন, ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, চট্টগ্রাম বা বাংলাদেশের অন্য কোথাও সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা, প্রয়োজন ও ইচ্ছাও যুক্তরাষ্ট্রের নেই।’

এরপরও সময়ে সময়ে এ ধরনের বক্তব্য বাংলাদেশের কিছু রাজনীতিবিদ দিয়ে থাকেন এবং ভারতীয় গণমাধ্যমেও বলা হয়ে থাকে। ২০১২ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশ সফর করার সময় ভারতের টাইমস গ্রুপের টিভি চ্যানেল টাইম নাউ মে মাসের শেষে প্রচারিত এক প্রতিবেদনে দাবি করে, ‘এ অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান চীনা প্রভাব মোকাবিলা করতেই বঙ্গোপসাগরে মার্কিন নৌবহরের ঘাঁটি চাইছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ভারতের জন্য উদ্বেগজনক।’ এ–ও বলে হয়েছিল, ‘যুক্তরাষ্ট্র চট্টগ্রামে নৌঘাঁটি চায়।’

কোনো ধরনের তথ্য–প্রমাণ ছাড়াই দাবি করা হয়, বাংলাদেশের সফরের সময় হিলারি ক্লিনটন এ নিয়ে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এ মন্তব্য প্রচারিত হয়েছিল একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে। ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড তা নাকচ করে দেন। তা সত্ত্বেও এর পরপরই বাংলাদেশের সংসদে এ প্রশ্ন তোলেন রাশেদ খান মেনন। উত্তরে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, এ ধরনের বিষয় নিয়ে হিলারির সঙ্গে তাঁর কোনো আলোচনা হয়নি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, ১ জুন ২০১২)।

সপ্তম নৌবহরের জন্য এই ঘাঁটি চাওয়া হচ্ছে বলেও ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়। এ প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২ জুন এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে ভিত্তিহীন বলে বর্ণনা করে, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ভাষ্যও ছিল তা–ই (দ্য ডেইলি স্টার, ২ জুন ২০১২)। লক্ষ করার বিষয়, যাঁরাই দাবি করছেন, কোনো দেশ সেন্ট মার্টিন দ্বীপ লিজ বা মালিকানা চাইছে, তাঁরা এ বিষয়ে কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট তথ্য দিচ্ছেন না।

২০২৩ সালের ২৩ জুন নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে যে কথা বলা হয়েছে এবং যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তা স্মরণ করা যেতে পারে। সেখানে লেখা হয়েছে ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রকৃতপক্ষে বঙ্গোপসাগরের ওই দ্বীপে মৌখিক বা লিখিতভাবে হাত দিতে চেয়েছে কি না, তা নাগরিকদের জানা দরকার। কারা এ প্রস্তাব দিলেন? কার কাছে? কখন? কোথায়? সেন্ট মার্টিন দ্বীপ–সম্পর্কিত এসব বিষয়ে নাগরিকদের অবহিত করা এবং ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য সরকার দায়বদ্ধ।’

বাংলাদেশের সামরিক ও নিরাপত্তাবিষয়ক বিশ্লেষকেরা ১৯৮০-এর দশক থেকেই বলে আসছেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের আকার, আকৃতি, অবস্থান ও গঠন এই দ্বীপে কোনো ধরনের ঘাঁটি বানানোর উপযোগী নয় (কমোডর কাজী ইমদাদুল হক, কন্ট্রোভার্সি সারাউন্ডিং দ্য এলেজড লিজ অব সেন্ট মার্টিনস আইল্যান্ড, দ্য সিকিউরিটি, ৬ আগস্ট ২০২৩)। এই দ্বীপের ব্যাপারে নিরাপত্তাবিষয়ক বিশ্লেষকদের বক্তব্য সুস্পষ্ট, ‘কৌশলগত দিক থেকে সেন্ট মার্টিন খুব গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ নয়। কারণ, এটা খুবই ছোট একটা প্রবালদ্বীপ। নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকেও দ্বীপটি খুব নিরাপদ নয়’ (এম সাখাওয়াত হোসেন, সেন্ট মার্টিনকে ঘিরে আসলে কী হচ্ছে, প্রথম আলো, ১৬ জুন ২০২৪)।

এসব সত্ত্বেও বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের একাংশ, ভারতীয় গণমাধ্যম এবং কিছু কিছু ভারতীয় বিশ্লেষক সেন্ট মার্টিন দ্বীপ মার্কিনদের লিজ নেওয়ার কিংবা চট্টগ্রামে সপ্তম নৌবহরের জন্য ঘাঁটি তৈরির প্রশ্ন যখন তোলেন, সেটাকে কেবল কথার কথা কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা বলে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। সেন্ট মার্টিনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টির পরিপ্রেক্ষিতে এই আলোচনাগুলো সেন্ট মার্টিন দ্বীপের নিরাপত্তার ব্যাপারে আরও কোনো ধরনের ব্যবস্থার দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন তোলা যায়। সে ক্ষেত্রে লক্ষ্য হতে পারে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের নৌসীমার নিরাপত্তায় বাংলাদেশের বাইরের কোনো শক্তির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উপস্থিতির পথ সুগম করা। পরিস্থিতি যেন সেদিকে অগ্রসর না হয়, এ বিষয়ে নজর রাখা জরুরি।
• আলী রীয়াজ ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, রাজনীতি ও সরকার বিভাগ, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটি

https://www.prothomalo.com/opinion/column/hc5wju482c