১৬ জুন ২০২৪, রবিবার, ১১:৪০

ঘরমুখো মানুষের অন্তহীন ভোগান্তি

ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য, ঢাকার প্রবেশদ্বারগুলোতে তীব্র যানজট, মহাসড়কে যানবাহনের ধীরগতি, সঠিক সময়ে গাড়ি না পাওয়া, আরো অনেক ঝক্কিঝামেলা। তারপরও নাড়ির টানে বাড়ি ছুটছেন মানুষ। বাসে যাদের সিট হয়নি তারা ছুটছেন ভাড়ার মোটরসাইকেল, প্রাইভেট গাড়ি বা খোলা ট্রাকে করে। বাসের ছাদেও মানুষ চড়ছেন। ভেতরে সিটের অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করছে বাসগুলো। লঞ্চের ছাদে চেপেছেন মানুষ। এমনকি, ট্রেনের ছাদেও অনেকে উঠেছেন বাড়ি ফেরার জন্য।

ভাড়া নিয়ে দেশজুড়ে চলছে চরম নৈরাজ্য। সরকারি পরিবহন বিআরটিসি বাসেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের খবর মিলেছে। আর ব্যক্তি মালিকানাধীন পরিবহনগুলো যে যেভাবে পারছে যাত্রীদের পকেট কাটছে। নামীদামি পরিবহন কোম্পানিগুলোও যাত্রীদের প্রতি সদয় হচ্ছে না। তারাও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে অধিকাংশ পরিবহন স্বাভাবিক সময়ে যে গন্তব্যের জন্য ৫০০-৫৫০ টাকা ভাড়া আদায় করে সেই ভাড়া এখন প্রায় দ্বিগুণ। যাত্রীরা জানান, সায়েদাবাদ/যাত্রাবাড়ি থেকে ঝালকাঠীর রাজাপুর পর্যন্ত পালকি পরিবহন ৭৫০, বরিশাল এক্সপ্রেস ও মিজান পরিবহন ১০০০, সাকুরা সায়েদাবাদ থেকে ৮০০, সাকুরা আব্দুল্লাহপুর গাজীপুর ও নবীনগর ৯৫০, লাবিবা গাবতলী থেকে ৯৫০, এবং গাজীপুর ১০০০-১০৫০ টাকা ভাড়া আদায় করছে। শ্যামলী পরিবহন আদায় করছে ৯৫০-১০০০ টাকা, হানিফ ৯০০-৯৫০ এবং ইসলাম ও যমুনা পরিবহন আদায় করছে ১০০০-১২০০ টাকা। এভাবে প্রতিটি রুটেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হচ্ছে। প্রশাসনের কর্তারা অতিরিক্ত ভাড়া না নেয়ার নির্দেশ দিলেও সেই নির্দেশ কেউ মানছে না।

লঞ্চেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। আগে লঞ্চের ডেকের ভাড়া ছিল ৩০০ টাকা। সেই ভাড়া এখন ৪০০-৫০০ টাকা। সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ছিল ১০০০ টাকা। সেই ভাড়া রাখা হচ্ছে ১২০০ টাকা। ডাবল কেবিনের ভাড়া ছিল ২০০০ টাকা। সেই ভাড়া আদায় হচ্ছে ২৪০০-২৫০০ টাকা। রাজধানীতে চলাচলকারী বাসের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। ঈদ বকশিসের নামে যে যেভাবে পারছে যাত্রীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে।

লঞ্চ-ট্রেনের ছাদেও জায়গা নেই : গতকাল ঘরমুখো মানুষের এতটাই চাপ ছিল যে লঞ্চ ট্রেনের ছাদেও স্থান হয়নি অনেকের। কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় যে মানুষ সিটে বসা আছে তার তুলনায় গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছে বেশি মানুষ। আর ছাদে চড়ার জন্য প্রতিযোগিতা করছে মানুষ। ট্রেনগুলো যখন ছেড়েছে তখন ছাদেও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। লঞ্চে ছাদে উঠতে বারন থাকলেও প্রতিটি ছাদেই যাত্রী ছিল কানায় কানায় পূর্ণ।

যে যেভাবে পারছেন ছুটছেন : অনেকে বাস-ট্রেনে সিট না পেয়ে বিকল্পভাবে ছুটছেন নির্দিষ্ট গন্তব্যে। অনেকে ভাড়ার মোটরসাইকেল নিয়ে দূরপাল্লায় যাচ্ছেন। জীবনের ঝুঁকি রয়েছে এমন জেনেও বাধ্য হচ্ছেন তারা। কালাম নামের এক যাত্রী গতকাল বিকেলে ইত্তেফাক মোড়ে বসে জানান, তিনি মকসুদপুর যাবেন। বাসে সিট পাবেন কিনা এই আশঙ্কায় তিনি ভাড়ার মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে খোলা ট্রাকে চেপে বসেছেন বাড়ি যাওয়ার জন্য।

৩ কিলোমিটার যেতে ৩ ঘণ্টা : রাজধানীর আর কে মিশন রোড থেকে সদরঘাটের দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। রিকশায় যেতে সাধারণত সময় লাগে ১৫ মিনিটের মতো। অথচ সেই পথ পাড়ি দিতে গতকাল সময় লেগেছে ৩ ঘণ্টা। নয়া দিগন্তের সিনিয়র রিপোর্টার জিলানি মিলটন গতকাল বিকেলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে রিকশায় সদরঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হন আর কে মিশন রোড থেকে। তিনি জানান, সদরঘাট পৌঁছতে তার সময় লেগেছে ৩ ঘণ্টা। তিনি বলেন, এর চেয়ে বড় ভোগান্তি আর কি হতে পারে। রাস্তার ওপর পশুর হাঁট বসার কারণে অনেক এলাকা এখন অবরুদ্ধ। যে কারণে বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকার প্রবেশদ্বারে তীব্র যানজট : গতকালও রাজধানীর প্রবেশদ্বারগুলোতে তীব্র যানজট লক্ষ্য করা গেছে। রাজধানী ফাঁকা থাকলেও মানুষ ঢাকা থেকে বের হতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে পড়েন। আবার ঢাকায় প্রবেশ করতে গিয়েও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। এতে মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েন।

মহাসড়কেও ধীরগতি : এবার মহাসড়কে তীব্র যানজট না থাকলেও কোথাও কোথাও যানবাহনের ধীরগতি রয়েছে। বিশেষ করে ব্রিজগুলো টোল প্লাজার উভয় পাশে এই ধীরগতির কথা জানিয়েছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে রাতে প্রায় ১৩ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। জানা গেছে, অতিরিক্ত চাপের কারণে রাতে টোল আদায় কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়। এতে সেতুপূর্ব টোল প্লাজা পর্যন্ত বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয়।

হাইওয়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখনো মহাসড়কের পাশে কোথাও কোথাও বাজার বসছে। এতে ওই সব এলাকায় যানবাহনের গতি কমে যাচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও চালকের বেপরোয়া গতির জন্য সমস্যা হচ্ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/843115