৪ জুন ২০২৪, মঙ্গলবার, ৬:৩২

পাবনায় খরা ও ঘূর্ণিঝড়ে ৭৫ শতাংশ লিচু ঝরে পড়ায় চাষিদের মাথায় হাত

পাবনায় চৈত্র মাসের মাঝামাঝিতে দুই দফায় বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি এবং গ্রীষ্মের শুরুতে প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে প্রায় ৫০ শতাংশ লিচুর মুকুল পচে ও ঝরে যায়। অপরদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে আরো ২৫ শতাংশ লিচু ঝরে পড়ে। ফলে এ বছর বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে ৭৫ শতাংশ লিচু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে বাজারে লিচুর আমদানি কম থাকায় এবং চাহিদা বেশী থাকায় অতিরিক্ত দামে লিচু কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। যার কারণে এবার বাগান মালিক ও ক্রেতা উভয়ের মাথায় হাত পড়েছে।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ৪ হাজার ৭২১ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঈশ্বরদী উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৮ হাজার ৮০১ মেট্রিক টন।
সরেজমিনে পাবনার বিভিন্ন লিচু বাগান ঘুরে জানা গেছে, ফাল্গুনের শুরুতে প্রতিটি লিচু গাছে যথেষ্ট পরিমাণ মুকুল এসেছিল। তখন মুকুল দেখে চাষিদের মুখে হাসি ফোটে। গাছে গাছে প্রচুর মুকুল দেখে ব্যাপারীরা আগাম বেশি দাম দিয়ে বাগান কিনে নেয়। পাবনায় চৈত্র মাসের মাঝামাঝিতে দুই দফায় বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি এবং গ্রীষ্মের শুরুতে প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে প্রায় ৫০ শতাংশ মুকুল পচে ও ঝরে যায়। অপরদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে আরো ২৫ শতাংশ লিচু ঝরে পড়েছে। ফলে এ বছর বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে ৭৫ শতাংশ লিচু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বেশি হতাশায় পড়েছে আগাম বাগান কিনে রাখা ব্যাপারীরা। তাদের বিনিয়োগের টাকা ফেরত তো দূরের কথা তাদের অর্ধেক টাকাও ফেরত পাচ্ছে না। ঈশ্বরদী উপজেলার লিচু চাষি মমিনুল বলেন, এ বছর তার বৃষ্টিতে লিচুর মুকুলের প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ গাছেই নষ্ট হয়ে গেছে। গ্রীষ্মের শুরুতে যখন মুকুল থেকে গুটিতে পরিণত হচ্ছিল, সে সময় মাত্রাতিরিক্ত খরার কারণে গুটির একটি বড় অংশ ঝরে পড়েছে। তার বাগানের প্রায় ৫০০ গাছের প্রতিটি গাছেই ৫০-৬০ শতাংশ মুকুল গুটিতে পরিণত হতে পারেনি। তার আগেই ঝরে গেছে। এরপর ঘূর্ণিঝর রেমন আঘাত হানায় তার বাগানের বাকি ৫০ শতাংশের ২৫ শতাংশ ঝরে পড়েছে। ফলে এবার লাভ তো দূরের কথা প্রচুর টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

ঈশ্বরদী উপজেলার ছিলিমপুর গ্রামের লিচু চাষি শামীম হোসেন বলেন, অতি খরায় আগে থেকেই অনেক গাছের লিচু শুকিয়ে কালচে বর্ণ ধারণ করায় লিচুর আশানুরূপ দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন। তার ওপর এক সপ্তাহ আগে থেকে লিচু পাড়া শুরু করেছি। ঝড়ের সময় অর্ধেকের বেশি লিচু গাছেই ছিল। ঝড়ের কবলে প্রতিটি গাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ লিচু ঝরে পড়েছে, তিনি আরো জানান, ঝরেপড়া লিচুর বেশির ভাগই ফেটে গেছে। ফলে বাজারে এসব লিচুর চাহিদা নেই। প্রায় ১০ মণ লিচু কুড়িয়ে মাত্র ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হয়েছে। এবার তার লাভ তো দূরের কথা। এখন উৎপাদন খরচও উঠছে না।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত কৃষক শাজাহান আলী বাদশা জানান, গত কয়েক বছর ধরেই ঈশ্বরদীতে বাম্পার লিচুর উৎপাদন হয়ে আসছে। তবে এ বছর লিচু চাষিরা প্রাকৃতিক বৈরীতার শিকার হয়ে লোকসানের মুখে পড়েছে। ৩৫ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রায় লিচুর উৎপাদন ব্যাহত হয়। এ বছর লিচুর উৎপাদনের সময়ে (গ্রীষ্মকাল) বেশির ভাগ দিন তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির ওপরে ছিল। ফলে বাগানের প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ লিচু কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উন্নয়ন কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, এ বছর পাবনায় ৪ হাজার ৭২১ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ করে প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন লিচুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বৈরি আবহাওয়ার কারণে লিচুর ফলনের কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হলেও বাগানে আশানুরূপ লিচুর উৎপাদন হয়েছিল। কিন্তু ঝড়ের কবলে পড়ে লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/840138