১০ জুন ২০২৪, সোমবার, ১২:৫০

লোকসানের মুখে অস্তিত্ব সঙ্কটে সিএনজি ফিলিংস্টেশনগুলো

১০ বছর ধরে কমিশন বাড়েনি

দশ বছর ধরে কমিশন বাড়েনি। অথচ এ সময়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে কয়েক দফা। এতে বেড়েছে সিএনজি উৎপাদন ব্যয়। আগে যেখানে প্রতি ঘনমিটার সিএনজি উৎপাদনে ব্যয় হতো ৩ টাকা ৪৫ পয়সা। এখন তা বেড়ে হয়েছে পাঁচ টাকা ৪ পয়সা। পাশাপাশি ১০ বছরে প্রতি ডলারের দাম ৭৫ টাকা থেকে বেড়ে ১২৫ টাকায় উঠেছে। বেড়ে গেছে সিএনজি স্টেশনগুলোর মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যয়। একই সাথে ১০ বছরে পাঁচ দফা কর্মচারীদের বেতনভাতা বাড়ানো হয়েছে। বেড়েছে ব্যাংকের সুদ, মূল্যস্ফীতি। এভাবে সিএনএজি স্টেশনের মালিকরা লাভের পরিবর্তে লোকসান গুনছে। লোকসানের ধকল সামলাতে না পেরে ইতোমধ্যে ৬৬টি স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনে অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ে যাবে সিএনজি ফিলিংস্টেশনগুলো।

গতকাল রোববার সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিংস্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে সামগ্রিক বিষয় তুলে ধরেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফারহান নূর। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনোরঞ্জন ভক্ত ও সহসভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন।

মহাসচিব ফারহান নূর একটি সিএনজি ফিলিংস্টেশনের তথ্য তুলে ধরে বলেন, মার্চ ২০১৫ সালে ৯৬ হাজার ৯৩ ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি করে, ওই প্রতিষ্ঠান ২০২৪ সালে মাত্র ৬৬ হাজার ৭১৮ ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি করেছে। ২০১৪ সালে ইউনিট প্রতি বিদ্যুৎ বিল ছিল ৩.৪৫ টাকা, আর ২০২৪ সালে ইউনিট প্রতি বিদ্যুৎ বিল এসেছে ৫ টাকা ৪ পয়সা। আমরা বিদ্যুতের বর্ধিত বিল সমন্বয় করার দাবি করছি। বিদ্যুতের দাম আরো বাড়ানো হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমন্বয়ের বিধান করার প্রস্তাব করেছি। তিনি বলেন, ওই স্টেশনে ২০১৪ সালে ৩০ টাকা বিক্রি করে ৩.৫৪ টাকা থাকত, এখন ৪৩ টাকা বিক্রি করে ২.৬৮ টাকা থাকছে। এই টাকা দিয়ে অপরেশনাল খরচ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে অনেক স্টেশন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

ফারহান নূর বলেন, সারা দেশে ৫২৫টি ফিলিংস্টেশন চালু রয়েছে। অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে, কিছু বন্ধের পথে রয়েছে। আমাদের দাবিগুলো নিয়ে ২০১৩ সাল থেকে দেন দরবার চলছে। ২০১৩ সালে মন্ত্রণালয় বিইআরসিকে চিঠি দেয়া হয় বিবেচনা করার জন্য। দ্বিতীয় দফায় ২০১৭ সালের জুনে পর্যালোচনার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে বিইআরসিকে চিঠি দেয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। আশা করছিলাম, সমাধান পাবো, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। তিনি আরো বলেন, বর্তমান অবস্থায় ফিলিংস্টেশন চালিয়ে নেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। জরুরি পণ্য হওয়ায় ধর্মঘট কিংবা আলটিমেটামে যাচ্ছি না। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কাছে আবেদন করেছি, মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি।

ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২০১৫ সালের পর থেকে গত দশ বছর তাদের কমিশন বাড়েনি। একই অবস্থায় রয়েছে। অথচ এ সময়ে তাদের ব্যয় বেড়েছে কয়েক গুণ। কয়েক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে সিএনজি উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। দশ বছর আগে প্রতি ডলার পাওয়া যেত ৭৫ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১২৫ টাকা। যদিও অফিসিয়াল রেট ১১৭ টাকা। এতে সিএনজি স্টেশনগুলোর মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। অথচ তাদের মুনাফা তাদের কমিশন বাড়েনি। এতে তারা অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জীবন পরিচালনার জন্য অতি প্রয়োজনীয় ব্যয়ও সমন্বয় করছে। যার আগে গাড়িচালক ছিল এখন গাড়িচালককে বাদ দিয়ে নিজেই গাড়ি চালাচ্ছেন। অনেকেই গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন। এমনই অবস্থায় পৌঁছেছে তাদের জীবনযাপন। অথচ বিষয়টি পরিবারকেও জানানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, অস্তিত্ব রক্ষার্থেই তাদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টি দেয়ার দাবি জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/841677