১০ জুন ২০২৪, সোমবার, ১২:৫৩

রাস্তার পাশের ৬ খাদ্যে ডায়রিয়ার জীবাণু

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তার পাশে বিক্রি করা চটপটি, ছোলা-মুড়ি, স্যান্ডউইচ, আখের রস, অ্যালোভেরা শরবত ও সালাদে ডায়রিয়ার জীবাণু পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) করা এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল রবিবার রাজধানীর শাহবাগে বিএফএসএর প্রধান কার্যালয়ে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। গবেষণাটি পরিচালনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড নিউট্রিশন অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার রিসার্চ ল্যাবরেটরির প্রধান ড. মো. লতিফুল বারি ও তাঁর দল।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৭টি জোন থেকে এসব খাবারের ৪৫০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে ড. বারি জানান, এই ছয়টি স্ট্রিট ফুডে মিলেছে মাত্রাতিরিক্ত ই-কোলাই (মানুষের মলে থাকে), সালমোনেলা এসপিপি ও ভিব্রিও এসপিপি ব্যাকটেরিয়া, যা কলেরা, ডায়রিয়াসহ মানুষের পেটের বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে। গড়ে প্রতি প্লেট চটপটিতে সাত কোটি ২০ লাখ ই-কোলাই, সাড়ে ৭০০ সালমোনেলা ও সাড়ে ৭০০ ভিব্রিও ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। ছোলা-মুড়িতে ই-কোলাই পাওয়া গেছে সাত লাখ ৪০ হাজার, সালমোনেলা দুই হাজার ও ভিব্রিও ৩০ লাখ।

স্যান্ডউইচে ই-কোলাই পাওয়া গেছে দুই হাজার, সালমোনেলা দুই হাজার ও ভিব্রিও এক কোটি ৬০ হাজার। আখের রসে ই-কোলাই পাওয়া গেছে ৬৫ হাজার, সালমোনেলা ১৭ হাজার ও ভিব্রিও ১৩ হাজার। অ্যালোভেরা শরবতে ই-কোলাই পাওয়া গেছে ৫৬ হাজার, সালমোনেলা ১৮ লাখ ও ভিব্রিও ১৪ হাজার। সালাদে ই-কোলাই পাওয়া গেছে এক হাজার ৮০০, সালমোনেলা ৫১০ ও ভিব্রিও ৩০০।

এসব স্ট্রিট ফুড খেয়ে প্রতি ১০ হাজার মানুষের মধ্যে দুজন ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার কারণে অসুস্থ হচ্ছে। একইভাবে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার কারণে চারজন ও ভিব্রিও ব্যাকটেরিয়ার কারণে একজন অসুস্থ হচ্ছে।

গবেষণাদলের প্রধান ড. বারি বলেন, দূষিত পানি, নোংরা গামছা, অপরিষ্কার হাত, ধুলাবালিময় পরিবেশের কারণে এই ধরনের জীবাণু খাবারে মিশে যাচ্ছে। বিক্রেতাদের স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সম্পর্কে জ্ঞান-ধারণা কম থাকায় খাবার ও জুসে জীবাণু ঢুকে যাচ্ছে। সড়কের বিভিন্ন খাবার খেয়ে মানুষ এসব জীবাণুতে সংক্রমিত হচ্ছে।

এ জন্য স্ট্রিট ফুড নিরাপদ করতে বিক্রেতাদের প্রশিক্ষণ ও প্রতিদিন মনিটর করা প্রয়োজন।
সেমিনারের প্রধান অতিথি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমরা যে কাঁঠাল খাই, সেটা মনে করি প্রাকৃতিকভাবে পাকা। কিন্তু এটার বোঁটায় রাসায়নিক দিয়ে পাকানো হয়, তরমুজের ভেতরেও নাকি কেমিক্যাল-রং মিশিয়ে লাল করা হয়, আনারসের মতো ফলেও নাকি কেমিক্যাল দেয়। মিসরের পিরামিডের মতো, বাজার থেকে একটা আপেল কিনে বাসায় রেখে দেন মমির মতো, তিন মাসেও এটা নষ্ট হবে না। আমরা এ রকম একটা জাতি দিয়ে স্বপ্নের সোনার বাংলা বা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হয়তো অন্যান্য ক্ষেত্রে পারব, কিন্তু খাদ্যের বিষয়ে পারব না। এখানে যদি আমরা সঠিকভাবে দৃষ্টি দিতে না পারি তাহলে আমরা পঙ্গু জাতিতে পরিণত হব।’

একই সেমিনারে ফল নিয়ে আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল হাসান এম সোলায়মান।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া, সদস্য ডা. মোহাম্মদ মোস্তফা প্রমুখ।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2024/06/10/1396252