২০ জুন ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৩:৩৪

উজানের পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত সিলেট-সুনামগঞ্জ

ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে পুরো সুনামগঞ্জ প্লাবিত হয়েছে। এর আশপাশের উপজেলাগুলোও বানের পানিতে তলিয়ে আছে। ফলে লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। এ ছাড়া কক্সবাজারের টেকনাফ ও মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করেছে।

অভ্যন্তরীণ বৃষ্টি ও উজানের ঢলের পানিতে রংপুর ও সিলেট বিভাগের কয়েক জেলায় বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। অবনতি হয়েছে বেশ কয়েকটি স্থানে। সিলেট জেলার ৮০ শতাংশ এলাকা বন্যাকবলিত। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে সুমামগঞ্জের বহুল এলাকা। রংপুর ও সিলেট বিভাগের আট নদী ১৪ স্থানে বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছিল। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে প্রচুর বর্ষণ হওয়ায় সেই পানি নেমে এসে সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবিয়ে দিয়েছে। লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কোমর সমান পানিতে সিলেট ও সুনামগঞ্জ শহরের অনেক এলাকার মানুষ দিশেহারা। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য তারা অন্যত্র যেতে পারছেন না নিজের বাড়ির নানা মূল্যবান জিনিসপত্রের মায়ায়।

কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে উজানে ভারতের কয়েকটি প্রদেশে ব্যাপক বর্ষণের পানি প্রবল গতিতে নেমে আসছে। এর ফলে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রংপুর ও সিলেট বিভাগের নদীগুলো উপচে দুই পাশে বন্যার পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। আজ বৃহস্পতিবার সারাদিন সিলেট, ময়মনসংিহ ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে থেমে থেমে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের এই তিন বিভাগের জেলাগুলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের সাথে লাগোয়া। বাংলাদেশের এই তিন বিভাগের জেলাগুলোতে বৃষ্টির সাথে সাথে ভারতের ওই অঞ্চলেও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। ভারতের এই তিন রাজ্যে গত কয়েকদিন থেকে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সিলেট বিভাগে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে এর কয়েকগুণ বেশি বৃষ্টি হয়। সে কারণে মেঘালয় থেকে প্রচুর পানি ধেয়ে আসছে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে। ফলে আজ বৃহস্পতিবারও রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আজ থেকে আরো তিন দিন দেশের কয়েকটি অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল গতকাল দুপুরের দিকে। অভ্যন্তরীণ বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে আজ সুরমার পানি আরো বেড়ে যাওয়ার রয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা আরো পানি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভারতের আবহাওয়া বিজ্ঞান দফতরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, অরুণাচল, আসাম এবং মেঘালয়ে আগামী কয়েকদিন ধরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। আসামের বাংলাদেশ লাগোয়া এলাকাগুলোতে লাগাতার বৃষ্টি ও বন্যার পানি বাড়ছে। ভারতের করিমগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি পাবে এবং কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।

তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ, সুনামগঞ্জ থেকে জানান, টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জ শহর ও এর পাশের কয়েকটি উপজেলা। এতে জেলার লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। পৌর শহরের প্রায় সব এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। অনেকেই বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ও আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিচ্ছেন। শহরতলীর আশপাশে বাসা বাড়িতেও প্রবেশ করেছে পানি। উজানের পাহাড়ি ঢল ও অব্যাহত ভারী বর্ষণে সুরমা নদী এবং অভ্যন্তরীণ নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সুনামগঞ্জ জেলার, ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, জগন্নাথপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলার নিচু এলাকার ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও সড়ক প্লাবিত হয়। গত রোববার রাতভর বৃষ্টিতে সোমবার ভোরেই আচমকা পানি প্রবেশ করে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গত মঙ্গলবার বেলা ৩টায় বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হয় পানি। গত বুধবার সুরমা নদীর পানি প্রবাহিত হয় ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। সুরমা নদীর তীর উপচে পানি জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা দ্রুত প্লাবিত হওয়ায় মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই ২০২২ সালের ১৬ থেকে ১৯ জুনের সেই ভয়াবহ বন্যার কথা মনে করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। শহরের বেশির ভাগ রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি ঢুকেছে মানুষের ঘরবাড়িতে। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ৬৫ মিলিমিটার। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৩৯৫ মিলিমিটার। সুনামগঞ্জ জেলার ১২ উপজেলাসহ দোয়ারাবাজার, ছাতক ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়াও সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের সব ক’টিই প্লাবিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার ও ছাতক উপজেলায় ১৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

ভারতের মেঘালয়-চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী সদর উপজেলার বনগাঁও নখরিয়া ছড়া সীমান্ত নদী, ধোপাজান চলতি নদী, তাহিরপুর উপজেলার জাদুকাটা ও পাটলাই নদী এবং দোয়ারাবাজার উপজেলার খাসিয়ামারা, চিলাই ও ছেলা নদী দিয়ে পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুতবেগে প্রবাহিত হয়ে জেলার প্রধান নদী সুরমা কালনী ও কুশিয়ারা কানায় কানায় ভরপুর হয়ে ভাটির জনপদে এই স্বল্পমেয়াদি বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।

অন্য দিকে সিলেট জেলার বন্যার পানি ছাতক উপজেলায় আঘাত হেনে জেলার অন্যতম দেখার হাওর ও জাউয়ার হাওর অতিক্রম করে সুনামগঞ্জ শহরকে প্লাবিত করে।

সুনামগঞ্জ জেলা শহরের সাথে দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক তাহিরপুর উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ইতোমধ্যেই বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফলে নৌকার ওপরেই ভরসা করতে হচ্ছে। সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার তেঘরিয়া, বড়পাড়, আরপিনগর, পশ্চিম হাজীপাড়া, ষোলঘর, নবীনগর, সুলতানপুর, জলিলপুর, উকিল পাড়াসহ বিভিন্ন জায়গাতেই মানুষের ঘরবাড়ি ও সড়কে পানি প্রবেশ করেছে। এ ছাড়াও মধ্য বাজার, পূর্ব বাজারসহ অন্যান্য দোকানপাট পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন উপজেলার নলকূপগুলোর কিছু কিছু পানির নিচে চলে যাওয়ার ফলে বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। হাঁস মোরগ ও মাছসহ অন্য গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিসার সামছুল করিম জানিয়েছেন, বন্যার ফলে ইতোমধ্যেই ২ হাজারের বেশি চাষকৃত পুকুরের মাছ ভেসে গেছে টাকার অঙ্কে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৫০০ কোটি টাকা।

সকাল থেকে শহরের কাজিরপয়েন্ট, তেঘরিয়া, পূর্ব সুলতানপুর ও নতুনপাড়াসহ পৌর শহরের প্রায় ২৫টি আবাসিক এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

বৃষ্টির পানি পাহাড়ি নদী বাংলাদেশ দিয়ে নামায় জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের পাশ দিয়ে প্রবাহিত খাসিয়ামারা নদীর বেড়িবাঁধ ও বোগলাবাজার ইউনিয়নের চিলাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে আশপাশের ৫০টি গ্রাম ও সড়ক প্লাবিত হয়ে প্রায় লাখো মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। ইতোমধ্যে বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে জগন্নাথপুর উপজেলার নিচু এলাকা। সুনামগঞ্জ বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার একমাত্র ১০০ মিটার সংযোগ সড়কটিতে পানি উঠে যাওয়ায় গত তিন দিন ধরে জেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে। সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ডলুরা সড়কটি প্লাবিত হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।
সীমান্তের ওপার মেঘালয় চেরাপুঞ্জিতে গত চার দিন ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ৩৬৫ মিলিমিটার এবং সীমান্তের ওপারে হয়েছে ৪৪১ মিলিমিটার।

সুনামগঞ্জ প্রেস ক্লাব সভাপতি অধ্যক্ষ শেরগুল আহমেদ বলেন, শহরের প্রধান সড়কে পানি উঠেছে। অনেক মানুষের বাসা বাড়িতে পানি। আমদের উকিলপাড়া প্রেস ক্লাবের ভেতরে হাঁটু পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পাউবো) মামুন হাওলাদার বলেন, সুরমা, কুশিয়ারা, কালনী নদীর পানি মেঘনা নদীতে গিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কিছুটা দুর্ভোগ বাড়বে। তবে আগামী তিন দিনের মধ্যে পানি স্থির হয়ে ধীরে ধীরে কমতে পারে। যদি আগামী দুই দিন এ বৃষ্টি আরো বাড়ে। তা হলে ওই অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, সুনামগঞ্জ বন্যা শুরু হচ্ছে। তবে ভয়ের কোনো কারণ নেই। আমার বাসায়ও পানি উঠেছে। আমি অফিসিয়াল কাগজপত্র ও আসবাবপত্র দোতালায় উঠাচ্ছি। জেলায় বন্যা শুরু হয়েছে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সকলকে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার অনুরোধ জানান তিনি। জেলায় মোট ৫১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রশাসনের উদ্যোগে খাদ্যসহায়তা দেয়া হচ্ছে।

টেকনাফের ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দী
কক্সবাজার অফিস ও উখিয়া সংবাদদাতা জানান, কক্সবাজারের টেকনাফে ভারী বর্ষণে এ পর্যন্ত অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে কম করে হলেও ৫০ হাজার পরিবার বন্দী রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।

গত মঙ্গলবার রাত ৯টার পর থেকে কক্সবাজার জেলায় ভারী থেকে মাঝারি মানের বৃষ্টিপাত শুরু হয়। কক্সবাজার শহরে অবস্থিত কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক তোফায়েল আহমদ জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে গতকাল বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।

টেকনাফে শুধু ৬ ঘণ্টায় ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ডেরে তথ্য জানিয়েছেন টেকনাফ আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বরত ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, গতকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ৮ গ্রাম, হ্নীলা ইউনিয়নের ১২ গ্রাম, টেকনাফ পৌরসভার ৭ গ্রাম, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৬ গ্রাম, সাবরাং ইউনিয়নের ৭ গ্রাম, বাহারছড়া ইউনিয়নের ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। এতে কমপক্ষে ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের ১২ গ্রামের ৪ হাজার বেশি পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। এসব গ্রাম হল, জালিয়াপাড়া, সাইটপাড়া, ফুলের ডেইল, আলী আকবর পাড়া, রঙ্গিখালী লামার পাড়া, আলীখালি, চৌধুরী পাড়া, পূর্ব পানখালী, মৌলভীবাজার লামার পাড়া, ওয়াব্রাং, সুলিশপাড়া, পূর্ব সিকদার পাড়া। এসব গ্রামের চলাচলের রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। টেকনাফ পৌরসভার কলেজপাড়া, শীলবুনিয়া পাড়া, ডেইলপাড়া, জালিয়াপাড়া, খানকারডেইল, চৌধুরীপাড়া, কেকে পাড়া প্লাবিত হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান। তিনি জানান, এই ৭ গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দী। পানিতে ডুবে আছে টেকনাফ কলেজসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু ঘরবাড়িসহ চলাচলের রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় মাছের ঘেরসহ লবণের ক্ষতি হয়েছে। টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জানিয়েছেন, সদরের ৬ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এগুলো হলো- মহেশখালীয়াপাড়া, তুলাতুলি, লেঙ্গুরবিল, খোনকারপাড়া, মাঠপাড়া, রাজারছড়া।

হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারি জানিয়েছেন, লম্বা বিল, উলুবনিয়া, আমতলি, মিনাবাজার, উনচিপ্রাং, কাঞ্চনপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, রইক্ষ্যং গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৩৫০ পরিবার সব চেয়ে বেশি প্লাবিত রয়েছে। এর মধ্যে উনচিপ্রাং এলাকার একটি রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বসতবাড়িতে এক ফুট পানি উঠে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: আদনান চৌধুরী বলেন, ‘ভারী বর্ষণে ফলে কিছু গ্রামে মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। আমরা তাদের খোঁজখবর নিচ্ছি। পাশাপাশি অতিভারী বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সকাল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের অন্যত্র সরে যেতে বলা হচ্ছে। এজন্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

কুলাউড়ায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, মৗলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও কুলাউড়া পৌরসভার বৃহৎ অংশ ঈদের দিন থেকে বন্যায় প্লাবিত হয়ে গত তিন দিনে কমপক্ষে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। গতকাল বুধবার সকাল থেকে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। বুধবার নতুন করে আরো এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শহরেও বাসা বাড়িতে পানি উঠেছে। ৭ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় আশ্রয়কেন্দ্র খুলা হলেও আশ্রিতরা খাবার ও খাবার পানির সঙ্কটে পড়েছেন। ঈদের রাতে পৌর মেয়রের পক্ষ থেকে খাবার দেয়া হলেও গত মঙ্গলবার সারাদিন কোনো খাবার দেয়া হয়নি বানভাসীদের। তবে গতকাল বুধবার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ত্রাণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, হাকালুকি হাওর এলাকার ভুকশিমইল ইউনিয়নের ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়াও জয়চন্ডি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের ১৫ হাজার, পৌরসভার ১২টি গ্রামের ২০ হাজার, সদর ইউনিয়নের দুইটি গ্রামের দুই হাজার, ব্রাহ্মণবাজারের ১০টি গ্রামের ১৫ হাজার, কাদিপুরের ২০ হাজার, ভাটেরা ও বরমচাল ইউনিয়নের ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ৩০টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

ছাতকে পৌর এলাকা ও ১৩টি ইউনিয়ন
ছাতক (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে ছাতক উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকা। বন্যার পানিতে থই থই করছে উপজেলার সর্বত্রই। উপজেলা পরিষদ, থানাসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ছাতক পৌরসভাসহ উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। উপজেলা সদরের সাথে সকল ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ছাতক-সিলেট, ছাতক-জাউয়া, ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়কসহ সকল গ্রামীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। নদ-নদীতে নৌ-চলাচলও সীমিত।

ছাতকে সুরমা, চেলা ও পিয়ান নদীর পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতক উপজেলার ১৩ ইউনিয়ন ও পৌর সভার হাজার হাজার ঘরবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। শত শত কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন শত শত মানুষ। উপজেলার বিভিন্ন বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েক হাজার পরিবার। উপজেলার হাট-বাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। গ্রামীণ অনেক সড়ক ভেঙে গিয়ে প্রবল বেগে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্টের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

মঙ্গলবার উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে ও পৌরসভার বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন ছাতক-দোয়ারাবাজার নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য, জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহিবুর রহমান মানিক। এ সময় তিনি বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকজনদের সাথে কথা বলেন এবং তাদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী ও শুকনো খাবার বিতরণ করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা মুন্না জানান, বন্যার্ত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণ করা হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করেনি, এসব প্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ মোকাবেলায় সকল ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।

সিলেটে সাড়ে ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দী, খোলা হয়েছে ৬৫৬ আশ্রয়কেন্দ্র
বাসস জানায়, মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অব্যাহত বৃষ্টিতে সিলেটের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। গতকাল দুপুর পর্যন্ত জেলায় সাড়ে আট লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সিলেটে আগামী তিন দিন ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, জেলার সব ক’টি উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, সুরমা, কুশিয়ারা, গোয়াইন, সারি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বেলা ৩টা পর্যন্ত সুরমার কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে সুরমার সিলেট পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার অমলশীদ পয়েন্টে ৫৬ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯৯ সেন্টিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার, গোয়াইন নদীর গোয়াইনঘাট পয়েন্টে পাঁচ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কুশিয়ারার শেওলা পয়েন্টে ৬০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট সিটি করপোরেশনে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, সিলেট নগরে বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় সিটি করপোরেশনের সেচ্ছাসেবক টিম কাজ করছে। সার্বক্ষণিক সহযোগিতার জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো: সজিব হোসেন জানান, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আজ সকাল ৬টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ১০৭.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, বুধবার সকাল পর্যন্ত সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার ১০৬টি ইউনিয়নের এক হাজার ৫৪৮ গ্রাম, একটি পৌরসভা, সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩টি এরই মধ্যে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

তাহিরপুর প্লাবিত, চরম দুর্ভোগে মানুষ
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, টানা বর্ষণ আর ভারতের অব্যাহত পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তিন দিন ধরে জেলা শহরের সাথে তাহিরপুর উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে।

যাদুকাটা, বৌলাই নদী দিয়ে পানি প্রবল বেগে ভাটির দিকে প্রবাহিত হওয়ায় উপজেলায় ইতোমধ্যে ১০ গ্রামের বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এতে করে গত ২০২২ সালের মতোই বন্যার আতঙ্কে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় রয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

বর্ষা এলেই মনে হয় ২২ সালের সেই ভয়ঙ্কর বন্যা
দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়কই এখন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। কোনো কোনো সড়কে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি বানের স্রোতে ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি ঢুকেছে মানুষের ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। আবার কেউ কেউ যাচ্ছেন আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

গত সোমবার সকাল থেকে গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বর্ষা আসলেই চোখে ভাসে ২০২২ সালের সেই ভয়ঙ্কর বন্যা, তাই ঈদের দিনটি নিয়েই ছিল ভয় বেশি। মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দের চেয়ে আত্মরক্ষার চিন্তাই কাজ করছে বেশি। তিনি জানান, বোগলাবাজার ও লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন থেকে শুরু করে উপজেলা সদর পর্যন্ত সব কয়টি চলাচলের রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথায় হাঁটু, কোথাওবা তার চেয়ে বেশি পানি। কোথাও কোথাও পানির স্রোতে রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় সেখানে নৌকায় যাতায়াত করছেন লোকজন।

লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ওমরগনি বলেন, চলতি বন্যায় লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের চলাচলের রাস্তা ও বসতঘরের বেশি ক্ষতি হয়েছে। ঈদের আগের দিনেই রাস্তাঘাট ভেঙে বসতঘরে পানি ঢুকে সর্বস্ব ভাসিয়ে ঈদ আনন্দ মাটি করে দিয়েছে। এখানেও পানি বেশি। দোকানপাটে পানি ঢোকায় সেগুলো বন্ধ। রাত থেকে পানি স্থির ধরে আছে।

দোহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামিমুল ইসলাম শামিম বলেন বলেন, এলাকার সব সরকারি-বেসরকারি স্কুল খুলে দেয়া হয়েছে মানুষ আশ্রয় নেয়ার জন্য।

নরসিংপুর ইউনিয়নের নাছিমপুর বাজারের ব্যবসায়ী আলী হুসেন বলেন, বাজারের সব কয়টি দোকানপাটে পানি ঢুকেছে। এতে সমস্যায় পড়েছেন তারা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রচুর। ঈদের দিন ঈদ আনন্দে ভুলে গিয়ে নিজে ও পরিবারের সদস্যদের বেঁচে থাকার সম্বল দোকানের মালামাল রক্ষা করতে কাজ করেছেন। তবুও অনেক মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়িতে পানি। গতকাল মঙ্গলবার থেকে লোকজন এলাকার স্কুল ও মাদরাসায় আশ্রয় নিয়েছেন।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মামুন হাওলাদার দুপুরে বলেন, সুনামগঞ্জে গত ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় পানি কিছুটা কমলেও উজানে বৃষ্টিপাত হওয়ায় পানি বেড়েছে। যদি উজানে বেশি বৃষ্টি হয়, তাহলে পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহের নিগার তনু আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
খুলে দেয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট

রংপুর অফিস জানায়, বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপরে এবং লালমনিরহাটের ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। ব্যারাজ পয়েন্টে সব ক’টি জলকপাট খুলে দিয়েছে পাউবো। পানি ঢুকেছে ভাটিতে অববাহিকার দুই পাড়ের চরাঞ্চল-নিম্নাঞ্চলে। এসব এলাকার অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা অববাহিকায় ২২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। উত্তরাঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, গতকাল সকাল ৬টায় রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার নিচে উপরে। সকাল ৯ টায় আরো ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়। এখন এই পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার পানি। এর আগে ১৪ জুন ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এই পয়েন্টে প্রবাহিত হচ্ছিল তিস্তার পানি।

অবশিষ্ট এলাকাগুলো থেকে পাওয়া তথ্যমতে, তিস্তায় পানি বৃদ্ধির কারণে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারী, সদর, নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে বাদাম, শাকসবজিসহ উঠতি বিভিন্ন ফসলের জমি। এতে দুর্বিপাকে পড়েছেন তিস্তা অববাহিকার মানুষ। গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ তামান্না জানান, ডিস্তায় পানি বাড়ার কারণে নদীর কিনারে চরাঞ্চলে বসবাসকারী জনগণকে উঁচু জায়গায় গবাদিপশু ও অন্যান্য সামগ্রী সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। রংপুরের ডিসি মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, বন্যা মোকাবেলা করতে মাঠপর্যায়ে প্রশাসনকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি আছে আমাদের।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/843590