১৩ জুন ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:৪৬

সেন্টমার্টিনে ফুরিয়ে আসছে খাদ্য

মিয়ানমারের গোলাগুলিতে ৭ দিন যোগাযোগ বন্ধ

মিয়ানমার থেকে গুলি ছোড়ার কারণে সাত দিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সেন্টমার্টিনের ১০ হাজারের বেশি বাসিন্দা চরম খাদ্য সঙ্কটে পড়েছেন। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে বন্ধ রয়েছে সার্ভিস ট্রলারসহ নৌযান চলাচল। যার কারণে কোনোভাবেই টেকনাফ থেকে পাঠানো যাচ্ছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য। একই সাথে অসুস্থ অনেক রোগীকে সেন্টমার্টিন থেকে পাঠানো যাচ্ছে না টেকনাফে। তবে খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে বিকল্পপথে যাত্রী এবং খাদ্যপণ্য পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

স্বানীয়রা জানান, বিচ্ছিন্ন দ্বীপে এখন বন্দী হয়ে আছেন ১০ হাজারের বেশি বাসিন্দা। মিয়ানমারের একের পর এক গুলিবর্ষণ ঘটনায় যেতে পারছেন না কোথাও। দ্বীপের পাড়ে নোঙর করা রয়েছে ট্রলার ও স্পিড বোট। অনেকটা মাঝ সাগরে দ্বীপে বন্দিদশায় দিন পার করছেন বাসিন্দারা।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম জানান, নাফ নদী যেখানে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে, সেই নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে অবস্থানরত সশস্ত্র দলটি মঙ্গলবার সকালে পাঁচজন যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপের দিকে যাওয়া স্পিডবোটে ১০-১২ রাউন্ড গুলি ছুড়েছে। চালক অবস্থা বুঝে স্পিডবোট দ্রুত চালিয়ে পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের দিকে চলে যান। এতে কেউ হতাহত হয়নি। বোটটি দুপুর ১২টার দিকে দ্বীপে পৌঁছে।

ট্রলার বা স্পিডবোটের মাধ্যমে ওই রুটে যাত্রী বা পণ্য পরিবহনের চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ৫ জুন সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার সময় নির্বাচনী সরঞ্জাম ও কর্মকর্তাদের বহনকারী একটি নৌযানে গুলিবর্ষণ করা হয় মিয়ানমার থেকে। এতে ট্রলারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ হতাহত হননি। এরপর ৮ জুনও আরেকটি পণ্যবাহী ট্রলারে আবারো গুলি চালানো হয়। এতে কেউ হতাহত না হলেও ট্রলারটিতে গুলি লাগে সাতটি।

স্পিডবোট অনেক দূর থেকে চলাচল করলেও কেন বাংলাদেশের জলসীমায় এসে তারা গুলি করছে তা বোঝা যাচ্ছে না। গেল ৭ দিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে নৌযান চলাচল বন্ধ। তাই দ্বীপে শেষ হয়ে আসছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য। আর যা খাদ্যপণ্য আছে তা দিয়ে কতদিন যাবে সেটি নিয়েও রয়েছেন চরম শঙ্কায়। এরইমধ্যে দ্বীপের অনেকেই অর্ধাহারে দিনযাপন করছেন। বন্ধ রয়েছে দ্বীপের দোকানপাট।

দ্বীপের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, সামনে কোরবানির ঈদ। কিন্তু দ্বীপের বাসিন্দাদের ঘরে এখনো কিছুই কেনা হয়নি। বরং ঘরে যা ছিল চাল থেকে শুরু করে তেল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য সবকিছুই শেষ হয়ে আসছে। এখন কি করব বুঝে উঠতে পারছি না। আরেক বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, প্রশাসনের কাছে আমরা দাবি করছি, দ্রুত আমাদের যাতে টেকনাফ কিংবা কক্সবাজারে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। কিন্তু যদি যাতায়াতের ব্যবস্থা করা না হয় তাহলে আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে দ্বীপের বাসিন্দাদের অবস্থা খুবই খারাপ হবে।

দ্বীপের অনেক বাসিন্দা অসুস্থ। কিন্তু চিকিৎসার জন্য যেতে পারছেন না টেকনাফে। এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে ওষুধ সঙ্কটও।
দ্বীপের বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ বলেন, দ্বীপের অনেক বাসিন্দা অসুস্থ। এ ছাড়াও প্রতিদিনই অনেক ওষুধ দরকার হয়। কিন্তু এখন ওষুধ আনা যাচ্ছে না টেকনাফ থেকে। কারণ নৌরুটে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করলেই সাগরের মাঝপথে মিয়ানমার থেকে গুলি ছোড়া হচ্ছে। এখন দ্বীপে ওষুধেরও সঙ্কট হচ্ছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, সেন্টমার্টিন-টেকনাফ যাত্রী ও পণ্যবাহী সব নৌযান চলাচল বন্ধ থাকার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতির সমাধান না হলে দ্বীপবাসীর অবস্থা খুব সঙ্কটাপন্ন হবে উল্লেখ করে বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে নৌবাহিনী বা কোস্টগার্ডের জাহাজযোগে খাদ্যপণ্য পরিবহনের দাবি জানান তিনি। আর প্রশাসন বলছে, দ্বীপের বাসিন্দাদের কোন কিছুই সঙ্কট হবে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে দ্বীপের বাসিন্দাদের যাতায়াত এবং খাদ্যসামগ্রী পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: ইয়ামিন হোসেন বলেন, সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি চালানোর কারণে সাত দিন ধরে এ নৌপথে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বঙ্গোপসাগর হয়ে শাহপরীর দ্বীপ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়ার বিকল্প পথ নিয়ে গত রোববার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা করা হয়েছিল।

বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ মহলকে অবহিত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এখন সেন্টমার্টিনে পণ্য পাঠানোর জন্য বঙ্গোপসাগরই ভরসা। আশা করি, কক্সবাজার দিয়ে দ্বীপের বাসিন্দাদের জন্য পণ্য পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। একই সাথে দ্রুত সময়ের মধ্যে দ্বীপের বাসিন্দাদের যাতায়াত এবং খাদ্যসামগ্রী পাঠানো ব্যবস্থা করা হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/842405