৯ জুন ২০২৪, রবিবার, ৪:১৫

৩ সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলন

পোশাক শিল্পের জন্য বাজেট হতাশাব্যঞ্জক

পোশাক শিল্পের জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট হতাশাব্যঞ্জক বলে মন্তব্য করেছে তৈরী পোশাক, নিট ও বস্ত্র মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ। কালো টাকা সাদা করার কোনো দাবি ব্যবসায়ীদের ছিল না জানিয়ে টেক্সটাইল খাতে করপোরেট ট্যাক্স হার ২০৩০ সাল পর্যন্ত বহালের দাবি জানিয়েছে। গতকাল শনিবার ঢাকার উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করে তারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন তৈরী পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি এস এম মান্নান কচি। তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল বাজেটে পোশাক শিল্পের জন্য কিছু নীতি সহায়তা থাকবে। বিশেষ করে উৎসে কর ০ .৫ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং এটিকে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করার বিষয়ে আমাদের গভীর প্রত্যাশা ছিল এবং আছে। পাশাপাশি আরো প্রত্যাশা ছিল- বাজেটে ইনসেনটিভের ওপর আয়কর অব্যাহতি, শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ভ্যাটমুক্ত রাখা, এইচএস কোড ও ওজনসংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা, ইআরকিউয়ের ওপর আয়কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, অগ্নি ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম পুনঃস্থাপনের ক্ষেত্রে আমদানির ওপর কর রেয়াত, পোশাক শিল্পের ঝুটের ওপর ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট ও রিসাইকেল ফাইবার সরবরাহের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার ইত্যাদির ঘোষণা আসবে, যা বাজেটে উঠে আসেনি। এটি আমাদের জন্য হতাশাব্যঞ্জক।

তিনি আরো বলেন, মূল্যস্ফীতিকে একাধিকবার অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসায় আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের এই প্রধান খাতটির জন্য কিছু নীতি সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হলেও বর্তমান কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আমাদের মূল প্রস্তাবগুলো প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আপনারা জানেন যে কোভিড মহামারী কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ভূরাজনৈতিক কারণে সৃষ্ট বিশ্বমন্দা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং তা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন দেশে সুদের হার বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে এসেছে। একই সাথে পণ্যের দরপতন হয়েছে এবং স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন ব্যয় পাঁচ বছরে দফায় দফায় প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শিল্প একটি সঙ্কটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে আমাদের পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধি আশঙ্কাজনকভাবে কমে এসেছে। শুধু মে মাসেই কমেছে ১৭ শতাংশ। আমরা মজুরি ৫৬ শতাংশ বাড়িয়েছি, কিন্তু আমাদের মূল্য বাড়েনি। বরং গত ৯ মাসে আমাদের প্রধান পণ্যগুলোর দরপতন হয়েছে ৮ থেকে ১৮ শতাংশ। শিল্প যখন এরকম একটি সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে রয়েছে, তখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল বেশির ভাগ রফতানি আয় অর্জনকারী পোশাক শিল্পকে সহায়তা দেয়া এবং এর মাধ্যমে রিজার্ভ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা।

ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে এমন বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন ব্যবসায়ীদের তিন শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ। তারা বলেছেন, এমন কোনো দাবি কারো কাছে জানানো হয়নি। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে’ আপনাদের পক্ষ থেকে এলেই এমন কোনো দাবি ছিল কি না? জানতে চাইলে ওই তিন ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতিই বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং বলেন, ‘আমাদের এ-সংক্রান্ত কোনো দাবি ছিল না।’

ব্যাংক থেকে সরকার লোন নিলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না? জানতে চাইলে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ব্যাংক যখন সরকারকে লোন দেয়ার সুযোগ পাবে তখন আমাদের দিতে চাইবে না। এটিই স্বাভাবিক। এতে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। আপনারা দেখেছেন, বিগত বছরগুলোতে এমনিতেই বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে।

বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান বলেন, শুল্ক ০ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ নির্ধারণ নতুন বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক বা শিল্পাঞ্চলের বাইরে বিনিয়োগ করার জন্য আরো পাঁচ বছর যেন সময় দেয়া হয় সেই দাবিও আমরা জানিয়েছি। এ সুযোগ যদি না দেয়া হয় তাহলে বিনিয়োগে বড় বাধা হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না এবং রফতানি আয়ও বাড়বে না।

টেক্সটাইল ও ক্লোদিং সেক্টরের জন্য বিদ্যমান করপোরেট ট্যাক্স হারকে আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত বহাল রাখার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।

তিনি বলেন, রফতানি আয়ের গুরুত্ব বিবেচনায় টেক্সটাইল এবং ক্লোদিং সেক্টরের জন্য রফতানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎস কর হার ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে আগের মতো ০ দশমিক ৫০ শতাংশে নির্ধারণ করতে হবে। এটি আগামী ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর রাখা প্রয়োজন। কারণ বর্তমানে টেক্সটাইল ও ক্লোদিং খাত ডলার সঙ্কট, জ্বালানি সরবরাহ কাক্সিক্ষত পর্যায়ে না থাকা, সুদের হার অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে অনেক সমস্যার সম্মুখীন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/841361